|
|
|
|
|
ব্যাঙ্ক আমানতই
সবচেয়ে স্বস্তির জায়গা
অমিতাভ গুহ সরকার |
|
চার দিকে সব কিছুই অস্থির। শেয়ার বাজার, সোনার দাম, মূল্যবৃদ্ধি, সুদের হার, রাজনৈতিক পরিস্থিতিসবই অস্থির। স্থির শুধু ডাকঘরে সুদের হার। মানুষ ঘোর ধন্দে, এই চরম অস্থির পরিস্থিতিতে ঠিক কী করা উচিত। কবে অবস্থা শোধরাবে তার কোনও ইঙ্গিতও নেই।
চড়চড়িয়ে সুদের হার বাড়ায় বাড়ি-গাড়ির স্বপ্ন এখন শিকেয় তোলা। যাঁদের কেনা হয়েছে তাঁরা ঋণের মাসিক কিস্তি বা ‘ই এম আই’-এর চাপে কতটা সুখ ভোগ করছেন, তা তাঁরাই জানেন। পাশাপাশি বেড়েছে তেলের দাম। শেয়ার সূচক যেন স্কি করে নেমে আসছে সমতলে। অন্য দিকে কিনব কিনব করতে করতে সোনার দর পৌঁছে গিয়েছে শিখরে। ভাল ইলিশের দর এখন চার অঙ্কে। এই পরিস্থিতিতে গুটিগুটি এগিয়ে আসছে পুজো। মধ্যবিত্তের এখন দমবন্ধ অবস্থা।
ভাল নেই বড় মাপের লগ্নিকারীরাও। শেয়ার বাজারে যাঁদের মোটা লগ্নি, তাঁরা করজোড়ে প্রার্থনা করছেন অন্ততপক্ষে পতন বন্ধ হোক। বর্তমান বিশ্ব পরিস্থিতিতে উত্থানের আশা তাঁরা এখনই করছেন না। ইক্যুইটি নির্ভর মিউচুয়াল ফান্ডে লগ্নিকারীদের অবস্থা প্রায় একই রকম। যাঁরা লগ্নিযোগ্য তহবিল নিয়ে বসে আছেন, তাঁরা বুঝতে পারছেন না বর্তমান পরিস্থিতিতে কোথায় লগ্নি করবেন। এই জায়গা থেকেই শুরু করা যাক আমাদের আজকের আলোচনা।
চরম অস্থির বাজারে সব থেকে স্বস্তির জায়গা হল ব্যাঙ্ক আমানত। কোনও কোনও ব্যাঙ্কে মেয়াদি জমায় সর্বোচ্চ সুদের হার পৌঁছে গিয়েছে ১০ শতাংশের আশেপাশে। ১ বছর থেকে ১০ বছরের মেয়াদি জমায় স্টেট ব্যাঙ্ক দিচ্ছে ৯.২৫ শতাংশ। প্রবীণ নাগরিকদের ক্ষেত্রে আরও বেশি। ঝুঁকি যাঁদের ধাতে সয় না, তাঁদের জন্য এখন ব্যাঙ্ক আমানতই টাকা রাখার শ্রেষ্ঠ জায়গা। যাঁরা নিয়মিত টাকা জমাতে চান, তাঁরা এই বেলা খুলতে পারেন দীর্ঘ মেয়াদি রেকারিং ডিপোজিট অ্যাকাউন্ট।
৮ শতাংশ সুদে স্থির হয়ে থাকা ডাকঘর সঞ্চয় প্রকল্পগুলি চাকচিক্য হারিয়েছে ব্যাঙ্ক আমানতের পাশে। এরই মধ্যে মাসিক আয় প্রকল্প এবং পি পি এফ অ্যাকাউন্ট কিছুটা ব্যতিক্রম। এবং সেটা যথাক্রমে মেয়াদ শেষে ৫ শতাংশ বোনাস এবং করের ব্যাপারে বিশেষ সুবিধার জন্য। সুরক্ষার দিক থেকে ডাকঘর সঞ্চয় প্রকল্পগুলি অতি উত্তম। এখানে এখনও উৎস মূলে কর কাটা হয় না। যাঁদের করযোগ্য আয় নেই এবং রিটার্ন দাখিল করতে হয় না, তাঁদের জন্য ডাকঘর ভাল লগ্নির জায়গা।
