শিল্পপতিদের সতর্কবার্তা মমতার
দলের নামে টাকা চাইলে দেবেন না
ম্প্রতি দলের শীর্ষনেতাদের সঙ্গে এক বৈঠকে সতর্ক করেছিলেন। এ বার প্রকাশ্যেই শিল্পপতিদের নিজের দলের একাংশ সম্পর্কে সতর্ক করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বললেন, “আমাদের দলের নাম ভাঙিয়ে কেউ যদি টাকা চায়, আপনারা কখনওই দেবেন না! ওই টাকা বরং হাসপাতাল বা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে খরচ করুন।”
দলের এবং রাজনৈতিক নেত্রী হিসেবে নিজের ‘ভাবমূর্তি’ নিয়ে বরাবরই অত্যন্ত ‘স্পর্শকাতর’ মমতা। মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পর সেই ‘তাগিদ’ আরও বৃদ্ধি পেয়েছে। তিনি জানেন, রাজ্যের প্রধান প্রশাসক হিসেবে শিল্প মহলের কাছে তাঁর সরকারের ‘স্বচ্ছ’ ভাবমূর্তি তুলে ধরা আরও জরুরি।
গত বিধানসভা ভোটের মুখে যখন তৎকালীন শাসক সিপিএম তাঁর দলের বিরুদ্ধে কালো টাকা নিয়ে নির্বাচন লড়ার অভিযোগ এনেছিল, তখন সরাসরি তার মোকাবিলা করেছিলেন মমতা। অত্যন্ত ক্রুদ্ধ হয়ে প্রকাশ্যেই বলেছিলেন, “অনেক শিল্পগোষ্ঠী আমাদের সাহায্য করতে চেয়েছে। কিন্তু আমরা সকলকেই ধন্যবাদ জানিয়ে ফিরিয়ে দিয়েছি।” কিন্তু ক্ষমতায় আসার পর তাঁর দলের একাংশের মধ্যে যে এমন ‘প্রবণতা’ এসে থাকতে পারে, সে বিষয়েও সম্যক অবহিত মুখ্যমন্ত্রী। বিভিন্ন শিল্প সংস্থা বা শিল্পপতিদের একাংশের থেকে অর্থ নেওয়াটা এ দেশে শাসক দলের কাছে কার্যত ‘দস্তুর’ হয়ে গিয়েছে। মমতা নিজে সেই নিয়মের কঠোর ‘ব্যতিক্রম’ হতে চান। তাঁর দলকেও সেই ছোঁয়াচ থেকে মুক্ত রাখতে চান। সেই জন্যই রবিবার সল্টলেকের সেক্টর ফাইভে এক তথ্যপ্রযুক্তি পরিকাঠামোর শিলান্যাস অনুষ্ঠানের মঞ্চ থেকে শিল্পপতিদের উদ্দেশে সাফ বলেছেন, “যদি দলীয় তহবিলে দান করতেই চান, তা হলে ‘চেক’ মারফত দেবেন। আমরা এই স্বচ্ছতাটাই চাই। কারণ, শিল্পপতিদের কাছ থেকে দলের নাম করে টাকা চাওয়া অন্যায়। এতে দলের তো লাভ হয়ই না। কারও কোনও লাভ হয় না। এটা কিছুতেই বরদাস্ত করব না!” পাশাপাশি শিল্পপতিদের কাছেও মমতার আবেদন, “আপনাদেরও এটা দেওয়া বন্ধ করতে হবে।”
কেন মুখ্যমন্ত্রী এ দিন ওই ‘হুঁশিয়ারি’ দিয়েছেন, তার জবাব রয়েছে সম্প্রতি তৃণমূলের এক রুদ্ধদ্বার বৈঠকে। কলকাতার টাউন হলে ওই বৈঠকে দলের অন্তত পাঁচ জন প্রথম সারির নেতার নাম করে মমতা জানতে চেয়েছিলেন, তাঁদের কাছে কি দল কোনও টাকা চেয়েছে? প্রত্যাশিত ভাবেই সকলে ‘না’ বলেন। মুখ্যমন্ত্রী যা শুনে জানিয়ে দেন, তাঁর কাছে সব খবরই আসে। যার ব্যাখ্যায় তৃণমূলের এক শীর্ষ নেতার বক্তব্য, “দলনেত্রী কিছু না-বলেও যা বলেছেন, তা খুব স্পষ্ট। সংশ্লিষ্ট নেতারা দলের নাম করে কারও না কারও কাছে অর্থ দাবি করেছেন। কিন্তু হয় তাঁরা টাকা তখনও নেননি, বা নিয়ে থাকলেও দলীয় তহবিলে জমা দেননি। নেত্রী যা করেছেন, তা মোদ্দা কথায়, দল যে ওই নেতাদের কাছে দলীয় তহবিলের জন্য টাকা চায়নি, তা দলীয় বৈঠকেই তাঁদের দিয়ে বলিয়ে নিয়েছেন। যার অর্থ খুব স্পষ্ট দলের নাম করে টাকা তোলা চলবে না। দল তাঁদের টাকা তোলার কোনও দায়িত্বও দেয়নি!”
