ইতিহাসের পাতা থেকে সাজের রাজ্যে
আঁধার র্যাম্পের ঠিক মাঝখানে এসে পড়েছে স্পটলাইট। সেই আলোকবৃত্তে কত্থকের দুর্বার ছন্দে গোটা প্রেক্ষাগৃহ মাতিয়ে দিচ্ছে এক কন্যে। তার ক্ষিপ্র ভঙ্গিমা, কালো ঘাঘরার ঘুর্ণি, ঘুঙুরের তালের ঘোর কাটতে না কাটতেই পর্দায় পিটার ব্রুকের ‘মহাভারত’। তাজ বেঙ্গলের বলরুমে মুগ্ধ চোখ অপলক তাকিয়ে দেখে মহাভারত ও কত্থকের মিশেলের জাদু। আর তারই ফাঁকে কখন যেন শুরু হয়ে যায় ‘পিলি কোঠি’। বেনারসির জৌলুস ফিরে দেখার এক কাহিনি। যার পরতে পরতে খুঁজে নেওয়া যুগ যুগ ধরে এ দেশের কোনায় কোনায় ছড়িয়ে থাকা সাজের ঐশ্বর্য।
ডিজাইনার সব্যসাচী মুখোপাধ্যায়ের একক ফ্যাশন শো ঘিরে বৃহস্পতিবার রাতে বরাবরের মতোই উত্তেজনা ছিল তুঙ্গে। একুশ শতকের আধুনিকতায় দাঁড়িয়ে ব্রিটিশ আমলের অবিভক্ত ভারতের সাজসজ্জার ঐতিহ্যে যার যাত্রা। পোশাক-বিধি মেনে সাদা রঙা পোশাকে সজ্জিত অতিথিদের ভিড়ে ঠাসা প্রেক্ষাগৃহে তাই আরও ঝলমলে হয়ে উঠল র্যাম্পের লাল-কালো-সবুজ-নীল শাড়ি-কুর্তা-শেরওয়ানি। সব্যসাচীর এই ‘ফল-উইন্টার’ কালেকশন অবশ্য আগেই দেখেছে মুম্বই। দেখল কলকাতাও। তবে এ বারের জৌলুসে নিখাদ মিশল খোদ স্রষ্টার শিকড়ে ফেরার আবেগও।
শো-এর শেষে র্যাম্পে ডিজাইনার সব্যসাচী মুখোপাধ্যায়। ছবি: রাসবিহারী দাস
আদি অকৃত্রিম বেনারসির চোখধাঁধানো জৌলুস থেকে আগ্রার জারদৌসি, লাল-কালো-তুঁতে রঙে রাঙানো খাদি থেকে জরিপাড় ভেলভেট, হাতে বোনা জমকালো রেশমের কাজ একের পর এক শাড়ি-ব্লাউজ, লহেঙ্গা-চোলি, কুর্তা-সালোয়ার-চুড়িদারের যুগলবন্দিতে মুগ্ধ প্রেক্ষাগৃহ। নবাবি আমলের রাজকীয় শেরওয়ানি-চুড়িদার, পাগড়ির পুরুষ থেকে খাদি কুর্তার স্বাধীনতা সংগ্রামী, কিংবা কাশ্মীরি কোট, শাড়ি-গয়নায় ঝলমলে পরিবার। রাজস্থানি টিকলি, কাশ্মীরি ঝুমকো, লখনউয়ের খাঁটি নবাবি জমকালো হার-দুল-চুড়ি, নাগরা-উত্তরীয়ে উত্তর-পশ্চিম ভারতের রংচঙে সাজ থেকে ঠাকুরবাড়ির ঘরানায় পরা জরিপাড় শাড়ি-ফুলহাতা ব্লাউজের খাঁটি বাঙালিয়ানায় ছুঁতে চাওয়া পুজোর দিনগুলোর উচ্ছলতা সবকিছুতেই হাততালির বন্যায় ভাসল গোটা ঘর। ২০ মিনিটের শো-এর শেষে যখন ফের মঞ্চে এল মডেলদের গোটা দলটা, আঁধার র্যাম্প নিমেষে ইতিহাসের পাতা থেকে উঠে আসা এক টুকরো ভারতবর্ষ। মিতুল সেনগুপ্তের অনবদ্য নৃত্যে শুরু হওয়া যে শো-এ উপস্থিত ছিলেন রাজ্যপাল এম কে নারায়ণন।
আর পাঁচটা ফ্যাশন শো-এর মতো দ্রুতগতির আসা-যাওয়া নয়। সব্যসাচীর মডেলরা আসছিলেন ধীর পায়ে। ফেরাটাও ততটাই শ্লথ। যাতে আরও বেশি করে উপভোগ করা যায় প্রতিটি মুহূর্ত, আঁতিপাঁতি খুঁজে নেওয়া যায় এ দেশের পরতে পরতে লুকিয়ে থাকা সাজের ঐশ্বর্য। আর সব্যসাচীর নিজের কথায়, “ব্রিটিশ আমলে শান্ত, ধীরগতির জীবন যাপনের দিনগুলোর সঙ্গে তাল মেলাতেই এই ধীর পায়ের র্যাম্প-ওয়াক।”
অলসগমনারা তাই আরও মুগ্ধতা ছড়ায়। ২০ মিনিট পেরিয়ে আরও বহুক্ষণ।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.