খড়্গপুরেই পিএমও, সরলো হেলিপ্যাড
মাওবাদী অধ্যুষিত পশ্চিম মেদিনীপুর জেলায় প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহের সফরে নিরাপত্তার সামান্যতম ঝুঁকিও নিতে রাজি নয় জেলা পুলিশ ও এসপিজি। তাই, মহড়ার সময়ে খড়্গপুর আইআইটি-র জ্ঞান ঘোষ স্টেডিয়ামের হেলিপ্যাডের সামান্য কয়েকটি ইট ভেঙে যাওয়াতেই বদলে ফেলা হয়েছে প্রধানমন্ত্রীর হেলিকপ্টার নামাওঠার স্থানটিই। আইআইটিতেই কয়েক ঘণ্টার জন্য তৈরি হচ্ছে পিএমও বা প্রধানমন্ত্রীর দফতর।
আজ, সোমবার আইআইটি-র ৫৭তম সমাবর্তনে হীরক-জয়ন্তী বর্ষের সূচনার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে মনমোহন সিংহকে। আর তাঁর নিরাপত্তার ব্যবস্থা করতে গিয়ে কালঘাম ছুটে গিয়েছে জেলা প্রশাসন এবং প্রতিষ্ঠানের কর্তাব্যক্তিদের। সোমবারে সমাবর্তন অনুষ্ঠান বিশ্ব জুড়ে সরাসরি সম্প্রচারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষ। আইআইটি-র রেজিস্ট্রার তপন ঘোষাল রবিবার বলেন, “সোমবার যে সময়ে সমাবর্তন চলবে, সেই সময়ে বিশ্বের যে কোনও প্রান্তে বসে ইন্টারনেটে ওই অনুষ্ঠানের সরাসরি সম্প্রচার দেখা যাবে। হীরকজয়ন্তী বর্ষ উদযাপনের সূচনা উপলক্ষে এই প্রথম এই সরাসরি সম্প্রচারের ব্যবস্থা করছে আইআইটি।”
প্রধানমন্ত্রীর সফরকে কেন্দ্র করে শুক্রবার থেকে শুরু হয়ে গিয়েছে মহড়া। নিরাপত্তার বিষয়টি দেখভালের জন্য এসপিজি-র ডিআইজি পঙ্কজ কুমার গত পাঁচ দিন ধরে শিবির করে রয়েছেন খড়্গপুরে। রাজ্য পুলিশের আইজি পশ্চিমাঞ্চল জুলফিকার হাসানও নিরাপত্তার বিষয়টি দেখভাল করছেন। কখনও হেলিকপ্টার নামা-ওঠা করছে আইআইটি-র ভিতরের হেলিপ্যাড থেকে। কখনও সেই হেলিপ্যাড থেকে গাড়ির কনভয় ছুটে যাচ্ছে অনুষ্ঠানস্থল পর্যন্ত। ঠিক হয়েছিল, আইআইটি চৌহদ্দির মধ্যে জ্ঞান ঘোষ স্টেডিয়ামের মাঠে নামবেন প্রধানমন্ত্রী ও তাঁর সঙ্গীরা। পর পর নেমে আসবে তিনটি হেলিকপ্টার।
খড়্গপুর আইআইটিতে তৈরি অস্থায়ী হেলিপ্যাডে প্রধানমন্ত্রী
আসার আগে চলছে তল্লাশি। রবিবার। ছবি: রামপ্রসাদ সাউ।
শনিবার মহড়া চলাকালীন বায়ুসেনার একটি হেলিকপ্টার ওই হেলিপ্যাডে নামার সময়ে বেশ কয়েকটি ইট ভেঙে যায়। সঙ্গে সঙ্গে জেলা প্রশাসনের তরফে তা মেরামত করে দেওয়া হয়। কিন্তু বিগড়ে যান এসপিজি অফিসারেরা। তাঁরা কিছুতেই ওই হেলিপ্যাডে প্রধানমন্ত্রীর হেলিপকপ্টার নামার ঝুঁকি নিতে রাজি হননি। বিকল্প ব্যবস্থা হিসেবে একসময় ভাবা হয়েছিল, কলকাতা থেকে উড়ে এসে আইআইটি-র কাছেই কলাইকুন্ডায় বায়ুসেনার ঘাঁটিতে নামবেন প্রধানমন্ত্রীর কনভয়ের তিনটি হেলিকপ্টার। সেখান থেকে গাড়িতে আইআইটি। কিন্তু, দেখা যায় কার্যত তা প্রায় অসম্ভব। কলাইকুণ্ডা থেকে আইআইটি পৌঁছনোর রাস্তাটি তুলনায় সরু। বেশ কিছু জায়গায় ভাঙাচোরাও। এর উপরে মাওবাদীদের ‘রক্তচক্ষু’ তো রয়েইছে। তাই শেষ পর্যন্ত আইআইটি-র চৌহদ্দির মধ্যেই টাটা সংস্থার স্টেডিয়ামে বানানো হয়েছে নতুন হেলিপ্যাড।
ঠিক হয়েছে সোমবার দুপুরে সেখানেই নামবেন প্রধানমন্ত্রী ও তাঁর সফরসঙ্গীরা।
