মমতার সামনেই পরমাণু বিদ্যুৎ নিয়ে জোর সওয়াল প্রধানমন্ত্রীর
বার পরমাণু বিদ্যুতের পক্ষে সওয়াল করলেন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ। এবং করলেন এমন একটা সময়ে, যখন তাঁর সঙ্গে একই মঞ্চে উপস্থিত রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ঘটনাচক্রে, কিছু দিন আগে যাঁর সরকারের বিদ্যুৎমন্ত্রী বিধানসভায় বিবৃতি দিয়ে জানিয়ে দিয়েছেন, হরিপুর তো নয়-ই, এ রাজ্যের কোথাও পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্র হবে না!
তার আগে পর্যন্ত রাজ্যের হরিপুরে পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্র নিয়ে একটা পর্যায়ে আলাপ আলোচনা চলছিল। যদিও স্থানীয় স্তরে তৃণমূল দলীয় সাংসদ শুভেন্দু অধিকারীর নেতৃত্বে তখনই বিষয়টির বিরোধিতা করেছিল। যে বিরোধিতা ছিল মূলত পরিবেশের কারণে। এলাকার মৎস্যজীবী ও কৃষিজীবীদের ‘স্বার্থরক্ষা’ও ছিল আন্দোলনের অন্যতম কারণ।
কলকাতা বিমানবন্দরে প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানান মুখ্যমন্ত্রী।
সঙ্গে ছিলেন রাজ্যপাল এম কে নারায়ণন। ছবি দেশকল্যাণ চৌধুরী
এ দিন ‘সাহা ইনস্টিটিউট অফ নিউক্লিয়ার ফিজিক্স’-এর হীরক জয়ন্তী বর্ষের সমাপ্তি অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী অবশ্য সরাসরিই বলেন, “পরমাণু বিদ্যুতের মতো পরিবেশ বান্ধব বিদ্যুৎ যে দেশের প্রগতির পথে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, সে ব্যাপারে আমি নিশ্চিত। এখন আমরা পরমাণু বিদ্যুতের বিস্তার ঘটানোর চেষ্টা করছি। তবে এ ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ সুরক্ষার বন্দোবস্ত রাখা জরুরি। সুরক্ষার ক্ষেত্রে কোনও আপস চলবে না।” পরমাণু বিদ্যুৎ প্রকল্পগুলির ‘সুরক্ষা ব্যবস্থা’ আরও ‘নিশ্ছিদ্র’ করতে ‘সাহা ইনস্টিটিউট অফ নিউক্লিয়ার ফিজিক্স’ এবং এর মতোই অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞানীদের কাছে আর্জি জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। তবে হরিপুরের পরমাণু বিদ্যুৎ প্রকল্পে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের সায় না দেওয়ার ব্যাপারে কোনও মন্তব্য প্রধানমন্ত্রী করেননি। কেন্দ্রটি অন্য কোথাও সরিয়ে নেওয়ার কথা কেন্দ্র ভাবছে কি না, তারও উল্লেখ করেননি।
তথ্য বলছে, ২০০৯ সালের শেষ দিকে প্রধানমন্ত্রীর রাশিয়া সফরের সময় হরিপুরের প্রস্তাবিত পরমাণু বিদ্যুৎ প্রকল্পে সরকারি সিলমোহর পড়েছিল। রাশিয়ার সঙ্গে পাঁচটি পরমাণু বিদ্যুৎ প্রকল্প গড়ার বিষয়ে চুক্তি হয়েছিল। তার অন্যতম ছিল পশ্চিমবঙ্গের হরিপুর। দ্বাদশ পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনায় মোট ছ’টি পরমাণু চুল্লি স্থাপন করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এর মধ্যে ছিল হরিপুরের প্রথম পর্বের দু’টি চুল্লি এবং তামিলনাড়ুর কুড়ানকুলামের চারটি।
