নিজস্ব সংবাদদাতা • রামপুরহাট |
সাত দিন বন্ধ থাকার পরে প্রশাসনিক হস্তক্ষেপে রামপুরহাট থানার শালবাদরা পাথর শিল্পাঞ্চলে অচলাবস্থা কাটল। অবোরধমুক্ত হল শিল্পাঞ্চলে যাওয়ার রাস্তা। ফলে শনিবার সকাল থেকে ফের পাথর বোঝাই গাড়ি চলাচল শুরু হয়েছে। ‘ওভারলোডিং’ বন্ধ করা, রাস্তায় ধুলো দূষণ নিয়ন্ত্রণ, এলাকার রাস্তা সংস্কার, বাইপাস ও ফুটপাথ নির্মাণ-সহ একাধিক দাবিতে গত ১৪ অগস্ট থেকে ময়ূরেশ্বর থানার মল্লারপুর স্কুল মোড় সংলগ্ন এলাকার বাসিন্দাদের একাংশ রাস্তায় বাঁশ বেঁধে অবরোধ শুরু করেন। শালবাদরা পাথর শিল্পাঞ্চলে যাওয়ার জন্য ময়ূরেশ্বরের আম্বা মোড় থেকে রামপুরহাটের ঠাকুরপুড়া পর্যন্ত সড়কে এই অবরোধ শুরু হওয়ায় পাথর বোঝাই করতে কোনও গাড়ি ঢুকতে পারেনি। পাশাপাশি শতাধিক পাথর বোঝাই গাড়ি শিল্পাঞ্চল এলাকা থেকে বেরোতেও পারেনি বলে অভিযোগ।
এই পরিস্থিতিতে অচলাবস্থা দূর করার জন্য বীরভূম জেলা প্রশাসন এবং রাজ্যের শ্রমমন্ত্রী পূর্ণেন্দু বসুর কাছে লিখিত আবেদন জানায় শালবাদরা স্টোন মাইনস অ্যান্ড ক্রাশার্স ওনার অ্যাসোসিয়েশন। লিখিত আবেদনে অ্যাসোসিয়েশনের তরফে জানানো হয়, গাড়ি চলাচল বন্ধ থাকায় পাথরশিল্প কার্যক মুখ থুবড়ে পড়েছে। এলাকার এলাকার ব্যবসা ও অর্থনীতি মার খাচ্ছে। ওই শিল্পের সঙ্গে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ভাবে যুক্ত শ্রমিক-কর্মীর রুজি বন্ধ হতে বসেছে। পাশাপাশি এই শিল্পাঞ্চলের পাথর দিয়ে যে-সব নির্মাণ কাজ চলছে, সেগুলিও ব্যাহত হচ্ছে।
বৃহস্পতিবার ময়ূরেশ্বর-১ ব্লক কার্যালয়ে মহকুমাশাসক (রামপুরহাট), এসডিপিও (রামপুরহাট), ময়ূরেশ্বর১-এর বিডিও, মল্লারপুর ১ পঞ্চায়েতের প্রধান, পূর্ত দফতরের সহকারী বাস্তুকার (মল্লারপুর বিভাগ), পাথর ব্যবসায়ী মালিক সমিতি এবং আন্দোলনকারীদের নিয়ে আলোচনা হয়। বৈঠকের পরে জট কাটে। বৃহস্পতিবার প্রশাসনিক হস্তক্ষেপে পাথর বোঝাই গাড়িগুলি শিল্পাঞ্চল এলাকা থেকে বের হয়। কিন্তু, নতুন করে কোনও গাড়িকে ওই এলাকায় ঢুকে পাথর বোঝাই করতে দেওয়া হয়নি। তবে শনিবার থেকে সেই ‘নিষেধাজ্ঞা’-ও উঠেছে। পাথর বোঝাই করার জন্য গাড়িকে শিল্পাঞ্চলে ঢুকতেও দিচ্ছেন আন্দোলনকারীরা।
মহকুমাশাসক বিধান রায় বলেন, “আন্দোলনকারীদের দাবি অনুযায়ী আম্বা মোড় থেকে কাষ্ঠগড়া পর্যন্ত পূর্ত দফতরের অধীনে থাকা রাস্তাটি দ্রুত সংস্কার করার জন্য সংশ্লিষ্ট দফতরের সহকারী বাস্তুকারকে বলা হয়েছে। মহম্মদবাজার থানার ডামরা থেকে রামপুরহাট থানার চাঁদনি পর্যন্ত একটি বাইপাস রাস্তা তৈরি করার চেষ্টাও চলছে। ওই বাসপাস হয়ে গেলে সেখান দিয়ে শালবাদরা পাথর শিল্পাঞ্চলে শুধুমাত্র খালি গাড়ি যাবে।” রাস্তায় ‘ওভারলোডিং’ বন্ধ করা ও ধুলো দূষণ নিয়ন্ত্রণ করার জন্য নজরদারি চালানোর আশ্বাসও দিয়েছেন মহকুমাশাসক।
মল্লারপুর ১ পঞ্চায়েতের প্রধান, কংগ্রেসের ধীরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “আন্দোলনকারীদের বেশিরভাগ দাবি আমি সমর্থন করি। তবে, রাস্তা অবরোধ করে সমস্যার সমাধান সমর্থন করি না। এ ছাড়াও পাথর শিল্পাঞ্চল এলাকায় স্বাভাবিক কাজকর্ম ব্যাহত হলে মল্লারপুরের ছোট থেকে বড় ব্যবসায়ীরাও আর্থিক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। ভাল মানের রাস্তা ও ফুটপাথ তৈরি করার জন্য পূর্ত দফতরকে বলব।” তিনি জানান, শালবাদরা শিল্পাঞ্চলে যাওয়ার জন্য মল্লারপুর রেলগেট এলাকায় একটি ‘ওভারব্রিজ’ তৈরি করার জন্য রেলমন্ত্রী, মুখ্যমন্ত্রী ও পূর্তমন্ত্রীর কাছে দাবি জানানো হবে।
শালবাদরা পাথর ব্যবসায়ী মালিক সমিতির সভাপতি শেখ সিরাজের কথায়, “ওভারলোডিং বন্ধ করার ব্যাপারে সর্বক্ষেত্রে প্রশাসনিক পদক্ষেপ করা উচিত।” তাঁর আরও দাবি, “ধুলো দূষণ বন্ধ করার জন্য আমাদের সংগঠন থেকে দু’বেলা রাস্তায় জল ছড়ানো হয়।” ওই সংগঠনের মুখপাত্র মৈনুদ্দিন হোসেন বলেন, “প্রশাসনের নির্দেশ আমরা সাধ্যমতো মেনে চলার চেষ্টা করব।” আন্দোলনকারীদের তরফে বলা হয়েছে, মহকুমাশাসকের আশ্বাসে শনিবার থেকে আন্দোলন সাময়িক বন্ধ হয়েছে। দাবিগুলি দ্রুত সমাধান করার জন্য প্রশাসনের কাছে আবেদন করা হয়েছে। |