এক দিকে পুজো আসতে আর মাত্র একটা মাস, অন্য দিকে ঈদের কেনাকাটা। দুইয়ে মিলে রবিবার থেকেই জমে উঠল উৎসবের মরসুম।
বাসে চেপে ধর্মতলায় আসছিলেন কৌশিক দাস। মৌলালিতে পৌঁছে দেখলেন, এস এন ব্যানার্জি রোডে অসংখ্য গাড়ির সারি। আধ ঘণ্টা বাসের ভিতরে বসে থাকার পরে শেষ পর্যন্ত নেমে হাঁটতে শুরু করলেন তিনি। শুধু কৌশিকবাবুই নন, এ দিন একই অভিজ্ঞতা ওই যানজটে আটকে পড়া অনেকেরই।
এ দিন এস এন ব্যানার্জি রোডের ছবিটা অবশ্য কোনও বিক্ষিপ্ত ঘটনা নয়। ঈদের আগের শেষ রবিবার বাজার করার তাড়া, তার উপরে দুই রাজনৈতিক দলের ছাত্র সংগঠনের অনুষ্ঠান। তার সঙ্গে বিকেলে যোগ হল পুজোর বাজারের ভিড়। সব মিলিয়ে দুপুর থেকে রাত পর্যন্ত হোঁচট খেতে খেতে চলল মধ্য কলকাতা। সকাল থেকেই কেনাকাটার ভিড় জমতে শুরু করেছিল হাতিবাগান, নিউ মার্কেট-সহ বিভিন্ন বাজারে। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গেই তা জনজোয়ারের চেহারা নেয়। বিভিন্ন রাস্তায় লোকের ভিড় সামলাতে ব্যারিকেড দিয়ে দেয় পুলিশ।
দুপুর আড়াইটে। নিউ মার্কেটের রাস্তায় শুধুই সারি সারি কালো মাথা। দোকানে দোকানে উপচে পড়ছে ভিড়। ফুটপাথের দোকানে ভিড়ের ঠেলায় হাঁটা দায়। ক্রমশ ভিড় বাড়তে বাড়তে এস এন ব্যানার্জি রোড, লেনিন সরণি। নিউ মার্কেট ও আশপাশের বিভিন্ন শপিং মলগুলিও জনারণ্য। বিকেলের দিকে ক্রেতাদের লাইন মলের বাইরের ফুটপাথ পর্যন্ত পৌঁছে যায়। তবু ভিড়ে দাঁড়ানো মানুষের উৎসাহে ঘাটতি দেখা যায়নি এতটুকু। নিউ মার্কেট চত্বরে দুপুরে দুই শিশুর হাত ধরে দাঁড়িয়ে ছিলেন এক মহিলা। ঈদের বাজার করতে বেরিয়েছেন। কিন্তু লোকের ভিড়ে কূল পাচ্ছেন না। একই অবস্থা তালতলা থেকে আসা একটি পরিবারের। কী করবেন ভেবে পাচ্ছিলেন না পরিবারের কর্তা ফৈয়াজ আহমেদ। বললেন, “ভাবলাম, বিকেলের আগে ভিড় হবে না। কিন্তু ভরদুপুরে এসেও নাজেহাল অবস্থা।” অবশেষে বাচ্চাকে কোলে তুলে ঠেলেঠুলেই ঢুকে গেলেন একটি দোকানে। |
ঈদ আর পুজোর বাজার সারতে রাস্তায় মানুষের ঢল। রবিবার, নিউ মার্কেট চত্বরে। ছবি: দেশকল্যাণ চৌধুরী |
বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা। ভিড় বাড়ল আরও, ঈদের সঙ্গে ততক্ষণে পুজোর বাজারও জমে উঠেছে। বাজারে বাজারে ঠাসাঠাসি ভিড়ে পা ফেলাই দায়। শপিং মলগুলির বাইরে লাইন ফুটপাথের উপর দিয়ে বেশ কয়েক মিটার চলে গিয়েছে। লম্বা লাইনে দাঁড়ানো মানুষের মুখে বিরক্তির লেশমাত্র নেই। বরং, কতক্ষণে মলে ঢুকে উৎসবের বিশেষ ছাড়ের সুযোগ নেওয়া যাবে, তারই গুঞ্জন শোনা গিয়েছে সর্বত্র। ভিড়ে ঠাসা মলগুলির গেটের বাইরে ব্যাগ রাখার কাউন্টারে কর্মীদের অবস্থা ছিল দেখার মতো। মধ্য কলকাতার একটি মলে ব্যাগ রাখার জায়গা অকুলান। শেষমেশ মেঝেতেই ব্যাগ রেখে দিচ্ছিলেন কর্মীরা। নাজেহাল এক কর্মী জানালেন, এ তো সবে শুরু। পুজোর আগের দিন পর্যন্ত একই ছবি দেখা যাবে। শুধু পোশাকের দোকানগুলোই নয়, পাল্লা দিয়ে ব্যবসা করেছে খাবার বা ফলের রসের দোকানও। নিউ মার্কেট বা রবীন্দ্র সরণির খাবারের দোকানগুলিতেও ছিল লম্বা লাইন।
ভিড় সামলাতে এ দিন সকাল থেকেই নিউ মার্কেট চত্বরের দু’দিকে ব্যারিকেড দিয়ে দিয়েছিল পুলিশ। কোনও গাড়িকে নিউ মার্কেটের দিকে যেতে দেওয়া হয়নি। অন্যান্য দিনে ওই সব এলাকায় যে গাড়ির পার্কিং থাকে, তা-ও এ দিন তুলে দেওয়া হয়।
ভিড় উপচে পড়েছে হাতিবাগান, চিৎপুর, খিদিরপুরের বাজারগুলিতেও। বড়বাজার এলাকাতেও একই ভাবে ভিড় বেড়েছে। হাতিবাগান এলাকায় দোকানগুলির সামনে ভিড়ের দাপটে কখনও সখনও রাস্তায় আটকে পড়েছে যানবাহন।
ভিড়ের পাশাপাশি এ দিন পুলিশকে ভাবিয়েছে দুই ছাত্র পরিষদের অনুষ্ঠানও। নেতাজি ইন্ডোরে তৃণমূল ছাত্র পরিষদ ও মহাজাতি সদনে ছাত্র পরিষদের প্রতিষ্ঠা দিবস উপলক্ষে অনুষ্ঠানে যোগ দিতে সকাল থেকেই শহরে প্রচুর গাড়ি ঢুকেছিল। কলকাতা ট্রাফিক পুলিশ সূত্রের খবর, ছুটির দিনে এত গাড়ি ঢুকে পড়ায় উত্তর ও দক্ষিণ কলকাতায় যানজট হয়। আটকে পড়ে শিয়ালদহ ও হাওড়া থেকে শহরে ঢোকার রাস্তাগুলি। গাড়ি হোঁচট খেয়েছে চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউ, আচার্য জগদীশচন্দ্র বসু এবং আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রোডেও। |