|
|
|
|
বাজার আগুন, ভিন্ রাজ্য থেকে কোলাঘাটে এল ফুল |
নিজস্ব সংবাদদাতা • তমলুক |
এ যেন উলট পুরাণ। এত দিন যে ফুল বাজার এ রাজ্য-সহ ভিন্ রাজ্যের ফুলের চাহিদা মেটাত, এ বার সেই বাজারের চাহিদা মেটাতেই ফুল আনতে হল ভিন্ রাজ্য থেকে। বন্যার জেরে এমনই হাল পূর্ব মেদিনীপুরের কোলাঘাটের ফুল-বাজারের। সপ্তাহখানেক আগেও এখানে গাঁদা ফুলের কিলো প্রতি দাম ছিল মাত্র ১০ থেকে ১৫ টাকা। রবিবার সেই ফুল বিক্রি হয়েছে কিলো প্রতি ৩২০ টাকা করে। ফুলের এই চড়া দামে সাধারণ ক্রেতার পাশাপাশি বিপাকে পড়েছেন ব্যবসায়ীরাও। ফুলের জোগান চাহিদার তুলনায় নগণ্য। অগত্যা, ভিন্ রাজ্য থেকে আমদানি করতে হচ্ছে ফুল। জন্মাষ্টমীর চাহিদা মেটাতে কোলাঘাট ফুল বাজারে গত দু’দিনে প্রায় ২০ কুইন্টাল গাঁদা ফুল আনা হয়েছে বেঙ্গালুরু থেকে। তাতে অবশ্য দাম কমেনি গাঁদা ফুলের। একই ছবি অন্যান্য ফুলের ক্ষেত্রেও।
রাজ্যের বৃহত্তম ফুলের বাজার কলকাতার মল্লিকঘাট-সহ ভিন্ রাজ্যেও ফুলের অন্যতম জোগানদার পূর্ব মেদিনীপুর। এ ছাড়া, পশ্চিম মেদিনীপুর, হাওড়া, দক্ষিণ ২৪ পরগনা, নদিয়া জেলা থেকেও ফুল আসে মল্লিকঘাটে। কিন্তু টানা বৃষ্টি ও বন্যার জেরে গত এক সপ্তাহ ফুলের জোগান কমে গিয়েছে অনেকটা। আর তাতেই ফুলের দাম চড়েছে হু হু করে। গাঁদা, রজনী, বেল, দোপাটি, জুঁই, অপরাজিতা, জবা, গ্ল্যাডিওলাস, গোলাপ প্রভৃতি ফুল নিয়ে কোলাঘাটের ফুল-বাজারে আসেন পূর্ব মেদিনীপুরের পাঁশকুড়া, কোলাঘাট, শহিদ মাতঙ্গিনী এবং পশ্চিম মেদিনীপুরের ডেবরা, দাসপুর ও হাওড়ার বাগনানের ফুলচাষিরা। কিন্তু অতিবৃষ্টি ও বন্যার জলে এই এলাকার অধিকাংশ ফুলের খেত জলের তলায়। ফলে, নষ্ট হয়ে গিয়েছে অধিকাংশ ফুলগাছ। আর এতেই ফুলের দর বাড়ছে লাফিয়ে লাফিয়ে। |
|
বেঙ্গালুরুর ফুল বিক্রি হচ্ছে কোলাঘাটে। নিজস্ব চিত্র। |
জেলা উদ্যান পালন দফতরের হিসাব অনুযায়ী, পূর্ব মেদিনীপুরের কোলাঘাট, পাঁশকুড়া, শহিদ মাতঙ্গিনী ও তমলুক ব্লক মিলিয়ে প্রায় ১২০০ হেক্টর জমিতে বিভিন্ন ধরনের ফুল চাষ হয়। গত কয়েকদিনের অতিবৃষ্টি ও বন্যায় এই ফুলচাষের মধ্যে ১০০০ হেক্টর জমির ৫০-১০০ শতাংশই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এতে প্রায় ১০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। চাহিদা সামাল দিতে কোলাঘাটের ফুল ব্যবসায়ীরা বেঙ্গালুরু থেকে বিমান ও ট্রেনে ২০ কুইন্টাল গাঁদা ফুল নিয়ে এসেছেন। কোলাঘাটে শনি ও রবিবার সেই গাঁদা ফুল বিক্রিও করেছেন ব্যবসায়ীরা। কোলাঘাট ফুল বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সম্পাদক দিলীপ প্রামাণিক বলেন, “বন্যা ও অতিবৃষ্টির জেরে অধিকাংশ ফুল খেত নষ্ট হওয়ায় বাজারে ফুলের জোগান অনেকটাই কমে গিয়েছে। পরিস্থিতি সামলাতে কয়েকজন ব্যবসায়ী বেঙ্গালুরু থেকে গাঁদা ফুল এনে বিক্রি করেছেন।” ভিন্ রাজ্য থেকে ফুল আমদানির নজির এই প্রথম বলে জানান তিনি।
দিলীপবাবু জানান, সপ্তাহ দুয়েক আগেও কোলাঘাট ফুল বাজারে প্রতি দিন প্রায় ১ হাজার কুইন্টাল গাঁদা ফুল আসত। এখান থেকে ফুল যেত মল্লিকঘাট, বিলাসপুর, মুম্বই, হায়দরাবাদ ও রায়গড়ে। গত কয়েকদিন এখানে গাঁদাফুল আসছে মাত্র দু’কুইন্টাল করে। ফলে গাঁদাফুলের চাহিদা মেটানো মুশকিল হয়ে পড়ে। দামও বেড়ে যায়, একলাফে কয়েকগুণ। বেঙ্গালুরুর গাঁদা বিক্রি হয়েছে প্রতি কিলো ১৮০ টাকা দরে। দোপাটি ফুলের কেজি প্রতি দাম ছিল ৫-১০ টাকা। রবিবার তা বিক্রি হয়েছে ১৪০ টাকা দরে। অপরাজিতার দাম ছিল ৩০-৪০ টাকা। রবিবার তা বেড়ে হয় ১২৫ টাকা। রজনীগন্ধার দাম ৬৫-৭০ থেকে বেড়ে হয়েছে ৩০০ টাকা। এমনকী, কল্কে, রঙ্গনা, টগর ফুলের দাম কেজি প্রতি ১০ টাকা থেকে বেড়ে হয়েছে ৭০-৮০ টাকা। সারা বাংলা ফুলচাষি ও ব্যবসায়ী সমন্বয় সমিতির সম্পাদক নারায়ণচন্দ্র নায়েক বলেন, “পুণরায় চাষ করার জন্য ক্ষতিগ্রস্ত ফুলচাষিদের সরকারি সাহায্যের প্রয়োজন। না হলে রাজ্যের ফুল রফতানি সঙ্কটে পড়বে।” |
|
|
|
|
|