...গন্ধ এসেছে
কোন শিল্পীর কোন পুজো,
বাজার গরম হচ্ছে তা নিয়েই

যেন কলকাতার মাঠে দল বদলের চেনা ছবি। শুধু ‘ময়দান’ আলাদা!
এক ক্লাবের সফল ফুটবলারকে যে ভাবে ভাঙিয়ে নিয়ে যায় অন্য ক্লাব এ বারের পুজোতেও রয়েছে সেই চেনা চিত্রটা। গড়ের মাঠের লড়াইটা এ বার পুজোর ময়দানে। শুধু খেলোয়াড়ের বদলে এখানে তারকা শিল্পী কিংবা ‘থিম মেকার’। যাঁর ঝুলিতে যত পুরস্কার, তাঁকে নিয়ে তত টানাটানি এবং দর কষাকষি।
কেউ আগে ছিলেন শুধু প্রতিমাশিল্পী। পুজোর ময়দানে ভাগ্য-পরীক্ষায় নেমে তাঁদেরই কেউ কেউ এখন একাধারে ‘থিম মেকার’, মণ্ডপশিল্পী এবং প্রতিমাশিল্পী। অন্য কারও সঙ্গে কৃতিত্ব ভাগ করতে রাজি নন কলকাতার প্রথম একাদশের শিল্পীরা। কেউ নিজের ছবি দিয়ে ব্যানার ছাপিয়েছেন। কেউ প্রচারে নিজেকে কিছুটা পিছিয়ে রাখলেও বিশাল অঙ্কের টাকা দাবি করেছেন ক্লাবের কাছে। এই প্রতিযোগিতার লড়াইয়ে চড়চড় করে বাড়ছে পুজোর বাজেট। আর এ বার তো বড় অঙ্কের বাজেটও ঠাঁই পেয়েছে পুজোর প্রচারের হোর্ডিংয়ে।
শিল্পী টানাটানির এই লড়াইয়ে সামিল উত্তর-দক্ষিণ-পূর্ব-পশ্চিমের বড় পুজোগুলি। যেমন, ভবতোষ সুতার এ বার দক্ষিণ কলকাতা ছেড়ে পাড়ি দিয়েছেন উত্তর-পূর্ব কলকাতায়। দমদম পার্ক যুবকবৃন্দ ও লেকটাউন অধিবাসীবৃন্দতে এ বার ভবতোষের হাতেই রূপ পেতে চলেছে পৌরাণিক বিশ্বের ধারণা এবং বোধিবৃক্ষ। তবে দক্ষিণকে একেবারে ত্যাগ করেননি বেহালার ওই শিল্পী। নাকতলা উদয়ন সঙ্ঘে কাঠ ও ধাতুর মেলবন্ধনে প্রতিমা তৈরি করছেন তিনি।
ভবতোষের আগেই কলকাতার পুজোয় শিল্পী হিসেবে প্রতিষ্ঠা পেয়েছেন অমর সরকার। কলকাতার বড় পুজোগুলির মধ্যে এক সময়ে রীতিমতো দড়ি টানাটানি হত তাঁকে নিয়ে। উত্তরের এক পুজো কমিটির কর্তার কথায়, “থিম পুজোয় বাজেট ঊর্ধ্বমুখী হওয়ার পিছনে অমর-ভবতোষের ভূমিকা কিন্তু অস্বীকার করা যাবে না।” অমর সরকার এ বার হিন্দুস্থান পার্ক সর্বজনীনে গড়ে তুলছেন ‘কাচের স্বগর্’। উত্তরের টালা বারোয়ারি এ বার অমরের হাতে বিজ্ঞাপনময় হয়ে উঠতে চলেছে। আর সল্টলেকের এজি ব্লকে তাঁর নিবেদন ‘মানুষ ও প্রকৃতি’।
প্রতিমাশিল্পীদের ব্যস্ততা এখন তুঙ্গে। রবিবার। ছবি: রাজীব বসু
গত বার অমর তাক লাগিয়ে দিয়েছিলেন নিউ আলিপুরের সুরুচি সঙ্ঘে। এ বার তাঁর জায়গায় রয়েছেন সুব্রত বন্দ্যোপাধ্যায়। সুরুচি সঙ্ঘের মাঠে তিনি নিয়ে আসবেন এক টুকরো কাশ্মীরকে। সঙ্গে আছেন রাজা সরকার। আর শিবমন্দিরে এ বার হ্যাটট্রিক সুব্রতের। সেখানে তাঁর শিল্পকলার মাধ্যম কাঠি। সুরুচি না শিবমন্দির কোনটা তাঁর প্রথম পছন্দের? শিল্পী এ নিয়ে বিতর্কে জড়াতে নারাজ। শিবমন্দিরে সুব্রত একা। সুরুচিতে সঙ্গে আরও অনেকে। পার্থক্য এটাই।
শিবমন্দিরে সুব্রতের হ্যাটট্রিকের মতোই পশ্চিম পুটিয়ারির পল্লি উন্নয়ন সমিতিতে এটা তৃতীয় বছর প্রশান্ত পালের। আর ২৫ পল্লি ও কবীর রোডের বেঙ্গল ইউনাইটেড ক্লাবে এ বার দ্বিতীয় বছর প্রশান্তের। আবার কসবার তালবাগানে উত্তর কলকাতার ওই শিল্পীর এ নিয়ে সাত বছর হবে। এ বছর সেখানে কুমোরপাড়ার পুজোকে তুলে আনছেন তিনি। দক্ষিণের চার পুজোর পাশাপাশি লেকটাউনের প্রদীপ সঙ্ঘে এ বার ফের নতুন শিল্প তুলে আনার লড়াইয়ে নেমেছেন প্রশান্ত।
