জল নামতে শুরু করেছে মালদহ ও দুই দিনাজপুরের সমস্ত নদীতে। কিন্তু ‘স্বস্তি’তে নেই মালদহ ও দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার প্রশাসনিক কর্তারা। প্রায় সর্বত্রই ত্রাণ না পাওয়া নিয়ে ক্ষোভ রয়েছে দুর্গতদের। ত্রাণ না মেলার অভিযোগে রবিবার মালদহের রতুয়া-১ ব্লক অফিসে ‘হামলা’ চালান এক দল বন্যাদুর্গত। |
শনিবার রাত থেকেই মালদহে গঙ্গা ও ফুলহারের জল নামতে শুরু করে। তবে এখনও ওই দুই নদীর জল বিপদসীমার উপর দিয়েই বইছে। জল নামছে দক্ষিণ দিনাজপুরের আত্রেয়ী, উত্তর দিনাজপুরের নাগর ও ট্যাঙন নদীতেও। কিন্তু ত্রাণের ‘অভাব’ নিয়ে ক্ষোভে মানুষ চট করে তেতে উঠছেন। হরিশ্চন্দ্রপুর-২ পঞ্চায়েতের বিরোধী দলনেতা, সিপিএমের সুধীর যাদবের অভিযোগ, “মানুষের পাশাপাশি গবাদিপশুরাও খাবারে অভাবে ধুঁকছে। ত্রাণের খাবার তো মেলেইনি। কয়েক হাজার বানভাসির জন্য ত্রিপল মিলেছে মাত্র ৩৫০টি।”
ত্রাণের ‘অভাব’ নিয়ে এ দিনও ক্ষোভ দেখা গিয়েছে মালদহের হরিশ্চন্দ্রপুরের ভাকুরিয়া থেকে দিয়ারা, কাওয়াডোল, মারপুর, রসিদপুর, রতুয়ার কমলপুর, মণিপুর, নিমতলা, আজিজটোলা, সূর্যাপুর এলাকায়। নৌকার অভাবে বহু মানুষ জলের মধ্যেই মাচা বেঁধে দিন কাটাচ্ছেন। হরিশ্চন্দ্রপুরের উত্তর ভাকুরিয়ার রামকুমার মণ্ডল, মানিক মণ্ডলদের ক্ষোভ, “ পাঁচ দিন ধরে জলে মাচা বেঁধে পরিবারের সবাইকে নিয়ে রয়েছি। এত দিনে একটা ত্রিপল ছাড়া কিছুই জোটেনি।” চাঁদপুরের আমিনা বিবি, চণ্ডীপুরের মহম্মদ ইলিয়াসরা বলেন, “ঘরে খাবার নেই, পানীয় জলও নেই। নদীর জল খেতে হচ্ছে। ঘরে ঘরে পেটের রোগ দেখা গিয়েছে।” এই ‘পরিস্থিতি’তে এ দিন রতুয়া-১ ব্লক অফিস ঘেরাও করে ত্রাণের দাবিতে বিক্ষোভ দেখান শতাধিক বানভাসি। এক সময়ে তাঁরা ব্লক অফিস লক্ষ করে ঢিল, পাটকেল ছোড়েন বলে অভিযোগ। মালদহের অতিরিক্ত জেলাশাসক তরুণ সিংহরায় বলেন, “বাইরের জেলা থেকে চাল আনতে হচ্ছে। রাস্তায় যানজটের জন্য বাইরের জেলা থেকে চাল দেরিতে ঢোকায় ত্রাণ পৌঁছতে দেরি হচ্ছে। তাতেই বন্যা কবলিত এলাকায় অসন্তোষ দেখা দিয়েছে।” |
‘অপর্যাপ্ত’ ত্রাণ নিয়ে ক্ষোভ দক্ষিণ দিনাজপুরেও। বালুরঘাটের পুরপ্রধান সুচেতা বিশ্বাসের অভিযোগ, “জেলা প্রশাসন মাত্র ১০ কুইন্টাল চাল দিয়েছে। কাকে ছেড়ে কাকে দেব?” দক্ষিণ দিনাজপুরের তপন ব্লকের গুড়িয়াপাড়ার মানদা বর্মন, আরতি দাস, শিপ্রা বর্মনদের অভিযোগ, এলাকায় জল ঢোকার পরে তাঁরা খোলা আকাশের নীচে রাত কাটাচ্ছেন। এলাকার প্রায় তিনশো বাসিন্দা বন্যাদুর্গত। রামপাড়া চেঁচড়ার ৪০০ বাসিন্দা স্কুলবাড়িতে আশ্রয় নিয়েছেন। তাঁদের অভিযোগ, ত্রাণ বাবদ এক ছটাক চালও পাননি। এখনও বালুরঘাটের আত্রেয়ী কলোনি এবং এ কে গোপালন কলোনির বাসিন্দারা ঘরে ফেরেননি। ত্রাণ নিয়ে রাজনীতির অভিযোগ তুলেছে তৃণমূল। দলের নেতা দেবাশিস মজুমদারের অভিযোগ, “দু’টি কলোনির বাসিন্দারা বিধানসভা ভোটে তৃণমূলকে ভোট দেন। সেই জন্যই ত্রাণ বিলি নিয়ে গড়িমসি হচ্ছে।” তবে দক্ষিণ দিনাজপুরের অতিরিক্ত জেলাশাসক নারায়ণ সরকার ত্রাণ নিয়ে অভিযোগ অস্বীকার করেন। |