|
|
|
|
হরিপুরের বিকল্প চেয়ে মস্কোর চাপ, তৎপরতা দিল্লিতেও |
নিজস্ব সংবাদদাতা • নয়াদিল্লি |
অতঃ কিম? এর পর কী?
হরিপুরে প্রস্তাবিত পরমাণু বিদ্যুৎ প্রকল্পটি পশ্চিমবঙ্গ খারিজ করে দেওয়ার পরে এই প্রশ্নটি সামনে রেখে নয়াদিল্লির উপরে চাপ বাড়াতে চাইছে মস্কো। বিদেশ মন্ত্রক সূত্রের খবর, সম্প্রতি মনমোহন সরকারের কাছে রাশিয়া আনুষ্ঠানিক ভাবে অনুরোধ করেছে, যত দ্রুত সম্ভব পরিবর্ত জায়গাটি খুঁজে দেওয়া হোক। সে দেশের সংশ্লিষ্ট কর্তাদের বক্তব্য, ইতিমধ্যেই অনেক দেরি হয়ে গিয়েছে। এ নিয়ে আর বেশি কালক্ষেপ যেন করা না হয়।
বিদেশ মন্ত্রক সূত্রের খবর, এখনও পর্যন্ত জায়গার বিষয়ে স্থির সিদ্ধান্তে আসতে পারেনি কেন্দ্র। তবে অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে খোঁজ চলছে। দিল্লির অনেকেই মনে করছেন, ভারতের নিজের স্বার্থেই জায়গাটি দ্রুত খুঁজে কাজ শুরু করা জরুরি।
২০০৯-এর শেষে প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহের রাশিয়া সফরের সময় দু’দেশের মধ্যে পাঁচটি নতুন পরমাণু প্রকল্প গড়া নিয়ে চুক্তি হয়। তার অন্যতম ছিল হরিপুর। ‘রোশ্যাটম’ নামের একটি রুশ সংস্থাকে হরিপুরে হাজার মেগাওয়াট ইউনিট-সহ একটি পরমাণু পার্ক তৈরির বরাতও দেয় কেন্দ্র। কিন্তু বিষয়টি নিয়ে রাজনৈতিক স্তরে জলঘোলা হওয়ায় রাশিয়াও আগাম আঁচ করতে পারে যে, হরিপুরে আদৌ পরমাণু প্রকল্প বাস্তবায়িত হবে না। কারণ, বিধানসভা নির্বাচন না হলেও পরমাণু কেন্দ্রের তীব্র বিরোধিতায় নেমে পড়েছে তৃণমূল। এমনকী, রুশ প্রেসিডেন্ট যখন ভারতে এসেছিলেন, তৃণমূলের পক্ষ থেকে প্রতিবাদ-বিক্ষোভ জানানো হয়। পরিস্থিতি বুঝে ‘রোশ্যাটম’কে যাতে ওড়িশায় জায়গা দেওয়া হয়, তার চেষ্টা শুরু করে রাশিয়াও। কূটনীতিবিদদের মতে, এমন একটা সময়ে হরিপুরের পরিবর্তে অবিলম্বে অন্য জায়গা খোঁজার জন্য চাপ দিচ্ছে মস্কো, যখন সার্বিক ভাবেই রাশিয়া-ভারত কৌশলগত সম্পর্ক যথেষ্ট স্বস্তিজনক অবস্থায় নেই। যদিও মস্কোর পক্ষ থেকে নয়াদিল্লিকে জানানো হয়েছে, দু’দেশের মধ্যে পরমাণু সমঝোতার বিষয়টি যেমন চলছে, তেমনই এগিয়ে চলবে। হরিপুরের ঘটনার জন্য তাতে কোনও সমস্যা তৈরি হবে না। খুব শীঘ্রই বিষয়টি নিয়ে ভারত-রাশিয়া যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপ (পরমাণু সমঝোতা বিষয়ক) আলোচনায় বসবে বলে জানা গিয়েছে। কিন্তু হরিপুরের পরিবর্তে অন্য জায়গা খোঁজার বিষয়টি নিয়ে