কোমায় মেডিক্যাল/১
দামি যন্ত্র পড়ে, রোগীর ‘ভরসা’ বেসরকারি প্যাথলজি
সাত দিনে এক বার ডায়ালিসিস করতে কলকাতায় যেতে হয় শেখ মুন্নাকে। অতিরিক্ত অর্থ-ব্যয়, সেই সঙ্গে যাতায়াতের ঝক্কি ফি-হপ্তায়।
ঝাড়গ্রামের খালশিউলির পবন বারুইকে এক্স-রে করানোর পরামর্শ দিয়েছেন চিকিৎসক। এক্স-রে কাউন্টারে গিয়ে ‘ডেট’ মিলল তিন দিন পরে! আবার আর একটা দিন বাসভাড়া গচ্চা দিয়ে ভাঙা হাড়ে আসতে হবে এক্স-রে’র জন্য!
সাত বছর হল মেদিনীপুর সদর হাসপাতাল মেডিক্যাল কলেজে রূপান্তরিত হয়েছে। কিন্তু চিকিৎসা পরিষেবা রয়ে গিয়েছে সেই আগের আমলেই। নিতান্ত সাধারণ পরিষেবার ক্ষেত্রেও রোগীদের দুর্ভোগ কহতব্য নয়। হন্যে হয়ে ঘুরতে হয় দিনের পর দিন। সাধারণ সেই সব পরিষেবা পাওয়ার মতো পরিকাঠামো একেবারে যে নেই, তা নয়। রয়েছে আধুনিক যন্ত্রও। অথচ অজ্ঞাত কারণে যন্ত্রগুলি অচল হয়েই রয়েছে মাসের পর মাস। ‘দেখছি’, ‘দেখব’ করেই চালিয়ে যাচ্ছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। আর এই ফাঁকির ফাঁক গলেই মেদিনীপুর শহরে রমরমা এখন বেসরকারি স্বাস্থ্য-ব্যবসার!
মেদিনীপুর মেডিক্যালে রয়েছে ৩টি ডায়ালিসিস যন্ত্র। ২০০৭-০৮ আর্থিক বছরে স্বাস্থ্য দফতর এই তিনটি যন্ত্র পাঠিয়েছিল। এক-একটির দাম বেশ কয়েক লক্ষ টাকা। একটিও চালু হয়নি! ফলে বেসরকারি নার্সিংহোমে যেতেই হচ্ছে রোগীদের। শহরের সিপাইবাজার এলাকার বাসিন্দা শেখ মুন্নাদের মতো অনেককেই ছুটতে হয় কলকাতাতেও। মুন্নার আত্মীয় শেখ সারাফত বলেন, “সপ্তাহে এক বার ডায়ালিসিসের জন্য কলকাতায় নিয়ে যেতে হয়। এক জন অসুস্থকে, যার ডায়ালিসিস দরকার, তাকে কলকাতায় নিয়ে যাওয়া কত কষ্টের, ভাবুন তো। খরচপাতিও আছে। ঘরের সামনে মেডিক্যাল কলেজ। শুনেছি যন্ত্রপাতিও রয়েছে। কিন্তু কাজ হয় না। আমাদের মতো গরিব মানুষের কী দুর্ভোগ বলুন তো!”
ডায়ালিসিসের মতো আরও অনেক যন্ত্রই স্রেফ পড়ে রয়েছে। পড়ে রয়েছে ৮০০ এমএম এক্স-রে মেশিন। যার দাম প্রায় ৬৫ লক্ষ টাকা। ৫ বছর ধরে আাধুনিক এই যন্ত্রটি পড়ে রয়েছে। কাজ চালানো হচ্ছে ৫০০ এমএম, ৩০০ এমএম, ২০০ এমএম যন্ত্রে। ফলে এক্স-রে’র গুণগত মান খারাপ হচ্ছে। অথচ গুণগত মানোন্নয়নেই ৮০০ এমএম যন্ত্রটি পাঠানো হয়েছিল হাসপাতালে। কিন্তু কখনও টেকনিশিয়ান নেই, আবার কখনও যন্ত্রটি