মন্ত্রীদের কাছে ত্রাণের দাবিতে সরব দুর্গতরা
ন্যা পরিস্থিতি যত ঘোরালো হচ্ছে, তত বাড়ছে ত্রাণের জন্য হাহাকার।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে শনিবার বিভিন্ন প্লাবিত এলাকায় গিয়ে তেমনই অভিজ্ঞতা হল মন্ত্রী-বিধায়কদের। হুগলির খানাকুলে দুর্গতদের ক্ষোভের মুখে পড়লেন শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় এবং পর্যটনমন্ত্রী রচপাল সিংহ।
এ দিন প্রথমে খানাকুল-২ ব্লকের রাজহাটি-১ পঞ্চায়েতের রাজহাটি গ্রামে যান পার্থবাবু। পঞ্চায়েত অফিসের সামনে আগেই জড়ো হয়েছিলেন বহু মানুষ। পার্থবাবু পৌঁছতেই ত্রাণের দাবিতে তাঁরা সরব হন। সেখানে থেকে নৌকায় জলমগ্ন রামচন্দ্রপুর, কুশালি-সহ কয়েকটি গ্রামে যান পার্থবাবু। সঙ্গে ছিলেন জেলাশাসক শ্রীপ্রিয়া রঙ্গরাজন, পুলিশ সুপার তন্ময় রায়চৌধুরী এবং কয়েক জন দলীয় বিধায়ক। তখন তাঁদের ‘কথা শোনা হল না’, এমনই অভিযোগে গ্রামবাসীরা বিক্ষোভ শুরু করেন। পরে ফিরে এসে পার্থবাবু জনতার সঙ্গে কথা বলেন। ত্রাণ নিয়ে আশ্বাস দেন।
রামচন্দ্রপুরের বাসিন্দা অষ্ট বাগের ক্ষোভ, “তিন দিন ধরে গ্রামে টইটম্বুর জল। কিন্তু কেউ দেখতেও আসেনি। পঞ্চায়েতের মালপত্রও আসেনি। ঘরে খাবার নেই। বাইরে বেরনোর জো নেই।” রামচন্দ্রপুরের বাসিন্দা, তৃণমূলের প্রাক্তন পঞ্চায়েত সমিতির স্বাস্থ্য কর্মাধ্যক্ষ সত্যচরণ খাঁর অভিযোগ, “বিধায়ক (তৃণমূলের) এলাকায় আসেন না। তাঁর হয়ে যিনি তদারকি করেন, তাঁর কাছে মাসখানেক আগে দরকারে গিয়ে মার খেতে হয়েছিল। কোন ভরসায় তাঁর কাছে ত্রাণ চাইতে যাব? আমরা তৃণমূল করি, তাতেই এই হাল। সাধারণ মানুষের কথা সহজেই অনুমেয়।”
পার্থবাবু গ্রামবাসীদের বলেন, “যা ত্রাণ এনেছি, সেটা অপ্রতুল। আপনারা বিডিও-কে তালিকা দিন। আমরা প্রশাসনের তরফে নিশ্চয়ই ব্যবস্থা করব।” আশ্বাসে বিক্ষোভ থামে। গোঘাটেও ত্রাণের অপ্রতুলতা নিয়ে গ্রামবাসীদের ক্ষোভের কথা শুনতে হয় পার্থবাবুকে। সকালে খানাকুল-১ ব্লকের কোলেপুকুরে গিয়েছিলেন পর্যটনমন্ত্রী রচপাল সিংহ। তাঁর গাড়ি ঘিরে গ্রামবাসীরা বলতে থাকেন, “তিন দিন ঘরে জল। একটা ত্রিপলও দিল না প্রশাসন। আপনারা কী করছেন?”