চার মাস আগেই সরব হয়েছিল মস্কো। গত এপ্রিলে চিনের সানিয়াতে একটি বহুদেশীয় সম্মেলনের পার্শ্বমঞ্চে রাশিয়ার প্রেসিডিন্ট দিমিত্রি মেদভেদেভের সঙ্গে বৈঠক করেন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ। সেই বৈঠকেই রাশিয়ার তরফ থেকে বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছিল, পশ্চিমবঙ্গের সম্ভাব্য পটপরিবর্তনের (তখনও বিধানসভা ভোটের ফল প্রকাশ হয়নি) কথা মাথায় রাখলে স্পষ্ট, হরিপুুর বিদ্যুৎ কেন্দ্র গড়া অসম্ভব। তাই নতুন জায়গা প্রয়োজন।
সাউথ ব্লকের সামনে এখন এই প্রশ্নটিও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়িয়েছে যে, জাতীয় নিরাপত্তার স্বার্থে শুধুমাত্র রাশিয়ার উপর কৌশলগত ভাবে নির্ভরশীলতা আরও বাড়িয়ে যাওয়া কতটা যুক্তিযুক্ত। সাউথ ব্লকের একাংশ এ কথাটা মনে করছেন। তাঁদের বক্তব্য, চিনের সঙ্গে রাশিয়ার পরমাণু সমঝোতা দ্রুত বেড়ে উঠছে। বেজিংয়ের সামরিক শক্তির উত্থানের পিছনে রয়েছে মস্কোর উন্নত প্রযুক্তি। এই বিষয়গুলি সাউথ ব্লকের রক্তচাপ বাড়িয়ে দিয়েছে। রাশিয়ার সাম্প্রতিকতম বিদেশ নীতির নথিতে চিনকে অগ্রাধিকার দেওয়ার বিষয়টিতেও জোর দেওয়া হয়েছে। প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের একটি সমীক্ষা বলছে, সাম্প্রতিক অতীতে রাশিয়ার কাছ থেকে যে অস্ত্র কেনা হয়েছে, তার মান অত্যন্ত খারাপ। কিন্তু গত পাঁচ বছরে বেজিংকে যে সামরিক সরঞ্জাম সরবরাহ করেছে মস্কো, তা অনেকটাই উন্নত। ভারতের নিরাপত্তা তথা গোটা অঞ্চলের ভূকৌশলগত ভারসাম্য রক্ষার প্রশ্নে বিষয়টি অত্যন্ত বিপজ্জনক বলেই মনে করা হচ্ছে।
পাশাপাশি, আমেরিকার সঙ্গে রাশিয়ার যে পরমাণু সমঝোতা, সেখানেও অস্বচ্ছতার অভিযোগ করেছে ভারত। দিল্লির বক্তব্য, তাদের সঙ্গে রাশিয়া বা আমেরিকার যে পরমাণু চুক্তি আছে, তা যথেষ্টই স্বচ্ছ। কিন্তু মার্কিন-রুশ পরমাণু চুক্তি তেমন নয়। পরমাণুর মতো স্পর্শকাতর বিষয়ে এমনটা হওয়া উচিত নয় বলেই মনে করে দিল্লি।
তবে, রাশিয়ার সঙ্গে পরমাণু সম্পর্ক নিয়ে একাংশের মনে প্রশ্ন থাকলেও সামগ্রিক ভাবে দিল্লি দীর্ঘদিনের পুরনো এই সম্পর্ক মেরামতেই আগ্রহী। যদিও বিশ্বে আর মেরুকরণ নেই, তবু দিল্লি চায় না, মস্কোর সঙ্গে তাদের কোনও ভুল বোঝাবুঝি তৈরি হোক আর তার সুযোগ নিক বেজিং। তাই হরিপুর বাতিল হয়ে যাওয়ার পরে রুশ পরমাণু বিদ্যুৎ প্রকল্পের জন্য দ্রুত বিকল্প খুঁজে বের করাই দিল্লির লক্ষ্য। |
|
|
|
|
|