|
|
|
|
|
|
|
নিজের ক্ষমতাকে ছোট করে দেখো না |
স্বয়ং গাঁধীজির হাতের লেখা না কি তেমন ভাল ছিল না! হাতের লেখা খারাপ হলে
হাল ছাড়ার কিছু নেই। বরং কয়েকটি অনুশীলন ও পদ্ধতির সাহায্যে লেখার মান
কিছুটা বাড়ানো সম্ভব। পরামর্শ দিচ্ছেন মন-চিকিৎসক শ্রীমন্তী চৌধুরি |
|
আমার বয়স ১৯ বছর। একটা বিশেষ সমস্যায় পড়ে চিঠিটা লিখছি। গত তিন চার বছর ধরে আমার পরীক্ষা প্রত্যাশা মতো হচ্ছে না। তার প্রধান কারণ আমার মন্থর ও খারাপ হাতের লেখা। হাতের লেখা পরিষ্কার এবং দ্রুত করার জন্য আমি প্রচুর চেষ্টা করেছি। সমস্যার সমাধান হয়নি, বরং বেড়ে গিয়েছে। খারাপ হাতের লেখার জন্য টিউশন পড়ার সময় বা কলেজে ক্লাস করার সময় নিজেকে খুব খারাপ মনে হয়। অন্য কারোর সামনে লিখতে পারি না। এখন এমন অবস্থা হয়েছে যে লিখতে গেলেই ভয় করে। একটা একটা সময়ে এমন যায় যে আমার মনে হয়ে যে আমি কিছুই লিখতে জানি না। যখন অন্য কাউকে দ্রুত ও সুন্দর করে লিখতে দেখি তখন আরও বেশি হীনম্মন্যতায় ভুগি।
সমস্যা শুরু হয় নবম শ্রেণি থেকে। হাতের লেখা খুব মন্থর হওয়ায় পরীক্ষা ঠিক মতো শেষ করতে পারতাম না। ভাবতাম যখন উঁচু ক্লাসে উঠব তখন সব ঠিক হয়ে যাবে। তা হল না, বরং সমস্যা আরও প্রকট হল। গত দু’বছরে সমস্যাটা আরও গুরুতর হয়ে গিয়েছে। পরীক্ষার সময় মনে হয় পরীক্ষা না দিয়েই চলে আসি। হাতের লেখা খারাপ এবং ধীর হওয়ার জন্য পেন খারাপ, খাতার পৃষ্ঠা খারাপ ছিল বলে অজুহাত দিতে থাকি। ভাবি ওই পেনটা দিয়ে লিখলে হয়তো ভাল লেখা হবে। এই রকম খাতা থাকলে সমস্যার সমাধান হবে। আমার এই সমস্যার কথা কাউকে বলতে পারি না। আর বেশি দিন এই রকম চললে আমি উচ্চশিক্ষা করতে পারব না। আগে যখন বাংলায় পরীক্ষা দিতাম তখন ভাবতাম ইংরেজিতে আমার হাতের লেখা ভাল, ইংরেজিতে লিখলেই ভাল হবে। কিন্তু ইংরেজিতে লিখতে গিয়েও দেখলাম অবস্থার কোনও পরিবর্তন হয়নি। আমার আত্মবিশ্বাস একেবারে তলানিতে ঠেকেছে। কী ভাবে এই সমস্যার সমাধান করতে পারি?
শেখ ইসরাফিল, আত্মারামপুর। |
|
তোমাকে বলছি |
প্রথম কথা হল: চিঠিটি কি তুমি নিজে লিখেছ? যদি লিখে থাক সে ক্ষেত্রে আমি বলব তোমার হস্তাক্ষর সর্ম্পূণ সুবিন্যস্ত। শতকরা ৯৮ শতাংশ অক্ষর পড়া যাচ্ছে। প্রায় নির্ভুল বানান এবং সুগঠিত বক্তব্য। তা হলে আমাদের হতাশার ও হীনম্মন্যতার অন্য কারণ খুঁজতে হবে। তবে চিঠি যদি অন্য কেউ লিখে দিয়ে থাকে তা হলে অন্য কথা।
তুমি লিখেছ যে তোমার সমস্যা নবম শ্রেণি থেকে শুরু হয়েছে। হয়তো নবম শ্রেণি থেকে পড়াশোনার চাপ বেড়েছিল বলেই মনের ওপর চাপও অনেকাংশে বেড়ে গিয়েছিল। চট করে লেখা না শুরু করে, উত্তরটা একটু নিজের মধ্যে গুছিয়ে নিয়ে লিখতে শুরু করে দেখতে পারো। তাতে লেখার গতি বাড়তে পারে। যথেষ্ট জায়গা নিয়ে, বড় বড় অক্ষরে ফাঁক ফাঁক করে লিখে দেখ, পারলে ডবল স্পেসিং দূরত্বে লেখ। উত্তরপত্রের দু’পাশেও যথেষ্ট জায়গা রাখো। এতে গতির সুরাহা না হলেও, যতটুকু লিখছ সেটা পরীক্ষকের বুঝতে সুবিধে হয়। পয়েন্ট ও অনুচ্ছেদ-এর সংখ্যা বাড়াও। যে সব ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ বাক্য না লিখলেও চলে, সেখানে বুলেট পয়েন্ট ব্যবহার করো।