১০০ মিটারের গতিতে ম্যারাথন দৌড়চ্ছে সোনা। ধরতে গেলেই ছ্যাঁকা লাগছে। সোনায় লগ্নির কথা অতীতে বহু বার বলা হয়েছে এই কলমে। মোট লগ্নির ১৫ থেকে ২০% এই প্রিয় ধাতুতে লগ্নি করা থাকলে ভাল। অনিশ্চয়তার জমানায় সুরক্ষা দেয় এই মূল্যবান ধাতু। পাশাপাশি জনপ্রিয়তা বাড়ছে রুপোরও। দীর্ঘ মেয়াদে একটু একটু করে সংগ্রহ করা যেতে পারে এই দুই ধাতু।
বাজারে এখন বন্ড ইস্যু করতে শুরু করছে অনেক বেসরকারি সংস্থা। ২ থেকে ৫ বছর মেয়াদে সুদের হার ১১.৫ শতাংশ থেকে ১২ শতাংশের আশেপাশে। এদের বেশির ভাগই আর্থিক সংস্থা। একটু বুঝেশুনে লগ্নি করা ভাল। একই কোম্পানিতে মোটা টাকা লগ্নি না-করে বিনিয়োগ এবং ঝুঁকি ছড়িয়ে দেওয়া যেতে পারে কয়েকটি সংস্থার মধ্যে।
ঋণ-নির্ভর মিউচুয়াল ফান্ড এই বাজারে ভালই। বিশেষ করে ফিক্সড ম্যাচিওরিটি প্ল্যান বা এফ এম পি। কম ঝুঁকিতে ভাল আয় এবং করের ব্যাপারে সুবিধা আছে এই প্রকল্পে। অস্থির বাজারে যাঁরা পুরোপুরি ইক্যুইটি প্রকল্পের ঝুঁকি নিতে চান না, তাঁরা লগ্নি করতে পারেন ব্যালান্সড ফান্ডেও। পরে শেয়ার বাজারে স্থিরতা ফিরলে লগ্নি সরিয়ে নিতে পারেন খাঁটি ইক্যুইটি প্রকল্পে। ঝুঁকিবিমুখ হলে বেছে নিতে পারেন ন্যাভ্ গ্যারান্টি অথবা ক্যাপিটাল প্রোটেকশন ওরিয়েন্টেড প্রকল্প।
সবশেষে আসা যাক ‘সুন্দরবন’-এ। জলে কুমির, ডাঙায় বাঘ। কিন্তু এখানেই পাওয়া যায় মধু। শেয়ার বাজার যেন আর এক সুন্দরবন। চরম বিপদসঙ্কুল। কিন্তু সময় মতো কৌশলে ঢুকতে পারলে ‘মধু’ নিয়ে বেরিয়ে আসতে পারেন অনেকেই। প্রয়োজন সাহস করে ঢুকে পড়া। সেই সময় হয়তো আসছে। ‘পুঁটি’ মাছের দরে এখন ‘ইলিশ’ বিকোচ্ছে কোনও কোনও দিন।
সোনা দ্বিগুণ হয়েছে আড়াই বছরে। তাই নিয়েই এখন প্রবল হইচই। শেয়ার কিন্তু দ্বিগুণ হতে পারে মাত্র ছ’মাস থেকে এক বছরের মধ্যেই। অনেক শেয়ারের ৫২ সপ্তাহের ওঠা-পড়ার পরিসংখ্যান তাই বলে। ২০০৮ থেকে ২০০৯-এর মধ্যে এই ঘটনা ঘটেছে বহু শেয়ারেই। আমরা আবার এগোচ্ছি তলানির দিকে। কম জলে মাছ ধরার (‘বটম্ ফিশিং’) এই সুযোগ নিশ্চয়ই হাতছাড়া করবেন না অনেকেই, ঝুঁকি নেওয়া যাঁদের ধাতে সয়। বৈশাখের ঝড়, জ্যৈষ্ঠের দহন এবং শ্রাবণের বর্ষণ যাঁদের ধাতে সয় না, তাঁরা অপেক্ষা করতে পারেন শরতের ফুরফুরে আবহাওয়ার জন্য। তত দিন পর্যন্ত লগ্নির টাকা জমা রাখতে পারেন ব্যাঙ্কের ছোট মেয়াদি আমানতে। ব্যাঙ্কগুলি এখন অত্যন্ত ভাল সুদ দিচ্ছে এক বছর পর্যন্ত মেয়াদি জমায়। লগ্নির দুনিয়ায় ভাল আবহাওয়ার ইঙ্গিত পেলে ওই টাকা তুলে তখন লগ্নি করা যেতে পারে উপযুক্ত প্রকল্পে। |
|
|
|
|
|