এ দিনের অনুষ্ঠানে মমতা অবশ্য সামগ্রিক ভাবেই রাজনৈতিক দলের নাম ভাঙিয়ে শিল্পপতিদের কাছ থেকে টাকা তোলার বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন। সেক্টর ফাইভে চ্যাটার্জি গোষ্ঠীর দ্বিতীয় তথ্যপ্রযুক্তি পরিকাঠামো ‘বেঙ্গল ইকো ইনটেলিজেন্স পার্ক’-এর শিলান্যাস করতে এসে ওই প্রসঙ্গে ‘কড়া বার্তা’ দেন মুখ্যমন্ত্রী। একই সঙ্গে তিনি আরও বলেন, “নির্বাচনের সময় যে কোনও রাজনৈতিক দলেরই অর্থের দরকার পড়ে। তৃণমূলও তার ব্যতিক্রম নয়। কিন্তু প্রয়োজনে ওই অর্থ ভিক্ষা করে নিতে হবে!” এই কথাটাও ভোটের প্রচারে বারবার বলতেন মমতা। প্রতিটি জনসভায় তিনি বলেছেন, ‘‘আমাদের টাকাপয়সা নেই। ভিক্ষা করে ভোট লড়তে হচ্ছে। প্রার্থীদেরও সে ভাবে সাহায্য করতে পারিনি। তারা নিজেদের পকেট থেকে অথবা ধারকর্জ করে ভোট লড়ছে।”
বেঙ্গল ইকো ইন্টেলিজেন্স পার্কের শিলান্যাসে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে
চ্যাটার্জি গোষ্ঠীর কর্ণধার পুর্ণেন্দু চট্টোপাধ্যায়। সল্টলেকে। ছবি অর্কপ্রভ ঘোষ।
প্রসঙ্গত, এ দিন আলিমুদ্দিনে সিপিএমের বর্ধিত রাজ্য কমিটির বৈঠকেও তৃণমূলের ‘তোলা’ আদায়ের বিষয়ে আলোচনা হয়। দক্ষিণবঙ্গের বিভিন্ন জেলার নেতারা বলেন, তাঁদের এলাকায় স্কুল শিক্ষক, ছোট ব্যবসায়ী বা সিপিএমের ‘হিতৈষী’দের থেকে ৫ থেকে ১০ হাজার টাকা এমনকী, কোথাও কোথাও লক্ষাধিক টাকাও দাবি করছেন তৃণমূলের স্থানীয় নেতৃত্ব। ওই ঘটনাকে ‘জিজিয়া-কর’ আদায়ের সঙ্গে তুলনা করে জেলার নেতারা বলেছেন, ওই অর্থ না-দিলে ব্যবসা বন্ধ করে দেওয়া হবে বা স্কুলে যেতে দেওয়া হবে না বলে হুমকি দেওয়া হচ্ছে। বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্র ইতিমধ্যেই একাধিক বার মুখ্যমন্ত্রীকে ওই বিষয়ে অবহিত করেছেন। জেলার নেতারা চান, রাজ্য নেতৃত্ব ওই বিষয়ে আরও ‘সক্রিয়’ হোন।
প্রসঙ্গত, মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পরে এই প্রথম কোনও শিল্প প্রকল্পের শিলান্যাস অনুষ্ঠানে এলেন মমতা। হলদিয়া পেট্রোকেমিক্যালসের অন্যতম অংশীদার পূর্ণেন্দু চট্টোপাধ্যায়ের এই প্রকল্পে লগ্নির অঙ্ক ৪৫০ কোটি টাকা। এটি তৈরির কাজ শেষ হওয়ার কথা আগামী ৪০ মাসের মধ্যে। রবিবার শিলান্যাস অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে ছিলেন রাজ্যের শিল্প ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়, কেন্দ্রীয় জাহাজ প্রতিমন্ত্রী মুকুল রায় এবং পূর্ণেন্দুবাবুও।
এ দিন হলদিয়া পেট্রোকেমিক্যালসে পূর্ণেন্দুবাবুর অংশীদারি নিয়ে তৈরি ‘জটিলতা’ প্রসঙ্গে পূর্বতন বাম সরকারকে এক হাত নেন মমতা। তিনি জানান, রাজ্যে যখন লগ্নির খরা চলছিল, সেই সময়ে পূর্ণেন্দুবাবুই এসেছিলেন বিনিয়োগের ঝুলি নিয়ে। অথচ হলদিয়া পেট্রোকেমের অংশীদারি সংক্রান্ত বিষয়ে বামফ্রন্ট সরকার সেই পূর্ণেন্দুবাবুকেই কার্যত ‘ফাঁসিয়ে’ দিয়েছিল! রাজ্যে শিল্পায়ন প্রসঙ্গেও তাঁর সরকারের যাবতীয় উদ্যোগের কথা ফের স্পষ্ট করে দেন মুখ্যমন্ত্রী। শিল্প গড়ার প্রক্রিয়া দ্রুত করতে ‘এক জানলা ব্যবস্থা’, আবেদনপত্রের সংখ্যা কমিয়ে আনা বা অনলাইনে আবেদনপত্র জমার দেওয়ার সুবিধা আনার পাশাপাশি গোটা প্রক্রিয়ায় ‘স্বচ্ছতা’ বজায় রাখার জন্য তাঁদের প্রয়াসের কথাও জানান।
সরকারের সাফল্য প্রসঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “ইতিমধ্যেই সরকারি ক্ষেত্রে ৮০ হাজার কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হয়ে গিয়েছে। আর শিল্পমন্ত্রীর দেওয়া হিসেব মাফিক, বেসরকারি ক্ষেত্রেও আগামী এক বছরে তৈরি হতে চলেছে ২ লক্ষ ৩১ হাজার কাজ।” নতুন রাজ্য সরকার ‘ই-গভর্ন্যান্স’-এর উপর অনেক বেশি জোর দেওয়ায় আগামী দিনে তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থাগুলির হাতে বিপুল পরিমাণে বরাত আসবে বলেও এ দিন দাবি করেন মুখ্যমন্ত্রী।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.