কাগজ এবং কলমের যে অজুহাতের কথা তুমি লিখেছ তা কিন্তু আসলে ততটা অজুহাত নয়। আজকাল কালির কলমে খুব কম মানুষই লেখেন। কিন্তু বল-পেনও খুব সাহায্যকারী নয়। বরং ‘জেল’ কলম কিছুটা ভাল। কারণ জেল কলমের তরলতা ও তার নিব-এর নমনীয়তা আঙুলের সূক্ষ্ম পেশির সঞ্চালনকে সুবিধা দিতে পারে। যে কোনও আকৃতি বা ওজনের কলম ব্যবহার না করাই ভাল। ন্যায্য দামে ভাল ‘গ্রিপ’ ও ‘সেন্টার অব গ্র্যাভিটি’ যুক্ত কলম ব্যবহার করো। এবং বিভিন্ন কলম পরখ করে, যে-কোনও একটি ধরনের কলম নির্বাচন করো। |
|
ছবি: ওঙ্কারনাথ ভট্টাচার্য |
হাতের ছোট্ট ও সূক্ষ্ম পেশির সাবলীলতা অনেকাংশে নির্ভর করে রোজকার এক্সসারসাইজের ওপর। তোমার পক্ষে কাঁধের থেকে আঙুল পর্যন্ত অনুশীলন (এক্সারসাইজ) করা দরকার। লেখার সময় হাতের আরামদায়ক অবস্থানের জন্য সর্বদা টেবিল-চেয়ার ব্যবহার করো। হাতের লেখা রোজ অভ্যেস করাও দরকার, উপরোক্ত পদ্ধতিগুলো মাথায় রেখে। হাতের লেখা সোজা লাইনে না গেলে রুল টানা কাগজে লিখতে হবে। অক্ষরগুলো লেখার আগে মনে মনে চিন্তা করে অর্থাৎ ‘ভিস্যুয়ালাইজ’ করে লেখার অভ্যেস করো, অন্তত বাড়িতে লেখার সময়। পরীক্ষার শেষে রিভিশনের জন্য সময় রাখো, কেবল নিজের লেখা আর এক বার পড়ে নেওয়ার জন্য। দেখবে, এতে কিছু নম্বর বাড়বেই।
এ বার আসি হীনম্মন্যতা, লেখার ভয় ইত্যাদি মানসিক কষ্টের জায়গায়। মনের এই অবস্থায় বিষাদগ্রস্ততা, দুশ্চিন্তা স্বাভাবিক। মুশকিল হল, দুশ্চিন্তা বা উদ্বেগ মনঃসংযোগের ক্ষমতাটাও কমিয়ে দিতে পারে, লেখার কাজটা আরও কঠিন হয়ে যেতে পারে। তাই, নিজের মানসিক পরিস্থিতি বুঝে কোনও মন-চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলা ভাল। কানে শোনার সমস্যা, বা মনঃসংযোগ/অতি-চঞ্চলতার সমস্যা (এ ডি ডি/ এ ডি এইচ ডি), বা অন্য কোনও পঠনপাঠন-জনিত সমস্যা (স্পেসিফিক লার্নিং ডিসেবিলিটি) ছোটবেলায় ছিল কি না, সব কিছুই তাঁকে জানিয়ো। পরিবারে ঘনিষ্ঠ কারও এ ধরনের সমস্যা থাকলে ডাক্তারকে তা জানাতে ভুলো না। আর একটা কথা। নিজের ক্ষমতাকে ছোট করে দেখো না। আজ পর্যন্ত যা সাফল্য এসেছে, তা তো বেশির ভাগ সু-হস্তাক্ষরসম্পন্ন লোকদের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করেই পেয়েছ। সেটাই বা কম কী। নেলসন ম্যান্ডেলা ও মহাত্মা গাঁধীর হাতের লেখার পার্থক্যের কথাটাই ভাবো। ম্যান্ডেলার হাতের লেখা ছাপার অক্ষরকেও হার মানায়। উল্টো দিকে গাঁধীজির হাতের লেখা আবার ততটা সুন্দর নয়। তাতে কি গাঁধীজির খুব কিছু ক্ষতি হয়েছে? |
|
ছেলেমেয়েকে নিয়ে মা-বাবার সমস্যা? নাকি মা-বাবাকে নিয়ে ছেলেমেয়ের সমস্যা? পড়ার খরচ
নিয়ে অভিভাবকের দুশ্চিন্তা? দূরের শহরে পড়তে যাওয়ার নামে মেয়ের গায়ে জ্বর আসা? যে
মুশকিলই হোক না কেন, পরিবারের সবাই মিলেই সমাধানে পৌঁছতে হবে। এ বার থেকে
‘প্রস্তুতি’-ও কথা বলবে গোটা পরিবারের সঙ্গেই। অভিভাবকদের বা সন্তানের যে কোনও দুশ্চিন্তার
কথা আমাদের জানান (এবং জানাও) নিজেদের সমস্যা। সুচিন্তিত উত্তর দেবেন বিশেষজ্ঞরা।
ইমেল: prastuti@abp.in বিষয়: Haate Haat।
অথবা, চিঠি পাঠান (এবং পাঠাও) এই ঠিকানায়:
হাতে হাত, প্রস্তুতি,
আনন্দবাজার পত্রিকা,
এ বি পি প্রাঃ লিঃ,
৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট,
কলকাতা ৭০০ ০০১ |
|
|
|
|
|
|