ওভালে সারাদিন শুধু দ্রাবিড় বনাম ইংল্যান্ড
ণে-বনে,জলে-জঙ্গলে...ইডেন-সিডনি কিংবা লন্ডনে, যেখানে বিপদে পড়িবে, আমাকে স্মরণ করিবে....আমি তোমাদের রক্ষা করিব।
তিনি রক্ষাকর্তা, তিনি পরিত্রাতা, তিনি নীলকন্ঠ—একাই যিনি গ্রহণ করতে পারেন বিপক্ষের উগরে দেওয়া বিষ। এই কাহিনির শুরু আজ নয়। পনেরো বছর আগে কেরিয়ারের শুরু থেকে উপেক্ষিত নায়ক এবং ক্রিকেটজীবনের সায়াহ্নে এসেও সেই একই ভূমিকায় অভিনয় করে যেতে হচ্ছে রাহুল শরদ দ্রাবিড়কে। চিনের প্রাচীরেও ছোটখাটো ফাটল দেখা দিয়েছে বলে ইন্টারনেটে খবর, কিন্তু দ্রাবিড়ের ব্যাটে গত পনেরো বছর ধরে ফাটল ধরেনি। অন্তত দেশের বিপদের সময় ধরেনি। টিম মাঝসমুদ্রে খাবি খাচ্ছে, জাহাজকে ধীরে সুস্থে তিরে পৌঁছতে হবে? কে পৌঁছবেন? না দ্রাবিড়। ওপেন করে টানা দেড় দিন ব্যাট করার পরেও টিম ফলোঅন করেছে দেখে আবার নামতে হবে? কে নামবে? না দ্রাবিড়। গ্রেম সোয়ানের বলে শর্ট লেগ প্যাডে লাগা বল থেকে ক্যাচের আবেদন করে আম্পায়ার টাকারকে দিয়ে আঙুল তুলিয়ে নেবে? সঙ্গে সঙ্গে কে কালবিলম্ব না ভেবে রিভিউয়ের আবেদন করবেন? যথারীতি সেই রাহুল দ্রাবিড়! ওভালেও তো সারাদিন শুধুই দ্রাবিড় বনাম ইংল্যান্ড।
বীরকে আলিঙ্গন। রবিবার ওভালে রাহুল-অমিত।
প্রথম ইনিংসের ওই অতিমানবিক ১৪৬ নট আউটের পরে ম্যাচ বাঁচানোর যুদ্ধে সহবাগের সঙ্গে ফের তাঁর চেহারাটাই বেরিয়েছিল ড্রেসিংরুম থেকে। সেই প্রতিজ্ঞাবদ্ধ মুখ, সেই ইস্পাতকঠিন স্নায়ু এবং সময়কে আটকে রেখে দেওয়া একাগ্রতা। গাওস্করকে টপকে টেস্টে ৩৫ তম সেঞ্চুরি হয়ে গেল কে বলবে? স্বয়ং গাওস্কর বলে ফেললেন, “টিমের কঠিনতম সময়ে আসা এই সেঞ্চুরিটা আমার দেখা ওর সেঞ্চুরিগুলোর মধ্যে অন্যতম সেরা।” কিন্তু ম্যাচ বাঁচানোর যুদ্ধে তাঁকে দ্বিতীয় ইনিংসে হারতে হল। ১৩ করার পরে সোয়ানের বলে শর্ট লেগের হাতে বন্দি। আম্পায়ার আউট দেননি, এ বার রিভিউ চাইলেন স্ট্রস। রিভিউয়ের সিদ্ধান্ত গেল ইংল্যান্ডের পক্ষে। অথচ হটস্পট দেখে বোঝা যায়নি বল রাহুলের ব্যাটে লেগেছিল কি না। গাওস্করের মতো ব্যক্তিত্ব বলছেন, “হটস্পটে কিছুই ধরা পড়েনি। প্রযুক্তি যদি ১০০ শতাংশ ঠিক না হয়, তা হলে ওই প্রযুক্তি রাখার কী দরকার?”
সেঞ্চুরি করে শুধু একবার মুষ্টিবদ্ধ হাত, তার পরে ফের পরের বলের জন্য তৈরি হওয়া। সঙ্গীর অভাবে নিশ্চিত ডাবল সেঞ্চুরিটা হল না, কিন্তু দ্বিতীয় ইনিংসেও শুরু করলেন যেখানে শেষ করেছিলেন সেখান থেকেই। ততক্ষণে নাসের হুসেন বলছেন, “টেস্ট ব্যাটিংয়ের জন্য রাহুল দ্রাবিড়ের চেয়ে বড় বিজ্ঞাপন হয় না।” সত্যিই হয় না। গত তিনটে টেস্টের মতো এই টেস্টেও ম্যাচ বাঁচানোর যুদ্ধে নেমে পড়তে হয়েছে ভারতকে, স্ট্রস লেলিয়ে দিয়েছেন তিন পেসার এবং দুরন্ত নিয়ন্ত্রণে থাকা গ্রেম সোয়ানকে। উল্টোদিকে যথারীতি গণবিপর্যয়, ০-৪ থেকে টিমকে বাঁচানোর পাহাড়প্রমাণ চাপ সামলে ম্যাচ ড্র রেখে দেওয়ার গুরুদায়িত্ব কাঁধে বাইশ গজে দ্রাবিড়। ভারত ম্যাচ ড্র রাখুক বা হেরে যাক, ইংল্যান্ডে জীবনের শেষ সিরিজের পর ‘দ্রাবিড়িজম’ নামে নতুন কোনও শব্দ অক্সফোর্ড ডিকশনারিতে ঢুকে পড়লে কেউ প্রতিবাদী হবেন বলে মনে হয় না। সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় যেমন বলে দিচ্ছেন, “টেস্ট ব্যাটিং কাকে বলে কেউ জানতে চাইলে রাহুলের এই ইনিংসটা সবচেয়ে ভাল টেক্সটবুক হতে পারে।”
মাথা হেঁট। ফিরছেন ধোনি। রবিবার।
১০৩-৫ থেকে শুরু হয়েছিল ভারতীয় ইনিংস। ধোনি ছাড়া বিশেষজ্ঞ ব্যাট বলতে ছিলেন আহত গম্ভীর। নয় নম্বরে নেমে গম্ভীরের অবদান ১০। আর পি সিংহ (২৫) সামান্য চেষ্টা করেছিলেন, কিন্তু তা ফলোঅন বাঁচাতে রাহুলকে সাহায্য করার মতো যথেষ্ট ছিল না। ১৪৬ নট আউট করে ফিরছেন, স্ট্রসের টিমের প্রায় সবাই হাত মেলাচ্ছিলেন তাঁর সঙ্গে। রবিবারের দুপুরে ওভাল তখন দাঁড়িয়ে উঠে সম্মান জানাচ্ছিল দ্রাবিড়কে। অসহায়তা সেই তাড়াই করল তাঁকে। ইংল্যান্ডে জীবনের শেষ টেস্ট ইনিংসে ঠিকঠাক বিচার বোধহয় আম্পায়ারের কাছ থেকে দ্রাবিড় পেলেন না।

