দূষণ ছড়াল দিলীপ জয়সোয়ালের ট্যাক্সি। আর জরিমানার নোটিস পেলেন শেখ মুস্তাক আলি নামের এক ট্যাক্সিমালিক। মুস্তাকের বক্তব্য, তাঁর ট্যাক্সির দূষণ পরীক্ষাই হয়নি। জট ছাড়াতে গিয়ে জানা গেল, একই নম্বরের দু’টি ট্যাক্সি ঘুরছে শহরে। সব জানার পরেও ওই জাল নম্বরের ট্যাক্সিটি ধরতে কলকাতা পুলিশের সময় লাগল পাক্কা এক বছর।
পুলিশের ব্যাখ্যা, একই নম্বরের দু’টি গাড়ি শহরে চললে কোনটি আসল আর কোনটি জাল, তা স্বয়ংক্রিয় ভাবে নথিভুক্ত করার ব্যবস্থা এখনও তাদের কাছে নেই। তাই এমন অভিযোগ জমা পড়লে তদন্তে সময় লাগে। অভিযোগ জমা না পড়লে জাল গাড়ির কথা জানাও সম্ভব নয়। ডিসি (ট্রাফিক) দিলীপ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “এমন অভিযোগ জমা পড়লেই নম্বরটি সংশ্লিষ্ট সব ক’টি জায়গায় দেওয়া হয়। শুরু হয় ‘লুক আউট’। ওই নম্বরের গাড়ি কোথাও কোনও দুর্ঘটনায় পড়লেই জানা যায়।” ট্রাফিক বিভাগ সূত্রে খবর, এই জাল ট্যাক্সিটি তেমন দুর্ঘটনায় না পড়ায় হদিস পেতে সময় লেগেছে। এর আগেও ট্রাফিক বিভাগে এমন একটি জাল ট্যাক্সির অভিযোগ জমা পড়েছিল। সেটি ধরাও হয় আমহার্স্ট স্ট্রিট এলাকা থেকে। তবে জাল গাড়ির অভিযোগ সচরাচর জমা পড়ে না।
ট্রাফিক পুলিশ সূত্রে খবর, ২০১০-এর ২৬ অগস্ট মোটর ভেহিকলস্ বিভাগ-এর নোটিস পান মুস্তাক। তাতে বলা হয়, ওই বছর ২৯ জুন টালা ব্রিজের কাছে ‘দূষণ পরীক্ষা’ হয় ‘ওয়েস্ট বেঙ্গল ১৯সি ৩৬২৪’ নম্বরের একটি ট্যাক্সির। পরীক্ষায় তাঁর ট্যাক্সির ধোঁয়া দূষণের মাত্রা ছাড়িয়েছে। ওই নম্বরের ট্যাক্সির মালিক মুস্তাক বলে নোটিস যায়। ১৫ দিনের মধ্যে জবাব না-দিলে জরিমানা দিতে হবে বলেও উল্লেখ ছিল নোটিসে।
|
এই ট্যাক্সি দু’টি নিয়েই বিপত্তি। |
ওই চিঠি পেয়ে আকাশ থেকে পড়েন মুস্তাক। টালার কাছে কখনও তাঁর ট্যাক্সির দূষণ পরীক্ষা হয়নি। ট্রাফিক পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করেন তিনি। জানা যায়, মুস্তাক যে ট্যাক্সির মালিক, সে নম্বর লাগানো আরও একটি ট্যাক্সি ঘুরছে শহরে। দূষণ ছড়াচ্ছে সেটিই। ঘটনার ঠিক এক বছর পরে, ২৬ অগস্ট শুক্রবার রাতে ট্রাফিকের ‘স্পেশ্যাল রেড সেকশন’-এর হাতে কাশীপুর থানা এলাকা থেকে ধরা পড়ে ওই জাল নম্বরের ট্যাক্সিটি। গ্রেফতার হন ওই ট্যাক্সির মালিক এবং চালক।
ট্রাফিক পুলিশ জানায়, নোটিসে যে ট্যাক্সির উল্লেখ ছিল, তার নম্বরপ্লেটে লেখা ছিল ‘ওয়েস্ট বেঙ্গল’। অথচ মুস্তাক যে ট্যাক্সির মালিক, সেটির নম্বরপ্লেটে লেখা আছে শুধু ‘ডব্লিউ বি’। এতেই স্পষ্ট হয়, একই নম্বরপ্লেট লাগানো অন্য একটি ট্যাক্সির দূষণ পরীক্ষা হয়েছিল টালা ব্রিজের কাছে।
পুলিশ জানায়, ২৬ তারিখ রাতে কাশীপুরের কৃষ্ণনাথ দত্ত রোডে জাল নম্বরের ট্যাক্সিটিকে দেখেন ‘স্পেশ্যাল রেড সেকশন’-এর ওসি জিতেন্দ্রনাথ বারিক। পুলিশ ওই ট্যাক্সির যাত্রীদের অন্য ট্যাক্সিতে তুলে জাল নম্বরের ট্যাক্সিটিকে আটক করে। চালক মহম্মদ তাহিরকে জেরা করে জানা যায়, ট্যাক্সি-মালিকের নাম দিলীপ জয়সোয়াল। দিলীপের ট্যাক্সি দুর্ঘটনায় পড়েছে বলে ‘টোপ’ দিয়ে তাঁকে আসতে বলা হয়। ইতিমধ্যে তাঁর বিভাগের সাব-ইনস্পেক্টর সুদীপকুমার বেরাকেও ডেকে পাঠান ওসি। দিলীপ পৌঁছলে তাঁকে গ্রেফতার করা হয়।
পুলিশের দাবি, জেরায় দিলীপ জানান, মাস ছয়েক আগে মল্লিকবাজারে তাঁর সঙ্গে পরিচয় হয় মতরু নামের এক জনের। মতরু-ই তাঁকে ৪০ হাজার টাকার বিনিময়ে ওই জাল নম্বরের ট্যাক্সিটি জোগাড় করে দেন। তার আগে ওই ট্যাক্সিটি কার হাতে ছিল, তা দিলীপ জানেন না বলে পুলিশকে জানিয়েছেন। |