প্রতি বছর ‘ঘর’ পাল্টে অন্য শিল্পীরা যখন বাজারে তাঁদের চাহিদা বাড়িয়ে নিচ্ছেন, তখন একই জায়গায় সাত বছর কী ভাবে কাটিয়ে দিলেন প্রশান্ত? শিল্পী বলেন, “অনেকের সঙ্গে সম্পর্ক ঠিক বাড়ির মতো হয়ে গিয়েছে। তাঁদের অনুরোধ ফেলা যায় না।”
সেই ‘সম্পর্কের’ খাতিরেই এ বারও নলিন সরকার স্ট্রিটে রয়ে গিয়েছেন সনাতন দিন্দা। উত্তর কলকাতার অন্য একটি পুজো বৈশাখেই হোর্ডিং দিয়ে জানিয়েছিল, সনাতন এ বার তাঁদের পুজো করছেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত পুরনো পাড়াতেই তিনি ফুটিয়ে তুলবেন ‘প্রকৃতি ও পুরুষের মিলন’কে।
২০০৯ সালটা ভাল যায়নি শিল্পী গোপাল পোদ্দারের। সেলিমপুর পল্লিতে গত বার ফের ভাগ্য খুলেছে উত্তরের ওই শিল্পীর। আর এ বছর তিনি আছেন বড়িশা ক্লাবে। উত্তরবঙ্গের আদিবাসী বাদ্যযন্ত্র ‘বানাম’কে নিয়েই এ বার দর্শক টানতে চান গোপাল।
কলকাতার পুজোয় প্রতিমাশিল্পী হিসেবেই আবির্ভাব বর্ধমানের পূর্ণেন্দু দে-র। শিবমন্দির, হরিদেবপুর হয়ে এ বার পূর্ণেন্দু হাজির কালীঘাটে। বাদামতলা আষাঢ় সঙ্ঘে পূর্ণেন্দুর এ বছরের থিম ‘মৃন্ময়ী রূপে চিন্ময়ী মা’। ‘মাটির মানুষ’ পূর্ণেন্দুর এ বারের শিল্পমাধ্যম মাটি।
যে শিল্পীর হাত ধরে বাদামতলা এখন ‘বড়’ পুজো, সেই রণো বন্দ্যোপাধ্যায়কে সল্টলেকের এফডি ব্লক থেকে এ বার দক্ষিণের চেতলায় নিয়ে এসেছে অগ্রণী। তাদের থিম ‘সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি’। রণোর পুরনো পুজো বেহালার নূতন দলে এ বার হবে ‘জমিদার বাড়ি’। পুরনো পুজোর আমেজ পাওয়া যাবে সেখানে।
শিল্পীদের মধ্যে আর এক ‘মাটির মানুষ’ দীপক ঘোষ এ বার ফের ফিরে এসেছেন যোধপুর পার্কে। রাজস্থানের দিলওয়ারা মন্দির গড়ে এই পুজোতেই প্রথম নজর কেড়েছিলেন দীপক। এ বছর সেখানে তাঁর উপস্থাপনা ‘সাঁচি স্তূপ’। মনোহর পুকুরের ত্রিধারা সম্মিলনীতে এ বছর হ্যাটট্রিক দীপকের। সেখানে তিনি তৈরি করছেন ‘রাজপুতানার প্রাসাদ’।
সুশান্ত পালের এ বারের বাজি কালীঘাটের সঙ্ঘশ্রী। যে পুজো দেখতে ষাট-সত্তরের দশকে ভিড় উপচে পড়ত, সেই পুজোকে আবার পুরনো মেজাজে ফিরিয়ে আনার চ্যালেঞ্জ নিয়েছেন সুশান্ত। বালিগঞ্জ ২১ পল্লিও এ বার বরাত দিয়েছে তাঁকে। সেখানে তাঁর থিম ‘পুরুষাকৃতি’। সেই সঙ্গে তিনি রয়ে গিয়েছেন তাঁর পুরনো পুজো খিদিরপুরের পল্লি শারদীয়াতেও।
একই ভাবে রূপচাঁদ কুণ্ডু এ বছর চতুর্থ বারের জন্যও থেকে গিয়েছেন বাবুবাগানে। সেখানে তাঁর নিবেদন ‘শক্তির ৫১ পীঠ’। কুমোরটুলি পার্কে রূপচাঁদ বেছে নিয়েছেন পোড়া মাটিকে। পাটুলি-বৈষ্ণবঘাটা সর্বজনীনেও এ বার মণ্ডপ সাজাচ্ছেন তিনি। সেখানে উপকরণ কাচের শিশি।
তবে কলকাতার প্রথম একাদশ কিন্তু শান্তিতে নেই। কারণ এ বছর তাঁদের চ্যালেঞ্জ জানাতে তৈরি উঠতি শিল্পীরা কলকাতার দ্বিতীয় একাদশ।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.