পাহাড়ে পানীয় জল সরবরাহ নিয়ে দীর্ঘদিনের সমস্যা মিটিয়ে সেখানকার উন্নয়নে রাজ্য সরকার যে উদ্যোগী সেই বার্তা দিলেন জনস্বাস্থ্য ও কারিগরি মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়। পুজোর পরেই দার্জিলিং সদর মহকুমা তথা শহরে পানীয় জল সরবরাহ ব্যবস্থা চালু করতে চান মুখ্যমন্ত্রী।
রবিবার শিলিগুড়িতে উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রী গৌতম দেবকে পাশে বসিয়ে এ কথা জানালেন রাজ্যের জনস্বাস্থ্য কারিগরি মন্ত্রী। পাশাপাশি শিলিগুড়ি শহরের বাসিন্দাদের চাহিদা মতো পানীয় জল সরবরাহের বিকল্প ব্যবস্থা গড়ে তুলতে প্রায় ৩০০ কোটি টাকার নতুন প্রকল্প গড়ে তোলা হবে বলে তিনি জানিয়েছেন। দার্জিলিঙের পাশাপাশি শিলিগুড়ি শহরের পানীয় জল সরবরাহের সুষ্ঠু ব্যবস্থা গড়তে নতুন প্রকল্পের উপর মুখ্যমন্ত্রী গুরুত্ব দিচ্ছেন বলে সুব্রতবাবু জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, “দার্জিলিং শহরের পানীয় জল পৌঁছে দিয়ে বালাসন প্রকল্পের কাজ শেষ করতে আমরা উদ্যোগী। ২০০৫ সালে প্রকল্পের কাজ শুরু হয়েছিল। ঠিক মতো কাজ হলে এত দিনে জল পৌঁছে যেত। পুজোর পর মুখ্যমন্ত্রীকে দিয়ে প্রকল্পের উদ্বোধন করানোর পরিকল্পনা হয়েছে। দার্জিলিং সদর তথা শহরের বাসিন্দাদের জন্য প্রতিদিন মাথা পিছু অন্তত ৭০ লিটার জল সরবরাহ ব্যবস্থা এই প্রকল্প থেকে করা হবে।” |
এ দিন এই ব্যাপারে শিলিগুড়ির পিডব্লিউডি ইন্সপেকশন বাংলোয় উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী-সহ দফতরের প্রধান সচিব এবং অন্যান্য আধিকারিকদের নিয়ে বৈঠক করেন সুব্রতবাবু। উপস্থিত ছিলেন পুরসভার মেয়র গঙ্গোত্রী দত্ত, শিলিগুড়ি জলপাইগুড়ি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রুদ্রনাথ ভট্টাচার্য, পুরসভার জল সরবরাহ বিভাগের মেয়র পারিষদ অরিন্দম মিত্র-সহ অনেকেই। পরে সুব্রতবাবু বালাসন প্রকল্পের কাজ দেখতে যান। দার্জিলিঙে একটি অতিথিশালার উদ্বোধন করেন।
শিলিগুড়ি শহরের জল সরবরাহ ব্যবস্থা নিয়ে সুব্রতবাবু বলেন, “ফুলবাড়ি থেকে এখন যে জল সরবরাহ হচ্ছে তার গুণগতমান ভাল। তবে জলের জোগান পর্যাপ্ত নয়। তাই নতুন পরিকল্পনা নিতে হচ্ছে। ১৫ দিনের মধ্যে প্রকল্প জমা করা হবে। পুর এবং নগরোন্নয়ন দফতর, উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন দফতর এবং আমার নিজের দফতরকে নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করে শীঘ্রই সমস্ত কিছু চূড়ান্ত করা হবে।” তিনি জানিয়েছেন, গজলডোবায় তিস্তা ব্যারেজ লাগোয়া নদী থেকে পাইপের মাধ্যমে পানীয় জল সরবরাহ ব্যবস্থা গড়ে তোলা হবে। নতুন একটি ট্রিটমেন্ট প্লান্টও গড়ে তোলা হবে। কোথায় তা গড়া হবে মেয়র, মেয়র পারিষদ এবং উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রীকে তা ঠিক করতে অনুরোধ করেছেন তিনি। নতুন প্রকল্পে প্রায় ৩০০ কোটি টাকা খরচ হবে।
পুরসভা এবং জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, শিলিগুড়ির উপকন্ঠে ফুলবাড়ি এলাকার ট্রিটমেন্ট প্লান্ট থেকে শহরে পানীয় জল সরবরাহ হয়। ২০০১ সালে ওই প্রকল্প চালু হয়। মহানন্দা নদী থেকে জল তুলে ট্রিটমেন্ট প্লান্টে তা পরিস্রুত করে পাঠানো হয়। কিন্তু যে হারে জনসংখ্যা বেড়েছে তাতে চাহিদার তুলনায় পানীয় জলের জোগান অপ্রতুল। মহানন্দায় জলের অভাব দেখা দিলে তিস্তা ক্যানাল থেকেও জল নিতে হয়। ক্যানাল সংস্কারের কাজ করতে হলে সে কারণে সমস্যা দেখা দেয়। এ সব কারণে বিকল্প ব্যবস্থা গড়ে তোলা জরুরি হয়ে পড়েছিল। মুখ্যমন্ত্রীর বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের সময় ২০০৫ সালে বালাসন প্রকল্পের কাজ শুরু হয়েছিল। সোনাদা এবং রংবুলের মাঝে বালাসন নদী থেকে পাম্প করে জল তুলে সিঞ্চল এবং সিনধাপ লেকে জল ধরে রাখার কথা। সেখান থেকে পাম্প করে পাহাড়ে জল সরবরাহ হবে। |