|
|
|
|
প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে পৃথক বৈঠকে কংগ্রেস-তৃণমূল |
রাজ্যের উন্নয়নে এক সুরে টাকা চাইল দুই শরিক |
নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা |
অপেক্ষমান কংগ্রেস নেতা-মন্ত্রীদের ঘরে সটান চলে এলেন তিনি। তার পরেই শাকিল আহমেদকে বললেন, “শাকিলজি, রুপিয়া মাঙ্গিয়ে। রুপিয়া!”
স্থান: রাজভবন। সময়: রবিবার সন্ধ্যা।
প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহের সঙ্গে প্রায় একই সময়ে রাজভবনে প্রবেশ করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি প্রধানমন্ত্রীর কাছে কংগ্রেস সভানেত্রী সনিয়া গাঁধীর স্বাস্থ্য নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন। প্রধানমন্ত্রীকে মমতা বলেন, তিনি সনিয়াকে দেখতে যেতে চান। যার জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন,
সনিয়া বিদেশ থেকে খুব শীঘ্রই ফিরবেন। মমতা মনমোহনকে বলেন, তাঁদের উদ্বেগ ও শুভেচ্ছার কথা সনিয়াকে জানাতে।
দেশ ও রাজ্যের দুই শীর্ষ প্রশাসকের মধ্যে বাকি কথাবার্তা হল রাজ্যের ‘উন্নয়ন’ নিয়েই। কংগ্রেস ও তৃণমূলের নেতা ও জন প্রতিনিধিদের আলাদা আলাদা সময় দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী। প্রথমে কংগ্রেস, তার পরে তৃণমূল। ঘণ্টাখানেকের ব্যবধানে। তখনও কংগ্রেসের ডাক পড়েনি।
তাঁরা অপেক্ষায়। তখনই ঘরে
ঢোকেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা। এবং জোটসঙ্গী দলের নেতাকে বলে যান, রাজ্যের উন্নয়নে আরও অর্থ বরাদ্দের জন্য যেন তাঁরা প্রধানমন্ত্রীর কাছে আর্জি জানান।
দু’টি সাক্ষাৎকারের সময়েই প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ছিলেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী তথা বর্ষীয়ান কংগ্রেস নেতা প্রণব মুখোপাধ্যায়। সরকারের দুই শরিকই রাজ্যের উন্নয়নের জন্য আরও অর্থ বরাদ্দের জন্য প্রধানমন্ত্রীর কাছে আবেদন জানায়। ভোটের পর থেকেই রাজ্যের কিছু জেলায় বিক্ষিপ্ত ভাবে তাঁদের কর্মী-সমর্থকদের উপর তৃণমূলের ‘হামলা’র কথা বলছেন কংগ্রেস নেতৃত্ব। সে সব ঝেড়ে ফেলে এ দিন কিন্তু রাজ্যের উন্নয়নের জন্য অর্থের দাবিতে দুই শরিকের ‘ঐক্যের’ ছবিই দেখা গেল।
পশ্চিমবঙ্গের উন্নয়নে প্রধানমন্ত্রী যে ২১ হাজার কোটি টাকার ‘প্যাকেজ’ ঘোষণা করেছেন, তার জন্য দুই শরিকই তাঁকে ‘ধন্যবাদ’ জানিয়েছে। অন্তত প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে তাঁদের বৈঠকের পরে আলাদা আলাদা ভাবে দু’দলের নেতারা যা বলেছেন, এটাই তার নির্যাস। বাংলার উন্নয়নের প্রশ্নে দুই শরিক দলের প্রতিনিধিদেরই প্রধানমন্ত্রী ‘আশ্বাস’ দিয়েছেন। দু’দলের নেতারাই জানিয়েছেন, প্রধানমন্ত্রীর আশা, ‘বেঙ্গল উইল সি নিউ ডে’জ’। বাংলা নতুন দিন দেখবে। বিধানচন্দ্র রায়ের গৌরবময় যুগে বাংলাকে আবার নিয়ে যেতে হবে। কংগ্রেসের প্রদীপ ভট্টাচার্য-শাকিল-মানস ভুঁইয়া বা তৃণমূলের সৌগত রায়-পার্থ চট্টোপাধ্যায়রা রাজভবনের বাইরে এসে প্রায় একই সুরে জানান, প্রধানমন্ত্রী তাঁদের
আশ্বাস দিয়েছেন, বাংলার উন্নয়নে কেন্দ্রের সহযোগিতার অভাব হবে না। সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতার মধ্যে থেকে বাংলার উন্নয়নে কেন্দ্র সাহায্য করবে।
এই ‘ঐক্যের’ পরিমণ্ডলে একটু ‘বেসুর’ অবশ্য বেজেছে। এবং প্রত্যাশিত ভাবেই তা হয়েছে রায়গঞ্জের কংগ্রেস সাংসদ দীপা দাশমুন্সির তরফে। কংগ্রেস সূত্রের খবর, কেন্দ্রীয় সরকারের আর্থিক সহযোগিতার বিষয়টিকে সমর্থন জানিয়েও দীপা তৃণমূলের নাম না-করে প্রধানমন্ত্রীর কাছে অভিযোগ করেছেন, এ সবের পরেও কোথাও কোথাও কংগ্রেসকর্মীদের উপর হামলার ঘটনা ঘটেছে। বৈঠকের পরে শাকিলও জানান, দীপা ওই ‘সমস্যা’র কথা বলেছেন। তবে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি প্রদীপবাবু বলেন, “এই সমস্যার কথা প্রধানমন্ত্রী বা সনিয়া গাঁধীর কাছে বলে কী লাভ! আমাদেরই রাজনৈতিক ভাবে এর মোকাবিলা করতে হবে। আমি প্রধানমন্ত্রীকে বলেছি, কংগ্রেস এখানে শক্তিশালী হবে। তবে একটু সময় লাগবে!”
