‘আপনি কে? আমাদের বাড়িতে ঢুকেছেন কোন আক্কেলে?’
মাঝবয়সী মহিলার ধমকানিতে বাড়ি-মালিকের প্রায় আক্কেল গুড়ুম! বললেন, “আমার বাড়িতে আমি ঢুকব না তো কে ঢুকবে? আপনারা কে? কেন ঢুকেছেন আমার বাড়িতে?’ ‘বাড়ি আমার শ্বশুরমশাইয়ের। দেওয়ালে ছবি ঝুলছে। দেখতে পাচ্ছেন না?’ মহিলার মেজাজ আরও তিরিক্ষি। ‘যাঁর ছবি ঝুলছে, উনি আমার বাবা। উনি আপনার শ্বশুরমশাই হন কী করে?’
বাড়ি-মালিকের দাবি শুনেই তারস্বরে নিজের অধিকার প্রতিষ্ঠা করার জন্য সঙ্গিনী তরুণীকে নিয়ে রে রে করে উঠল মাঝবয়সিনী। আর বেগতিক দেখে সেই তুমুল হট্টগোলের মধ্যে সটকান দিল তাদের সঙ্গী যুবক।
বাগযুদ্ধ অবশ্য বেশি ক্ষণ চলল না। প্রতিবেশীদের সঙ্গে নিয়ে নিজের অধিকার অচিরেই সাব্যস্ত করলেন বাড়ির মালিক। আর সপ্তমে গলাবাজি করেও চোখে ধুলো দিতে পারল না ওই মহিলা এবং তার সঙ্গিনী। পুলিশ তাদের গ্রেফতার করেছে।
ঘটনাস্থল: সল্টলেকের সি-জি ব্লক।
সময়: রবিবার দুপুর।
ছুটির দিনে বাড়ি-মালিকের অনুপস্থিতিতে বাইরের গেটে তালা লাগিয়ে চুরি করছিল তিন জনের দলটি। কিন্তু শেষরক্ষা হল না। বাড়ির মালিক ফিরে আসতেই ধরা পড়ে গেল দু’জন। পুলিশ জানায়, বিপ্লব ভাওয়াল নামে সল্টলেকের সি-জি ব্লকের ওই বাসিন্দার চারতলা বাড়িতে চুরির চেষ্টার অভিযোগে গ্রেফতার হয়েছে সীমা মুখোপাধ্যায় ও রিঙ্কি মুখোপাধ্যায় নামে দুই মহিলা। তাদের সঙ্গী যুবকটি ভাগলবা।
|
ধৃত রিঙ্কি মুখোপাধ্যায় ও সীমা মুখোপাধ্যায়। ছবি: অর্কপ্রভ ঘোষ |
ঠিক কী ঘটেছিল?
পুলিশি সূত্রের খবর, বাড়ির মালিক বিপ্লববাবুর প্রকাশনার ব্যবসা আছে। তিনি এ দিন দুপুরে মেয়েকে নিয়ে বাড়ি থেকে বেরিয়েছিলেন। ফিরে এসে দেখেন, তিনি যে-তালা লাগিয়ে বেরিয়েছিলেন, সেটি দরজায় লাগানো নেই। সেখানে অন্য তালা ঝুলছে। তিনি জানলা দিয়ে উঁকি মেরে দেখেন, বাড়ির একতলায় তিন জন ঘোরাঘুরি করছে। ঘরে আলো জ্বলছে। তিনি চিৎকার করে প্রতিবেশীদের ডাকেন।
পরে বিপ্লববাবু বলেন, “মাত্র কয়েক ঘণ্টার জন্য বাড়ি থেকে বেরিয়েছিলাম। ফিরে এসে দেখি এই কাণ্ড। বাড়ির গেটে অন্য তালা লাগানো দেখেই আমার সন্দেহ হয়।” বিপ্লববাবুই চিৎকার করে লোক ডাকেন। পড়শিরা তাঁর সঙ্গে ঘরে ঢুকতেই ওই মহিলা এবং তরুণী বিপ্লববাবুকে হুমকি দিতে থাকেন বলে অভিযোগ। বিপ্লববাবুর অভিযোগ, “মাঝবয়সী মহিলা ঘরে আমার বাবার ছবি দেখিয়ে দাবি করতে থাকে, সেটি তার শ্বশুরমশাইয়ের ছবি। এ বাড়ি তাদের বলেও দাবি করছিল ওই মহিলা। বাড়িতে ঢুকেছি বলে উল্টে ধমকাচ্ছিল আমাকেই।” তিনি জানান, টহলদার পুলিশ কাছাকাছি ছিল। তাঁর চিৎকার শুনে তারা দ্রুত এসে দুই মহিলাকে গ্রেফতার করে।
বাড়ি তাদের, শেষ পর্যন্ত কোনও ভাবেই সেটা প্রমাণ করতে পারেনি ওই মহিলা এবং তার সঙ্গিনী। ইতিমধ্যে বিধাননগর থানার পুলিশ চলে আসে। তাদের হাতে ধরা পড়ে যায় দু’জনেই। পুলিশ জানায়, ওই দু’জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ধৃতদের কাছে তালা ভাঙার যন্ত্রও পেয়েছে পুলিশ। পলাতক যুবকের খোঁজ চলছে। বাড়ি-মালিকের হয়রানি সেখানেই শেষ হয়নি। ওই বাড়ি যে তাঁরই, সেটা প্রমাণ করতে দলিল-দস্তাবেজ নিয়ে থানায় হাজির হতে হয় বিপ্লববাবুকে।
|
সল্টলেকের সি-জি ব্লকের বাড়িটিতে রবিবার ঠিক কী হয়েছিল, রাতেই রাজারহাটের তৃণমূল বিধায়ক সব্যসাচী দত্তকে ফোন করে তা জানতে চান মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর নির্দেশ পেয়েই সব্যসাচীবাবু চলে যান ওই বাড়িতে। সেখান থেকে মমতাকে ফোন করেন তিনি। সেই ফোনেই মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেন বিপ্লববাবু। পরে বিপ্লববাবু বলেন, “আমি সুস্থ আছি কি না, প্রথমে সেটাই জানতে চান মুখ্যমন্ত্রী। কী ঘটেছিল, জানতে চান তা-ও। যে-কোনও প্রয়োজনে যোগাযোগ করতে বলেছেন উনি।” |