|
|
|
|
সম্পাদকীয় ২... |
সাধু উদ্যোগ |
যে কোনও পুরসভার পক্ষেই আর্থিক দিকে স্বয়ংভর হওয়া জরুরি। কারণ, নগর এলাকায় নাগরিকদের প্রাথমিক পরিষেবা প্রদান এবং আঞ্চলিক উন্নয়নের দায়িত্ব পুরসভার। সেই সব কাজ করিবার জন্য যদি প্রতিনিয়ত রাজ্যের মুখাপেক্ষী থাকিতে হয়, তাহা বাঞ্ছনীয় নহে। তাহাতে কাজের গতি তো শ্লথ হইবেই, কখনও কখনও সাময়িক ভাবে বন্ধও হইতে পারে। কার্যত হয়ও বটে। সেই সমস্যাগুলি কাটাইয়া উঠিবার লক্ষ্যে রাজ্যের তৃণমূল-শাসিত পুরসভাগুলি সরকারি বেসরকারি যৌথ উদ্যোগ, পরিভাষায় পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপ (সংক্ষেপে, পিপিপি)-র পথটি কার্যকর ভাবে চালু করিবার সিদ্ধান্ত লইয়াছে। পশ্চিমবঙ্গে পূর্বেও এই জাতীয় উদ্যোগ গৃহীত হইয়াছিল। বিশেষ সুফল মিলিয়াছে, এমন নহে। সংকটটি পরিচিত। পুরসভার আয় সীমিত, এবং যাহা ঘরে আসে, তাহার প্রায় সমস্তটিই কর্মীদের বেতনখাতে খরচ হইয়া যায়। পুরসভার নিজস্ব সম্পদ বলিতে কিছু থাকে না বলিলেই চলে। এই অবস্থায় দৈনন্দিন কার্যক্রম ইত্যাদি কোনওক্রমে চলিলেও চলিতে পারে, উন্নয়নমূলক কার্যক্রম পরিচালনা করা অসম্ভব। মুখ্যত এই নিজস্ব সম্পদ সৃষ্টির জন্যই পিপিপি-ধাঁচটি তাৎপর্যপূর্ণ। ইহাতে পুরসভার কর্মেও গতি এবং পেশাদারিত্ব আসিতে পারে, একই সঙ্গে নিজস্ব এলাকার ভিতর সম্পদ সৃষ্টির সুযোগও সৃষ্টি হইতে পারে।
এই সূত্রে অন্তত আরও দুইটি বিষয় গভীরতর বিবেচনা দাবি করে। প্রথমত, বেসরকারি উদ্যোগের সহিত হাত মিলাইয়া কাজ করিবার ধাঁচ পূর্বে কেন ফলদায়ী হয় নাই, তাহার একটি বড় কারণ এক ধরনের মানসিক ছুতমার্গ। পুরসভার নিজস্ব কর্মকাণ্ডে বেসরকারি উদ্যোগকে শামিল করা যে কোনও ভাবেই পুরসভার ব্যর্থতার পরিচায়ক নহে, ইহার ভিতর যে অধমর্ণ মনোভাব কাজ করে না, বরং ইহা পুরসভার কর্মদক্ষতারই পরিচায়ক, সেই কথাটি স্মরণে রাখা উচিত। দ্বিতীয়ত, একটি দুশ্চিন্তা। জানা গিয়াছে, মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায় পুরসভায় জলকর বসাইবার বিরোধী বলিয়া অন্য সূত্রে সম্পদ সৃষ্টির জন্যই তৃণমূল-শাসিত পুরসভাগুলির এই পিপিপি-কর্মকাণ্ডের আয়োজন। ইহার সহিত জলকর বসাইবার বিরোধিতা কী, তাহা সবিশেষ স্পষ্ট নহে। যাঁহারা সত্যই অর্থসংকটের শিকার, তাঁহাদের জন্য কিছু বিশেষ বন্দোবস্ত করা যাইতেই পারে, কিন্তু যাঁহারা কর প্রদানে সক্ষম, তাঁহাদের কেন বিনামূল্যে জল বিতরণ করা হইবে? যে রূপে নগর এলাকায় গভীর নলকূপ দিয়া যথেচ্ছ জল উঠানো হইতেছে, তাহাতে জলস্তর সংকটে। পাল্লা দিয়া আর্সেনিক দূষণজাতীয় সমস্যাও বাড়িতেছে। তৎসহ, সাম্প্রতিক কালে পরিশোধিত জল ক্রমেই একটি গুরুত্বপূর্ণ এবং মহার্ঘ পণ্য হইয়া উঠিতেছে। তাহার উপর কর না-বসাইবার কোনও যুক্তি নাই। ইহাতে পুরসভার আয়ও লক্ষণীয় ভাবে বাড়িতে পারে। সুতরাং, জলকরের বিকল্প হিসাবে পিপিপি-র ধাঁচটি গ্রহণ করিবার কথা ভাবিলে দীর্ঘ মেয়াদে সমস্যার প্রকৃত সমাধান আসা কঠিন। |
|
|
|
|
|