ব্রিগেড ১৯ ফেব্রুয়ারি
এ বার শাখা সম্মেলন করবে না সিপিএম
রাজ্যের কোথাও এ বার দলের শাখা সম্মেলন হবে না বলে সিদ্ধান্ত নিল সিপিএম। রবিবার প্রমোদ দাশগুপ্ত ভবনে সিপিএমের বর্ধিত রাজ্য কমিটির বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত হয়েছে।
পূর্ব ও পশ্চিম মেদিনীপুর, বাঁকুড়া, পুরুলিয়া, দক্ষিণ ২৪ পরগনা, বর্ধমান-সহ দক্ষিণবঙ্গের বিভিন্ন জেলায় কয়েক হাজার শাখায় সম্মেলন করার মতো ‘সাংগঠনিক’ অবস্থায় সিপিএম নেই। বিধানসভা ভোটে পরাজয়ের পরে বহু শাখা অফিস বন্ধ হয়ে গিয়েছে। সেই কারণেই দলের রাজ্য নেতৃত্ব সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, গোটা রাজ্যের কোথাও কোনও শাখা সম্মেলন করা হবে না। শাখা কমিটির সদস্যরা সকলেই লোকাল কমিটির সম্মেলনে প্রতিনিধি হিসাবে উপস্থিত থেকে তাঁদের বক্তব্য পেশ করবেন।
সেপ্টেম্বর থেকে সিপিএমের সম্মেলন প্রক্রিয়া শুরু হচ্ছে। রাজ্য সম্মেলন হবে ১৬-১৮ ফেব্রুয়ারি, কলকাতায়। সম্মেলনের শেষে ১৯ ফেব্রুয়ারি, রবিবার ব্রিগেড সমাবেশ করবে সিপিএম। রাজ্যের শাসন ক্ষমতা হারানো পরে সেটাই হবে সিপিএমের প্রথম ব্রিগেড সমাবেশ। অনিল বিশ্বাস দলের রাজ্য সম্পাদক হওয়ার পরে সংগঠনের ভিত মজবুত করে গণতান্ত্রিক কেন্দ্রিকতাকে আরও প্রসারিত করতে শাখা স্তর থেকে সম্মেলন করার প্রক্রিয়া চালু করেন। বিগত তিনটি রাজ্য সম্মেলনে শাখা স্তর থেকে সম্মেলন হয়েছিল। তার আগে লোকাল স্তর থেকেই সম্মেলন হত। নির্বাচনী বিপর্যয়ের সঙ্গে সঙ্গে কোনও কোনও জায়গায় সাংগঠনিক দিক থেকেও ধাক্কা খেয়ে আবার পুরানো প্রথায় ফিরে যাচ্ছে সিপিএম।
এ মাসের প্রথম সপ্তাহে দলের সাধারণ সম্পাদক প্রকাশ কারাট কেন্দ্রীয় কমিটির সভায় যোগ দিতে কলকাতায় এলে আলিমুদ্দিন থেকে বলা হয়, শাখা সম্মেলন ছাড়াই লোকাল কমিটির সম্মেলন করার ব্যাপারে দল ভাবনাচিন্তা করছে। কারাট প্রাথমিক ভাবে সম্মতি দিয়ে বিষয়টি রাজ্য কমিটিতে আলোচনা করতে বলেন।
রাজ্যে সিপিএমের শাখা কমিটি রয়েছে ২৮ হাজার ৮৫৪টি। দল সূত্রে বলা হচ্ছে, উত্তরবঙ্গে শাখা স্তরে সম্মেলন নিয়ে সমস্যা নেই। সমস্যা নেই দক্ষিণবঙ্গের বিভিন্ন শহর বা শিল্পাঞ্চলেও। কিন্তু দক্ষিণবঙ্গের বিভিন্ন জেলায় সেই সমস্যা প্রবল। এই অবস্থায় গোটা রাজ্যেই এক নীতি নিয়ে শাখা সম্মেলন না করার প্রসঙ্গ উত্থাপন করেন দলের রাজ্য সম্পাদক বিমান বসু। তখন বেশ কিছু জেলার প্রতিনিধি তাঁকে জানান, এতে নিচুতলার কর্মীদের একাংশের মনোবল নষ্ট হবে। পরিশেষে ঠিক হয়, সব শাখা স্তরের সকল সদস্যই লোকাল কমিটির সম্মেলনে উপস্থিত থেকে মতামত জানাতে পারবেন। দলের এক নেতার কথায়, “কয়েক হাজার শাখায় সম্মেলন করার অবস্থা ছিল না। কিন্তু শাখা স্তর থেকে সম্মেলন করাতে হলে প্রক্রিয়া দীর্ঘায়িত হয়। তা ছাড়া, শাখায় ৬-৮ জন করে কর্মী থাকেন। তাঁরা এলাকায় সম্মেলন করে রাতে ফেরার সময় সমস্যার সম্মুখীন হতে পারেন। তাই কোনও শাখাতেই সম্মেলন করা হচ্ছে না।”
বৈঠকে জেলার প্রতিনিধিরা অভিযোগ করেন, বহু জায়গাতেই পঞ্চায়েত ঠিক মতো কাজ করতে পারছে না। এক দিকে তৃণমূলের বাধা, অন্য দিকে সরকারি অফিসার ও আধিকারিকরা পঞ্চায়েতকে এড়িয়ে বিভিন্ন সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন। অর্থ বরাদ্দ করছেন। জেলা পরিষদও কাজ করতে পারছে না। উন্নয়ন পরিষদ ও জেলার পরিকল্পনার ব্যাপারে বিধায়কদের মত নেওয়া হচ্ছে না। রাজ্য কমিটির তরফে বিমানবাবু নোটেও এ কথা বলা হয়েছে।
জেলার নেতারা বলেন, ৩৪ বছর ধরে যে ত্রিস্তর পঞ্চায়েত ব্যবস্থা বামফ্রন্ট গড়ে তুলেছিল, তৃণমূল জোট সরকার তা ভেঙে দিতে চাইছে। এই পরিস্থিতিতে কী করা উচিত, তা নিয়ে বৈঠকে আলোচনা হয়। সরকারের উপর চাপ সৃষ্টি করতে কেউ কেউ নির্বাচিত সংস্থা ও পঞ্চায়েত থেকে গণ পদত্যাগের কথা বলেন। কিন্তু পাল্টা মতামতও উঠে আসে। প্রতিনিধিরা অনেকে বলেন, এ কাজ করলে হঠকারী সিদ্ধান্ত হবে। বরং আরও দেখা দরকার। নির্বাচিত সংস্থার গণতান্ত্রিক অধিকার ফিরিয়ে দেওয়ার দাবিতে রাজ্য সরকারের উপর আরও চাপ সৃষ্টি করতে হবে।
বিভিন্ন জেলার প্রতিনিধিরা দাবি করেন, ক্ষমতা হারানো পরে দলে কর্মী-সমর্থকরা প্রথমে যে ভাবে তৃণমূলের দিকে যাচ্ছিলেন, তা অনেক কমেছে। বরং যাঁরা তৃণমূলকে ভোট দিয়েছিলেন, তাঁদের একাংশের ‘মোহ’ দূর হচ্ছে। তৃণমূলের ‘সন্ত্রাসের’ বিরুদ্ধে কৃষকরা পাল্টা ‘প্রতিরোধের’ পথেও যাচ্ছে। এরা সংখ্যায় কম হলেও তিন মাসের মধ্যে এমন ঘটনা ঘটতে পারে, জেলা নেতারা তা ভাবেননি। বন্যা ত্রাণ নিয়েও সরকারের বিরুদ্ধে ক্ষোভ রয়েছে। এই পরিস্থিতিতে মূল্যবৃদ্ধি থেকে আরম্ভ করে সাধারণ মানুষের বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে আন্দোলনের উপরে জোর দেন জেলার নেতারা।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.