গলছে বরফ, আলোচনাতেই জট কাটার ইঙ্গিত অণ্ণাদেরও
লোকপাল বিল নিয়ে সরকার ও অণ্ণা হজারে শিবিরের মধ্যে উদ্ভূত অচলাবস্থা মেটাতে শুরু হল ‘ট্র্যাক-টু’ আলোচনা। গত কাল আলোচনার পথেই সমাধানের রাস্তা বাতলেছিলেন খোদ প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ। আজ সেই পথে হাঁটার ইঙ্গিত দিল অণ্ণা শিবিরও। আজ অণ্ণা-ঘনিষ্ঠ স্বামী অগ্নিবেশ জানান, তাঁরা চান, সরকার আলোচনার জন্য কোনও মধ্যস্থতাকারী নিয়োগ করুক। একই সঙ্গে কেন্দ্রের পেশ করা লোকপাল বিলটি প্রত্যাহার করার দাবিও জানান তিনি।
প্রধানমন্ত্রী শনিবারই বলেছিলেন, লোকপাল বিল নিয়ে সরকার সব পক্ষের সঙ্গে আলোচনার জন্য প্রস্তুত। আজ অনশনের ষষ্ঠ দিনে প্রধানমন্ত্রীর কথার সূত্র ধরেই অণ্ণা বলেন, “সরকারের সঙ্গে আলোচনার রাস্তা খোলা রয়েছে। কেন না, এক মাত্র আলোচনার মাধ্যমেই সমাধানের
|রাস্তা পাওয়া সম্ভব।” যে ভাবে আজ অণ্ণা ও তাঁর সহযোগীরা দফায় দফায় আলোচনায় বসার ব্যাপারে সওয়াল করেছেন, তাতে বরফ গলার ইঙ্গিত রয়েছে বলে মনে করছেন অনেকেই।
জন লোকপালের দাবিতে তাঁদের আন্দোলনের ভবিষ্যত রূপরেখা নিয়ে আজ সকালে বৈঠকে বসে অণ্ণা-শিবির। বৈঠকে অরবিন্দ কেজরিওয়াল ছাড়াও কিরণ বেদী, শান্তি ভূষণ, মেধা পাটকরেরা ছিলেন। সরকার লোকপাল বিল নিয়ে আলোচনা করতে চাইলে তাঁরা যে প্রস্তুত, সে সিদ্ধান্ত হয় এই বৈঠকে। কেজরিওয়াল অবশ্য বলেছেন, “সরকার মুখে আলোচনার কথা বললেও কার সঙ্গে, কোথায়, কী আলোচনা হবে, সে বিষয়ে আমাদের বিন্দুমাত্র ধারণা নেই।” কংগ্রেসের তরফে অবশ্য দাবি করা হয়েছে, দু’তরফের মধ্যে আলোচনা ইতিমধ্যেই শুরু হয়ে গিয়েছে।
অনশন মঞ্চে শিশুকে কোলে নিয়ে অণ্ণা। ছবি পিটিআই
শনিবার রাতেই অণ্ণার সঙ্গে দেখা করেন মহারাষ্ট্রের অতিরিক্ত মুখ্যসচিব উমেশচন্দ্র সারঙ্গি। এর আগে কয়েক বার মহারাষ্ট্রে অণ্ণার অনশনের সময় তাঁর ঘনিষ্ঠ ওই অফিসারকে সঙ্কট মেটাতে ডাকা হয়েছে। সে সময় সরকারের হয়ে অণ্ণার সঙ্গে তিনিই আলাপ-আলোচনা চালিয়ে যেতেন। এ ক্ষেত্রেও তিনি আলোচনার জন্য এসেছেন বলে দাবি উঠতে শুরু করেছে। তবে অণ্ণা-শিবির জানিয়েছে, ওই আমলার সঙ্গে অণ্ণার বৈঠক নিছকই ব্যক্তিগত। আন্না-শিবির যা-ই বলুক, মহারাষ্ট্রের কংগ্রেস সাংসদ সঞ্জয় নিরুপম আজ বলেছেন, “আলোচনা শুরু হয়েছে। এখন দেখার কী হয়।” এর মধ্যেই মহারাষ্ট্রের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী তথা কংগ্রেস সাংসদ সুশীলকুমার শিন্ডে আজ বলেন, “প্রধানমন্ত্রী চাইলে তিনি অণ্ণার সঙ্গে আলোচনায় বসতে পারেন।” রাজনৈতিক মহলের খবর, অণ্ণার সঙ্গে শিন্ডের ব্যক্তিগত সম্পর্ক ভাল। ফলে আগামী দিনে সরকারের তরফে আলোচনা চালানোর জন্য শিন্ডের নাম তুলছে কংগ্রেসের একাংশ। উঠছে আর এক প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বিলাসরাও দেশমুখের নামও। ইন্দৌরের এক ধর্মগুরুর কথাও ভাবা হচ্ছে।