প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে দুই শরিকই ‘সন্তুষ্ট’। মমতার নেতৃত্বে তৃণমূলের প্রতিনিধি দলে পার্থবাবু, সৌগতবাবু ছাড়াও রেলমন্ত্রী দীনেশ ত্রিবেদী, কেন্দ্রীয় মন্ত্রী মুকুল রায়, সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়, সুলতান আহমেদ, সিএম জাটুয়া, রাজ্যের মন্ত্রী ব্রাত্য বসু, রচপাল সিংহ, মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়রা ছিলেন। রাজ্যের উন্নয়নের জন্য আর্থিক সাহায্যের আর্জি জানিয়ে তাঁরা প্রধানমন্ত্রীর কাছে স্মারকলিপি দিয়েছেন জানিয়ে পার্থবাবু বলেন, “রাজ্য ৩৪ বছরের বাম শাসনের অবসান ঘটানোর জন্য প্রধানমন্ত্রী আমাদের দলনেত্রীকে অভিনন্দন জানিয়েছেন। আমরা তাঁকে জানিয়েছি, ৩৪ বছরের বামশাসনে অর্থনৈতিক দিক থেকে তো বটেই, সর্ব ক্ষেত্রে রাজ্যের অবস্থা বেহাল। আমরা বাংলাকে নতুন করে গড়তে চাই। আপনি সহযোগিতা করুন।” সৌগতবাবু বলেন, “প্রধানমন্ত্রীও বলেন, বাংলাকে পুরনো গৌরব ফিরিয়ে দিতে কেন্দ্র সমস্ত রকম সহযোগিতা করবে।”
কংগ্রেসের মানসবাবু-প্রদীপবাবুরাও বলেন, “২১ হাজার কোটি টাকার প্যাকেজ ঘোষণার জন্য প্রধানমন্ত্রীকে আন্তরিক অভিনন্দন জানিয়েছি।” রাজ্যের সাত কংগ্রেস মন্ত্রী, বিধায়ক ও সাংসদ মৌসম বেনজির নূর, কংগ্রেস পরিষদীয় দলনেতা মহম্মদ সোহরাব, প্রদেশ কংগ্রেসের বিভিন্ন পদাধিকারীরাও রাজভবনে গিয়েছিলেন। রাজ্যের বন্যা ও ভাঙন রোধে কেন্দ্রীয় সরকারকে অবিলম্বে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য সেচমন্ত্রী মানসবাবু অনুরোধ জানান। বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্যের শূন্যপদে অবিলম্বে নিয়োগ ও সেখানকার শিক্ষকদের স্বার্থরক্ষার বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেন প্রদেশ কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক অমিতাভ চক্রবর্তী।
এ দিন রাজভবনের উত্তর গেটে বিক্ষোভ দেখায় ফরওয়ার্ড ব্লকের যুব ও ছাত্র শাখা। সন্ধ্যা ৭টা ৪০ মিনিটে রাজভবনের দক্ষিণ গেট দিয়ে ঢোকে প্রধানমন্ত্রী ও মুখ্যমন্ত্রীর কনভয়। সম্পূর্ণ উল্টো দিকে তখন পাঁচ মিনিটের জন্য বিক্ষোভ হয়। বিক্ষোভকারীদের হাতে ছিল বিভিন্ন দুর্নীতি-বিরোধী স্লোগান লেখা প্ল্যাকার্ড। তারা ‘মনমোহন সিংহ গো ব্যাক’ স্লোগানও দেয়। বিক্ষোভকারীদের পুলিস হটিয়ে দেয়। প্রসঙ্গত, আজ, সোমবারই কলকাতা ছাড়ছেন প্রধানমন্ত্রী। খড়্গপুর আইআইটি-তে একটি কর্মসূচিতে যোগ দিয়ে কলাইকুন্ডা থেকে বিশেষ বিমানে দিল্লি ফিরবেন প্রধানমন্ত্রী। তাঁর সঙ্গেই ফেরার কথা প্রণববাবুরও। সকালে বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্রের নেতৃত্বে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করবে বামফ্রন্টের এক প্রতিনিধি দল। ইউপিএ-র জোটসঙ্গী তৃণমূলের বিরুদ্ধে ‘সন্ত্রাসের’ অভিযোগ জানাবে তারা। অভিযোগ জানানোর সম্ভাবনা মুখ্যমন্ত্রী মমতার ওই বিষয়ে ‘নির্বিকার’ মনোভাব নিয়েও। |
|
|
|
|
|