কুড়ানকুলামে দু’টি চুল্লির কাজ আপাতত প্রায় শেষের দিকে। এই লক্ষ্যে গোরক্ষপুরে প্রয়োজনীয় ‘ভারী জল’ উৎপাদনের কাজও চলছে দ্রুত গতিতে। বস্তুত, ‘রোশ্যাটম’ নামে একটি রাশিয়ার একটি সংস্থাকে হরিপুরে হাজার মেগাওয়াটের ইউনিট-সহ একটি নিউক্লিয়ার পার্ক তৈরির বরাতও কেন্দ্রীয় সরকার ইতিমধ্যেই দিয়ে দিয়েছে।
তবে যে কোনও প্রকল্পের জন্যই বিপুল পরিমাণ জমি অধিগ্রহণ ‘রাজনৈতিক’ ভাবে যে এ রাজ্যের সব চেয়ে স্পর্শকাতর বিষয়, তা সম্যক উপলব্ধি করেই ‘রোশ্যাটম’ হরিপুর থেকে ওই প্রকল্প সরানোর জন্য বিভিন্ন মহলে দরবার শুরু করে। তারা চাইছিল, প্রকল্পটি প্রতিবেশী রাজ্য ওড়িশায় সরিয়ে নেওয়া হোক। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর সচিবালয় থেকে শুরু করে অ্যাটমিক এনার্জি কমিশন সকলেই সে প্রস্তাব খারিজ করে দেয়।
সাহা ইনস্টিটিউট অফ নিউক্লিয়ার ফিজিক্স-এর হীরকজয়ন্তী বর্ষের
সমাপ্তি অনুষ্ঠানে। রবিবার সন্ধ্যায়। ছবি সুমন বল্লভ
কিন্তু রাজ্য বিধানসভার চলতি অধিবেশনে বিদ্যুৎমন্ত্রী মণীশ গুপ্তের বিবৃতিতে এই সংক্রান্ত সব জল্পনারই অবসান ঘটেছে। মণীশবাবু জানিয়ে দিয়েছেন, রাজ্য সরকার হরিপুরের প্রস্তাবিত পরমাণু বিদ্যুৎ প্রকল্প ‘খারিজ’ করে দিয়েছে। গত বুধবার মণীশবাবু বিধানসভায় আরও জানিয়েছিলেন, সরকার রাজ্যের কোথাও কোনও পরমাণু বিদ্যুৎ প্রকল্প স্থাপন করতে দেবে না! এক বাম বিধায়কের প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে বিদ্যুৎমন্ত্রী বিগত বাম সরকারের বিরুদ্ধে আক্রমণ শানিয়ে বলেছিলেন, “বামফ্রন্ট সরকার মানুষকে ভুল বুঝিয়ে হরিপুরে পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্র তৈরির চেষ্টা করেছিল!” এর পরে হরিপুরের বিকল্প খুঁজতে তৎপর হয়েছে দিল্লি।
এ দিন শুধু মমতাই নন, কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী প্রণব মুখোপাধ্যায়, পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপাল এম কে নারায়ণন এবং কেন্দ্রীয় পরমাণু শক্তি কমিশনের চেয়ারম্যান শ্রীকুমার বন্দ্যোপাধ্যায়ের সামনেই এই কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। তাঁর আগে মমতা বক্তৃতা করেন। যদিও নিজের বক্তব্যে মমতা হরিপুরের পরমাণু বিদ্যুৎ প্রকল্প সম্পর্কে কোনও মন্তব্য করেননি। মনমোহন যখন পরমাণু বিদ্যুৎ প্রসঙ্গে সওয়াল করলেন, তখনও মমতার মধ্যে বিশেষ ‘ভাবান্তর’ লক্ষ করা যায়নি।
প্রসঙ্গত, ক্ষমতায় এলে ওই প্রকল্প খারিজ করার কোনও কথা ভোটের আগে তৃণমূল বলেনি। তবে নির্বাচনী ইস্তেহারে রাজ্যের বিদ্যুৎ উৎপাদনের পরিমাণ বৃদ্ধির জন্য যে যে ক্ষেত্র বাছাই করে নতুন সরকারের রূপরেখা তৈরির কথা বলা হয়েছিল, সেগুলি হল জল, কয়লা, প্রাকৃতিক গ্যাস, কয়লাজাত মিথেন, বায়ু, স্রোত নির্ভর (টাইডাল) এবং সৌর বিদ্যুৎ। পরমাণু বিদ্যুতের কথা ভাবা হয়নি। ‘নিউক্লিয়ার পাওয়ার কর্পোরেশন অফ ইন্ডিয়ার’ (এনপিসিআই) এই প্রকল্পটি ১০০ ভাগ কেন্দ্রীয় প্রকল্প।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.