বসানোর জন্য ঘর নেইএহেন নানা আছিলায় ৫ বছরেও যন্ত্রটি কাজে লাগানো যায়নি! এ ভাবেই পড়ে রয়েছে ২টি সেমি অটো-অ্যানালাইজার। যার এক-একটির দাম প্রায় ৫ লক্ষ টাকা। পড়ে রয়েছে একটি অটো-অ্যানালাইজার, যার দাম প্রায় ২৫ লক্ষ টাকা। ব্লাডসেল কাউন্টের জন্য দু’টি যন্ত্র কেনা হয়েছিল, প্রতিটি ১০ লক্ষ টাকা দামে। একটি ব্লাডব্যাঙ্কে ও অন্যটি প্যাথল্যাবে দেওয়া হয়েছে। সে-দু’টিরও ব্যবহার হয়নি। আইসিসিইউ ও অপারেশন থিয়েটারে বসানোর জন্য ৬টি ভেন্টিলেটর মেশিনও পড়ে রয়েছে। আগে ৫টি ভেন্টিলেটর ছিল। তার মধ্যে ৩টি খারাপ হয়ে রয়েছে। ২টি দিয়েই কোনও রকমে কাজ চালানো হচ্ছে। তাতে সমস্যা হচ্ছিল বলেই ৬টি ভেন্টিলেটর মেশিন আনা হয়েছিল হাসপাতালে। সেগুলি রয়ে গিয়েছে বাক্সবন্দি হয়েই।
পোর্টেবেল ইউএসজি মেশিন কেনা হয়েছিল ৬টি। সেই ২০০৫-০৬ আর্থিক বছরে। প্রসূতিদের শয্যার পাশে নিয়ে গিয়ে পরীক্ষা করতেই এই যন্ত্র কেনার ব্যবস্থা। কিন্তু অব্যবহৃত থেকে থেকে নষ্ট হয়ে গিয়েছে বলে হাসপাতাল সূত্রেই জানা গিয়েছে। মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের বিভিন্ন বিভাগে হিসাব নিলে এ রকম পড়ে থাকা যন্ত্রের তালিকা বেড়েই যাবে শুধু। স্বাস্থ্য দফতরের পদস্থ-কর্তারা গুদামে ঢুকলে পড়ে থাকা যন্ত্রপাতি নজরে আসতে পারে, এই আশঙ্কায় অনেক যন্ত্রপাতি হাসপাতালের বিভিন্ন বিভাগে নিয়ে গিয়ে ফেলে রাখা হয়েছে। এক চিকিৎসকের কথায়, “সব হিসাব নিলে দেখা যাবে কোটি কোটি টাকার যন্ত্র পড়ে রয়েছে। অনেক নষ্ট হয়ে গিয়েছে। কে তার হিসাব রাখে!”
পরিণামে ভোগান্তি সেই সাধারণ মানুষের।

কী যন্ত্র কী অবস্থা
৩টি ডায়ালিসিস মেশিন ২০০৭-’০৮ সাল থেকে পড়ে।
৮০০ এমএম এক্সরে দাম ৬৫ লাখ, ’০৫ থেকে পড়ে।
৬টি ভেন্টিলেশন মেশিন এ বছরই এসেছে। তবে চালু হয়নি ডেমনস্ট্রেশনের অভাবে।
৬টি পোর্টেবেল ইউএসজি ব্যবহার না করেই অকেজো।
৩টি সেমি অটো অ্যানাইলাইজার প্রতিটির দাম ৫ লাখ। তিন বছর ধরে পড়ে।
অটো অ্যানাইলাইজার দাম প্রায় ২৫ লাখ। পাঁচ বছর ধরে পড়ে।
২টি ব্লাডসেল-কাউন্টার প্রতিটির দাম প্রায় ১০ লাখ। ব্লাডব্যাঙ্ক, প্যাথল্যাবে পড়ে।
নতুন চারতলা ভবন নির্মাণব্যয় ১০ কোটি। এখনও চালুই হল না।

(চলবে)



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.