তিনি সংগঠনের কোনও স্তরেই ‘বিশৃঙ্খলা বরদাস্ত করবেন না’ বলে ফের জানিয়ে দিলেন মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
‘নতুন বাংলা’ গড়তে প্রশাসনের সর্ব স্তরে যেমন ‘স্বচ্ছতা ও শৃঙ্খলা’ বজায় রেখে কাজ করার নির্দেশ দিয়েছেন তিনি, তেমনই দলের ছাত্র সংগঠনের সদস্যদের ‘সংযত ও শৃঙ্খলাবদ্ধ’ হয়ে চলার পরামর্শ দিয়েছেন মমতা। নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে রবিবার তৃণমূল ছাত্র পরিষদের প্রতিষ্ঠা দিবসের সমাবেশে ছাত্রদের কাছে মমতার আবেদন, “বাংলার উন্নয়নে ছাত্রদেরও এগিয়ে আসতে হবে।”
বাম আমলে রাজ্যের মেধার কোনও মর্যাদা ছিল না বলে অভিযোগ করে মমতা বলেন, “আমি চাই, বাংলার ছেলেরা আর বাইরে গিয়ে কাজ ভিক্ষা করবে না।” আর সে জন্যই বিশেষ ‘ছাত্র ব্রিগেড’ গড়ার ঘোষণা করেছেন মমতা। আগামী জানুয়ারিতে ব্রিগেড ময়দানে সমাবেশ করে মুখ্যমন্ত্রী ‘ছাত্র বিগ্রেডের ভবিষ্যত কর্ম পরিকল্পনা’ ঘোষণা করবেন। ছাত্র ব্রিগেডে যে ছাত্রেরা যোগ দেবেন, তাঁদের যেমন প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে, তেমনই দু’বছর গ্রাম বা শহরে সমাজসেবামূলক কাজে তাঁদের যুক্ত থাকতে হবে। তার পরে ‘এমপ্লয়মেন্ট ব্যাঙ্কে’র মাধ্যমে ভবিষ্যতে সেই ছাত্রদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা হবে বলে প্রতিশ্রুতি দেন মমতা। সমাবেশে শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় ও অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্রও উন্নয়নের কাজে ছাত্রদের সামিল হওয়ার আহ্বান জানান।
‘প্রশাসক’ মমতা যখন ছাত্র সংগঠনের কাজেও ‘শৃঙ্খলা’ আনার চেষ্টা করছেন, অন্য দিকে তখন কংগ্রেসের পুরনো ছাত্র পরিষদের অনুষ্ঠানে বিশৃঙ্খলা অব্যাহত। মহাজাতি সদনে এ দিন ছাত্র পরিষদের সভায় ছিল চরম বিশৃঙ্খলা। দলের প্রাদেশিক ও কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের উপস্থিতিতেই ছাত্র পরিষদের বিভিন্ন গোষ্ঠীর মধ্যে কার্যত ধস্তাধস্তিও হয়। ছাত্র পরিষদ কর্মীদের একাংশ বক্তাদের বক্তৃতা চলাকালীন স্লোগান দেয়, ঢাক বাজায়। মঞ্চে ওঠা নিয়ে তারা নেতাদের সঙ্গে ‘অশোভন আচরণ’ করে। অনুষ্ঠানের সভাপতি ছাত্র পরিষদের প্রাক্তন নেতা শুভঙ্কর সরকারের সঙ্গে বাদানুবাদে জড়িয়ে পড়েন অনেকে।