সরকার ও অণ্ণা-শিবিরের লোকপাল বিল এই দুইয়ের মধ্যে তুলনামূলক আলোচনা করতে আইন ও বিচার এবং কর্মিবর্গ মন্ত্রক সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির কাছে পাঠানো হয়েছে অণ্ণাদের জন লোকপাল বিলটি। সরকার যে সত্যিই জন লোকপাল বিল নিয়ে আলোচনা চায়, সেই বার্তা দিতেই ওই পদক্ষেপ করা হয়েছে বলে জানিয়েছে কংগ্রেস শিবির। সেই সঙ্গে এটাও জানানো হয়েছে, ওই কমিটির আগামী বৈঠক হবে সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহে। তাই ৩০ অগস্টের মধ্যে সংসদে জন লোকপাল বিল পাশ করানোর যে সময়সীমা অণ্ণা-শিবির বেঁধে দিয়েছে, (বস্তুত আজও অনশন মঞ্চ থেকে অণ্ণা ও তাঁর সঙ্গীরা সরকারকে রীতিমতো কড়া সুরে জানিয়ে দিয়েছেন, ৩০ অগস্টের মধ্যে বিল পাশ করাতে না পারলে সরকার সরে যাক!) তা মানা যে সম্ভব নয়, তা স্পষ্ট করে দিয়েছেন সংসদীয় কমিটির প্রধান অভিষেক মনু সিঙ্ঘভি। তাঁর কথায়, “এত কম সময়ে সব পক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে একটি কঠোর লোকপাল বিল সংসদে পেশ করা সম্ভব নয়।” তবে সরকারের লোকপাল বিলে ‘চমক’ থাকতে চলেছে বলে জানিয়েছেন তিনি। সিঙ্ঘভি বলেন, “সংসদীয় কমিটিকে একটু সময় দিন। যারা সরকারের ভূমিকা নিয়ে সন্দিহান, তাদের জন্য চমক থাকবে।”
সিঙ্ঘভি যে চমকের কথা বলছেন, তা কী, তা নিয়ে কোনও বিশদ ব্যাখ্যা অবশ্য মেলেনি। অণ্ণা-শিবির বলছে, ওই ‘চমক’ যদি প্রধানমন্ত্রীর লোকপাল বিলে অন্তর্ভুক্তি হয়, তা হলে অবশ্যই স্বাগত। তা না হলে তাঁরা তাদের আন্দোলন থেকে যে সরছেন না, তা ফের স্পষ্ট করে দিয়েছেন খোদ অণ্ণা। তিনি বলেন, “লোকপাল বিলে প্রধানমন্ত্রীর অন্তর্ভুক্তি এবং ওই বিলটি পাশ না হওয়া পর্যন্ত এই আন্দোলন চালু থাকবে।” একই সঙ্গে এই আন্দোলনের বিরোধীদের, মূলত যাঁরা একে সংসদীয় ব্যবস্থার বিরুদ্ধাচরণ বলছেন, আজ তাঁদের এক হাত নিয়ে অণ্ণা বলেন, “জাতীয় সংসদ কখনই জনগণের সংসদের থেকে বড় হতে পারে না।”
অণ্ণা-শিবির যতই সুর চড়াক, সরকারের তরফে অবশ্য চূড়ান্ত সংযমই দেখানো হচ্ছে। রবিবার শিবপুরে বেঙ্গল ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড সায়েন্স ইউনিভার্সিটির (বেসু) একটি অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী প্রণব মুখোপাধ্যায় জানান, অণ্ণার আন্দোলন প্রমাণ করেছে ভারতের গণতন্ত্র অত্যন্ত মজবুত এবং নমনীয়। তিনি বলেন, “অণ্ণা হজারের আন্দোলনের ফল কী হবে, তা জানি না। কিন্তু দেশের গণতন্ত্র যে যথেষ্ট নমনীয়, তা ফের প্রমাণ করছে এই আন্দোলন। আমরা চাই, নতুন নীতি বা আইন প্রণয়ন করার ক্ষেত্রে জনপ্রতিনিধি এবং আইনজ্ঞ ছাড়াও দেশের নাগরিক সমাজও এগিয়ে আসুন। এই নমনীয়তার প্রমাণ বহু বার পাওয়া গিয়েছে।”
এ দিনও অণ্ণার অনশনস্থলে বিপুল ভিড় হয়। রবিবার হওয়ায় রামলীলা ময়দানে অসংখ্য লোক এসেছিলেন। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে দিল্লির বিভিন্ন প্রান্ত থেকে একাধিক মিছিল রামলীলা ময়দানে এসে পৌঁছয়। আগামিকাল জন্মাষ্টমীর ছুটি। অণ্ণা-শিবিরের পক্ষ থেকে ইদ ও জন্মাষ্টমীর উপবাস রামলীলা ময়দানে ভাঙার জন্য দুই সম্প্রদায়ের মানুষের কাছেই অনুরোধ করা হয়েছে। ফলে আগামিকাল রামলীলা ময়দানে ভিড় আরও বাড়বে বলেই মনে করছে দিল্লি পুলিশ।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.