কলকাতার আরসিটিসি হেলিপ্যাড থেকে প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে হেলিকপ্টার রওনা হওয়ার কথা দুপুর বারোটায়। তাঁর খড়্গপুরে নামার কথা পৌনে একটায়। দুপুর তিনটে নাগাদ সমাবর্তন শুরু হওয়ার কথা। এর মাঝে মধ্যাহ্নভোজ সেরে নেবেন প্রধানমন্ত্রী। অনুষ্ঠান শুরু হওয়ার আগে পর্যন্ত এই যে প্রায় সওয়া দু’ঘণ্টা তিনি খড়্গপুরে থাকবেন, তার জন্য সেখানেই বসানো হচ্ছে ‘মিনি প্রাইম মিনিস্টারর্স অফিস’ বা ‘পিএমও’। দিল্লি থেকে সেই সংক্রান্ত একটি নির্দেশ এসেছে খড়্গপুর আইআইটি-র কাছে। রবিবার আইআইটি-র রেজিস্ট্রার তপন ঘোষাল বলেন, “অফিস বসাতে প্রয়োজনীয় সরঞ্জামের বন্দোবস্ত করা হয়েছে। নিরাপত্তার কারণে এর বেশি আর কিছু বলতে পারব না।” জানা গিয়েছে, অনুষ্ঠানস্থলের কাছেই এই ‘মিনি পিএমও’-র জন্য বসানো হয়েছে হট-লাইন, ফ্যাক্স, জেরক্স-সহ আরও সব সরঞ্জাম। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে তিনটি হেলিকপ্টারে যে আরও ৩৩ জন আসছেন, তাঁদের মধ্যে দফতরের যুগ্ম সচিব পর্যায়ের তিন অফিসারও রয়েছেন। কার্যত তাঁরাই এই ‘মিনি পিএমও’ সামলাবেন।
নিরাপত্তার ক্ষেত্রে আরও একটি মাথাব্যথা রয়েছে। এ বারের সমাবর্তন অনুষ্ঠান হচ্ছে অনেক বড় আকারে। তাই অন্য বছর যে হলঘরের মধ্যে সেই অনুষ্ঠান হয়, এ বার সেখানে করা যাচ্ছে না। অতিথি-অভ্যাগতদের সংখ্যা এ বার অনেক বেশি। তাই হলঘরের পাশেই আলাদা করে ঢাকা অনুষ্ঠানস্থল বানানো হয়েছে। আইআইটি-র ছাত্র-ছাত্রী, কর্মী, এমনকী অধ্যাপকদের মধ্যেও অণ্ণা হাজারের সমর্থক থাকতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। অনুষ্ঠান চলাকালীন, বা কোনও ভাবে প্রধানমন্ত্রীর কাছাকাছি তাঁরা স্লোগান দিতে পারেন বা কালো পতাকা দেখাতে পারেন বলেও আশঙ্কা রয়েছে। তা নিয়েও তঠস্থ হয়ে রয়েছে এই প্রতিষ্ঠানের কর্তা-ব্যক্তিরা।
প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকছেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী প্রণব মুখোপাধ্যায়। তিনি আলাদা হেলিকপ্টারে আসবেন। থাকবেন রাজ্যপাল এম কে নারায়ণন। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আসার কথা থাকলেও তাঁর সফর বাতিল হয়েছে। তাঁর অনুপস্থিতিতে প্রধানমন্ত্রী খড়্গপুরে নামার সময়ে তাঁকে স্বাগত জানাবেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী শিশির অধিকারি, রাজ্যের মন্ত্রী সুকুমার হাঁসদা, জেলাশাসক সুরেন্দ্র গুপ্ত এবং জেলা পুলিশ সুপার প্রবীণ ত্রিপাঠি। পুলিশ সূত্রে খবর, এ বার সাম্মানিক ডিএসসি (ডক্টরেট অফ সায়েন্স) যে চার জনকে দেওয়া হবে, তাঁদের মধ্যে দুই শিল্পপতি সুনীল মিত্তল এবং পবনকুমার মুঞ্জাল নিজেদের ব্যক্তিগত বিমান নিয়ে কলাইকুণ্ডার নামবেন। প্রধানমন্ত্রীর বিমানও সোমবার দুপুরে কলকাতা থেকে উড়ে কলাইকুণ্ডায় চলে আসবে। সমাবর্তন অনুষ্ঠান শেষে আইআইটি থেকে হেলিকপ্টারে প্রধানমন্ত্রী চলে যাবেন কলাইকুন্ডায়। সেখান থেকে তিনি সরাসরি দিল্লি ফিরে যাবেন। তাঁর সঙ্গে একই বিমানে দিল্লি ফেরার কথা প্রণববাবুরও।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.