এআইসিসি-র সাধারণ সম্পাদক শাকিল আহমেদ, কেন্দ্রের প্রাক্তন মন্ত্রী জগদীশ টাইটলার, এআইসিসি নেত্রী অলকা লাম্বা, প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি প্রদীপ ভট্টাচার্য, রাজ্যের মন্ত্রী মানস ভুঁইয়া, সাংসদ দীপা দাশমুন্সি ও মৌসম বেনজির নূর, বিধায়ক দেবপ্রসাদ রায়, সুখবিলাস বর্মা ও অসিত মিত্র, দলের নেতা নির্বেদ রায়, অরুনাভ ঘোষ প্রমুখ সভায় ছিলেন। প্রদীপবাবুরা বিশৃঙ্খল কর্মীদের শান্ত করার চেষ্টা করেন। পরে অবশ্য নেতারা স্বভাবসিদ্ধ ভঙ্গিতে ওই বিশৃঙ্খলাকে ‘প্রাণের উচ্ছ্বাস’ বলে অভিহিত করেছেন।
অনেক বেশি ভিড় হলেও নেতাজি ইন্ডোরের সভা ছিল তুলনায় অনেক ‘সুশৃঙ্খল’। উন্নয়নে ছাত্রদের সার্বিক সহযোগিতার আবেদন জানিয়ে সভায় শপথ বাক্য পাঠ করান তৃণমূল ছাত্র পরিষদের চেয়ারম্যান বৈশ্বানর চট্টোপাধ্যায়। সিপিএম-সহ বিভিন্ন বাম ছাত্র সংগঠন ‘শিক্ষার পরিবেশ কলুষিত করার চেষ্টা করছে’ বলে তার বিরুদ্ধে ‘নিন্দা প্রস্তাব’ পাঠ করেন সংগঠনের রাজ্য সভাপতি শঙ্কুদেব পণ্ডা। সমাবেশে সুনন্দ সান্যাল, অভিরূপ সরকার, সুগত মার্জিত, শুভ্রা চক্রবর্তী, জাহানারা বেগম প্রমুখ শিক্ষাবিদদের সংবর্ধনা জানান শঙ্কুদেবরা। নেতাজি ইন্ডোরের সমাবেশকে এ দিন ‘ঐতিহাসিক’ বলে অভিহিত করেছেন দলের প্রাক্তন ছাত্র নেতারা। রাজ্যের মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায় থেকে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী সৌগত রায়, বিধায়ক অশোক দেব, তাপস রায়েদের অনেকেরই বক্তব্য, মমতার মতো ‘রোল মডেলে’র টানেই এ দিন নেতাজি ইন্ডোরের ভিড় ‘অতীতের সব রেকর্ডকে’ ভেঙে দিয়েছে। ভিড় দেখে ‘উচ্ছ্বসিত’ কংগ্রেস থেকে তৃণমলে যোগ দেওয়া সৌরভ চক্রবর্তী বলেন, “বাংলার ছাত্ররা আজ তৃণমূল ছাত্র পরিষদ ছাড়া আর কোনও সংগঠনের সঙ্গে যে নেই, তা এই সমাবেশে প্রমাণিত।”
তবে মহাজাতি সদনের বিশৃঙ্খলার মধ্যেও সমাবেশ-মঞ্চ থেকে তৃণমূলকে বার্তা দিয়েছেন কংগ্রেস নেতৃত্ব। সেই বার্তার মূল নির্যাস৩৪ বছরের বাম শাসনে সিপিএমের নিরন্তর আক্রমণ সত্ত্বেও ছাত্র পরিষদ বা কংগ্রেস ধ্বংস হয়নি। এখন রাজ্যের প্রধান শাসক দল তৃণমূলের ‘আক্রমণে’ও তারা ধ্বংস হবে না। জোট শরিকের আক্রমণকে প্রতিরোধ করে টিকে থাকবে। শাকিল বলেন, “সরকারে আছি বলে জনতা বা ছাত্রছাত্রীদের সমস্যায় চোখ বন্ধ করে থাকব না। সনিয়া গাঁধীর নির্দেশ আছে। আমাদের কোনও ছাত্রের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করা হলে ছাত্র পরিষদ প্রতিবাদ করবে। প্রদীপদা’দের বলছি, আপনারা তার পাশে থাকবেন। আমরা সর্বভারতীয় কংগ্রেসের তরফে আপনাদের পাশে থাকব।” মহাজাতি সদনে যে ঘরে ছাত্র পরিষদের প্রতিষ্ঠা হয়, তা ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য এ দিন সমাবেশ থেকে দাবি তোলা হয়। |