সেঞ্চুরির সিরিজ
• সুনীল গাওস্কর সেঞ্চুরি-৪ (৪ টেস্ট) বনাম ওয়েস্ট ইন্ডিজ (’৭০-৭১)
• মহম্মদ আজহারউদ্দিন সেঞ্চুরি-৩ (৩ টেস্ট) বনাম ইংল্যান্ড (’৮৪-৮৫)
• রাহুল দ্রাবিড় সেঞ্চুরি-৩ (৪ টেস্ট) বনাম ইংল্যান্ড (২০০২)
• রাহুল দ্রাবিড় সেঞ্চুরি-৩ (৪ টেস্ট) বনাম ইংল্যান্ড (২০১১)
• সুনীল গাওস্কর সেঞ্চুরি-৩ (৫ টেস্ট) বনাম অস্ট্রেলিয়া (’৭৭-৭৮)
• পলি উমরিগড় সেঞ্চুরি-৩ (৫ টেস্ট) বনাম পাকিস্তান (’৬০-৬১)
• দিলীপ সরদেশাই সেঞ্চুরি-৩ (৫ টেস্ট) বনাম ওয়েস্ট ইন্ডিজ (’৭০-৭১)
• সুনীল গাওস্কর সেঞ্চুরি-৩ (৬ টেস্ট) বনাম ওয়েস্ট ইন্ডিজ (’৭৮-৭৯)


ওভালের স্কোর

ইংল্যান্ড
প্রথম ইনিংস ৫৯১-৬ ডিঃ


ভারত
প্রথম ইনিংস (আগের দিন ১০৩-৫)


দ্রাবিড় ন.আ. ১৪৬
ধোনি ক প্রায়র বো অ্যান্ডারসন ১৭
অমিত ক বেল বো ব্রেসনান ৪৩
গম্ভীর ক পিটারসেন বো ব্রড ১০
রুদ্রপ্রতাপ ক অ্যান্ডারসন বো ব্রেসনান ২৫
শ্রীসন্থ ক মর্গ্যান বো ব্রেসনান ০
অতিরিক্ত ২৫
মোট ৩০০।
পতন: ৮, ১৩, ৬৮, ৯৩, ৯৫, ১৩৭, ২২৪, ২৬৪, ৩০০।
বোলিং: অ্যান্ডারসন ১৬-৭-৪৯-২, ব্রড ২১-৩-৫১-২, ব্রেসনান ১৭-৩-৫৪-৩,
সোয়ান ৩১-৫-১০২-৩, পিটারসেন ৭-১-২৭-০, বোপারা ২-২-০-০।

ভারত
দ্বিতীয় ইনিংস

সহবাগ বো সোয়ান ৩৩
দ্রাবিড় ক কুক বো সোয়ান ১৩
লক্ষ্মণ বো অ্যান্ডারসন ২৪
সচিন ব্যাটিং ৩৫
অমিত ব্যাটিং ৮
অতিরিক্ত ১৬
মোট ১২৯-৩।
পতন: ৪৯, ৬৪, ১১৮।
বোলিং: অ্যান্ডারসন ৯-২-৩৯-১, ব্রড ৬-৩-৮-০,
সোয়ান ১৫-২-৫১-২, ব্রেসনান ৫-০-১৫-০।

ছবি এ এফ পি



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.