|
|
|
|
সম্পাদক সমীপেষু... |
কার্ল মার্ক্স, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর |
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয় আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে (৮ অগস্ট) ওই বিশ্ববিদ্যালয়েরই অর্থনীতির প্রবীণ অধ্যাপক পিনাকী চক্রবর্তীকে শাসকদলের কর্মী-সমর্থকরা আক্রমণ, লাঞ্ছনা এবং ভীতিপ্রদর্শন করে। অধ্যাপক চক্রবর্তী তাঁর বক্তৃতায় কার্ল মার্ক্সকে উদ্ধৃত করলে বক্তব্যে বাধাদান করে থামিয়ে দেওয়া হয়। যদিও ঘটনাটি সংবাদমাধ্যমে বিরাট ভাবে প্রচারিত হয়েছে, কিন্তু মাননীয় উচ্চশিক্ষামন্ত্রী অথবা রাজ্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলির শীর্ষ প্রশাসনিক দায়িত্বপ্রাপ্ত উচ্চশিক্ষা সংসদের সভাপতির কাছ থেকে সরকারি ভাবে কোনও প্রতিবাদ জানা যায়নি। আমরা অর্থনীতি ও সমগোত্রীয় বিষয়ের নিম্নলিখিত শিক্ষক-শিক্ষিকা, যাঁরা রাজ্যের বিভিন্ন উচ্চশিক্ষা সংস্থার সঙ্গে যুক্ত, মনে করি কার্ল মার্ক্স-সহ অর্থনীতির অন্যান্য দিকপাল চিন্তাবিদের চিন্তাধারা সম্পর্কে শিক্ষাদান, আলোচনা ও বিতর্ক আমাদের পেশাগত দায়িত্বের মধ্যে পড়ে। শুধুমাত্র ক্লাসরুম নয়, তার বাইরে সর্বসাধারণের বৃহত্তর মঞ্চেও এই দায়িত্ব বর্তায়। আমাদের মতে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বিশ্লেষণাত্মক আলোচনার মুক্ত পরিবেশকে ভীতিপ্রদর্শন এবং বাহুবলের মাধ্যমে দমন করার উদ্দেশ্য হল, বুদ্ধিজীবীদের চিন্তা-প্রক্রিয়া স্বৈরাচারী পথে নিয়ন্ত্রণ করা, যাতে আমরা আমাদের পেশাগত কতর্ব্যপালন থেকে বিরত হই। মাননীয় উচ্চশিক্ষামন্ত্রী ও উচ্চশিক্ষা সংসদের সভাপতির তরফে জনসমক্ষে এই ঘটনাকে নিন্দা না-করা শুধু যে তাঁদের নিজ দায়িত্বপালনে অপারগতা তা-ই নয়, মৌন থেকে দুষ্কর্মে ইন্ধন জোগানোরও সমতুল। তাই আমরা মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী ও উচ্চশিক্ষা সংসদের সভাপতির কাছে আবেদন জানাচ্ছি যে, তাঁরা জনসমক্ষে দ্ব্যর্থহীন ভাষায় এই ঘটনার নিন্দা করুন এবং রাজ্যের প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শাসকদলের কর্মী-সমর্থকদের এ হেন আক্রমণ থেকে নিবৃত্ত করার জন্য অতি সক্রিয় পদক্ষেপ গ্রহণ করুন। |
রতন খাসনবিশ, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়। সুশীল খন্না, ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব ম্যানেজমেন্ট।
ভি কে রামচন্দ্রন, ইন্ডিয়ান স্ট্যাটিসটিক্যাল ইনস্টিটিউট। মধুরা স্বামীনাথন, ইন্ডিয়ান স্ট্যাটিসটিক্যাল ইনস্টিটিউট।
ইন্দ্রনীল দাশগুপ্ত, সেন্টার ফর স্টাডিজ অব সোশ্যাল সায়েন্সেস। গৌতম গুপ্ত, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়।
সুদীপ্ত ভট্টাচার্য, বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়। সুকান্ত ভট্টাচার্য, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়। ঈশিতা মুখোপাধ্যায়, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়। দীপান্বিতা মুখোপাধ্যায়, ইউ জি কলেজ, পশ্চিমবঙ্গ রাষ্ট্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়। অতনু ঠাকুর, ইউ জি কলেজ কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়।
|
২ |
বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর সম্পর্কিত আলোচনা সভায় অধ্যাপক পিনাকী চক্রবর্তী কার্ল মার্ক্সের প্রাসঙ্গিকতা নিয়ে বক্তব্য রেখেছিলেন। সেখানে তাঁকে সেই বিশ্ববিদ্যালয়েরই কর্মচারী সংসদের সভ্যদের প্রতিবাদের সম্মুখীন হতে হল। কার্ল মার্ক্সের বর্তমান যুগের পরিপ্রেক্ষিতে প্রাসঙ্গিকতাকে বিশেষ রাজনৈতিক দলের প্রতি সমর্থনের তকমা হিসাবে চিহ্নিত করে তাঁকে হেনস্থা করা হল। তাঁর বক্তব্য শেষ করতে দেওয়া হল না। ফলে, পশ্চিমবঙ্গের অধ্যাপকদের মাথা হেঁট হল। আমার অত্যন্ত কাছের অগ্রজপ্রতিম মানুষ পিনাকীদা-র রাজনৈতিক দর্শনের সঙ্গে আমার রাজনৈতিক দর্শনের মিল আছে কি নেই তা মনে হয়নি কোনও দিন। কারণ, আমরা সবাই শিক্ষক। অর্থনীতির চর্চা করে জীবনধারণ করি। আমার তীব্র সমালোচনা সংবলিত পুরনো সরকারের গাফিলতির উপর একের পর এক লেখা ছাপা হওয়া সত্ত্বেও তাঁর মতো উদারমনস্ক লোকের সঙ্গে বন্ধুত্বে চির ধরেনি কোনও দিন। ফ্যাসিবাদী আচরণের সমস্যা হল যে, ঠিক, বেঠিক সব যেন কিছু লোক বুঝে বসে থাকেন আর জোর করে অন্যদের বোঝাতে চেষ্টা করেন। এক দিকে যখন মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় রাজনৈতিক অত্যাচারে রাশ টানা হচ্ছে, ঠিক এই সময়ে বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ে এই ঘটনা রাজ্য সরকার এবং দুই শাসকদলকেই অপমানিত করল। অপমানিত করল আমাদের মতো অ-বামপন্থী মানুষদের, যাঁরা অন্য এক ধরনের ফ্যাসিবাদী ইতিহাসকে মানতে পারেনি কোনও দিন। গণতন্ত্রকে কব্জা করতে, গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় ক্ষমতা হাসিল করে খুব সহজেই ফ্যাসিবাদী হওয়া যায়। এটা প্যারাডক্স নয়। বিগত সরকার গণতন্ত্রের নামে অনেক জায়গাতে একনায়কতন্ত্রের প্রতিষ্ঠা করেছিল। তাদের সঙ্গে সমানে সমানে টক্কর দিতে গিয়ে আজ নতুন সরকারের প্রতি সহানুভূতিশীল মানুষজনও কি ফ্যাসিবাদী হয়ে উঠবেন? তোমরা আমাদের ওপর অত্যাচার করেছ। এ বার আমাদের পালা। একেই কি বলে সভ্যতা? কার্ল মার্ক্স একটা দর্শনের সমাজ ও অর্থনীতির এক ধরনের ঐতিহাসিক বিশ্লেষণের তত্ত্ব খাড়া করেছিলেন। রাস্তায় নেমে সি পি এম না-করলে সবাইকে ব্রাত্য হতে হবে, তা বলেননি। রবীন্দ্রনাথের মানবদরদি মানসিকতা বা মার্ক্স সাহেবের এই পৃথিবীর শোষণের অবসানের পিছনে যে চিন্তা তাদের মিল প্রচুর। আমি মনে করি, মার্ক্সের তত্ত্ব ও দর্শন নিয়ে অনেক সমস্যা আছে। কিন্তু সে তো সব তত্ত্বেরই খামতি থাকে। |
সুগত মারজিৎ। সভাপতি, পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য উচ্চশিক্ষা সংসদ
|
বক্তৃতায় বাধাদান |
৯ অগস্ট, ২০১১ তারিখ আনন্দবাজার পত্রিকায় আমার বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ে বক্তৃতায় বাধাদানের একটি খবর (বক্তৃতায় মার্ক্স, অধ্যাপককে বাধা তৃণমূলের) প্রকাশিত হয়েছে। আমি তা পড়ে জানাতে চাই যে আমার বক্তৃতা বন্ধ করা হয়নি। মঞ্চে এসে কেউ বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ-উপাচার্য ষোড়শীমোহন দাঁর কাছে আপত্তি করেছিলেন। আমি মঞ্চ থেকে নামার পর ঘটনাটি ঘটে। প্রকৃতপক্ষে ঘেরাও কথাটিও খাটে না। এবং এক দেড় ঘণ্টা পরে যিনি প্রতিবাদ ও বাদ বিতণ্ডা শুরু করেছিলেন, তিনি টেলিফোনে আমার কাছে তাঁর আচরণের জন্য দুঃখপ্রকাশ করেন। এই কথাগুলিও পাঠকদের না জানালে খবরটি অবিকৃত থাকে না। |
পিনাকী চক্রবর্তী। অধ্যাপক, বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়
|
পরিচয় |
‘লড়াই ও যুদ্ধ’ সম্পাদকীয়তে (১৮/৮) শ্রীকিসন বাবুরাও হজারে-কে রাজনৈতিক কর্মী বলা হয়েছে। পরিচয়টি যথার্থ নয়। তিনি মহারাষ্ট্রের এক জন সমাজকর্মী। বৃহত্তর অর্থে তাঁকে রাজনৈতিক কর্মী বলা চলতে পারে। |
সৌমেন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায়। কলকাতা-৭৪ |
|
|
|
|
|