খানাকুলের রাজহাটিতে বন্যা পরিস্থিতি খতিয়ে দেখছেন
শিল্পমন্ত্রী। শনিবার মোহন দাসের তোলা ছবি।
সাঁইবোনা গ্রামের শেখ লাল্টু, রাধাবল্লভপুরের দীনেশ রানাদের দাবি, এখনও তাঁরা ত্রাণ পাননি। অভিযোগ শুনে দলের জেলা সভাপতি তথা বিধায়ক তপন দাশগুপ্ত এবং খানাকুলের দলীয় নেতা শৈলেন সিংহকে প্রয়োজনীয় ত্রাণসামগ্রীর তালিকা তৈরির নির্দেশ দেন রচপাল। গ্রামবাসীদের বলেন, “একটু ধৈর্য ধরুন। সকলের কাছে যাতে ত্রাণ পৌঁছয়, আমরা তার চেষ্টা করছি।”
শনিবার বামফ্রন্টের তরফে একটি প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে অভিযোগ করা হয়েছে, প্রাকৃতিক এই বিপযর্য়ের মোকাবিলায় যুদ্ধকালীন তৎপরতায় প্রশাসনিক উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে না। বামফ্রন্টের দাবি, বিগত দিনগুলিতে বিভিন্ন স্তরের পঞ্চায়েত বন্যা কবলিত মানুষের পাশে থেকে সাহায্য-সহযোগিতা করেছে। তাই পঞ্চায়েতগুলিকেও এই কাজে নিয়োজিত করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে। পাশাপাশি, দুগর্তদের উদ্ধার, ত্রাণ ও সহায়তার কাজে রাজ্যের সর্বস্তরের মানুষকে এগিয়ে আসারও আহ্বান জানিয়েছে বামফ্রন্ট।
বৃষ্টি এবং ভরা কোটালে জল বাড়ায় পরিস্থিতির অবনতি হচ্ছে দুই ২৪ পরগনাতেই। এ দিন ক্যানিং মহকুমার জলমগ্ন এলাকাগুলি লঞ্চে পরিদর্শন করেন কলকাতার মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায় এবং সুন্দরবন উন্নয়নমন্ত্রী শ্যামল মণ্ডল। গোসাবার বাঘবাগান এলাকার বাসিন্দারা শোভনবাবুর কাছে ত্রাণের দাবি জানান। সঙ্গে থাকা গোসাবার বিডিও বিশ্বজিৎ পাণ্ডা ও দলীয় বিধায়ক জয়ন্ত নস্করকে শোভনবাবু নির্দেশ দেন আজ, রবিবারের মধ্যে ত্রাণের ব্যবস্থা করার। জেলা সভাধিপতি শামিমা শেখকে নিয়ে পাথরপ্রতিমার জলমগ্ন এলাকাগুলি পরিদর্শন করেন কেন্দ্রীয় তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী চৌধুরীমোহন জাটুয়া। রাজ্যের ত্রাণসচিব আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায় জেলাশাসকের সঙ্গে বৈঠক করে ক্যানিংয়ে যান। সেখানে প্রশাসনিক আধিকারিকদের সঙ্গে বৈঠক করেন পরিস্থিতি নিয়ে।
বন্যা-চিত্র
দুর্গত জেলা ১৫ মৃত ১৪
বন্যা কবলিত ব্লক ১৭১ বন্যা কবলিত পুরসভা ৫২
ক্ষতিগ্রস্ত ১৬ লক্ষ মানুষ ত্রাণশিবির ১১২
শিবিরে আশ্রিত ১৪ হাজার মানুষ
উত্তর ২৪ পরগনার বসিরহাট মহকুমার সন্দেশখালি, হিঙ্গলগঞ্জ-সহ বহু এলাকাও জলমগ্ন। লঞ্চে সন্দেশখালির আতাপুরে ঘোরার সময়ে খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক বলেন, “পরিস্থিতি যথেষ্ট ভয়াবহ।” দুর্গতেরা ত্রাণের অভাবের কথা জানালে তিনি বলেন, “জেলায় ১২ হাজার টন চাল দেওয়া হয়েছে। আরও পাঠানো হবে।” যে সব জায়গায় রান্না করা সম্ভব নয়, সেখানে আজ থেকে রান্না করা খাবার দেওয়ারও নির্দেশ দেন প্রশাসনিক আধিকারিকদের। ত্রাণ ও উদ্বাস্তু পুনর্বাসন দফতরের প্রতিমন্ত্রী মঞ্জুলকৃষ্ণ ঠাকুরের নেতৃত্বেও বিধায়কদের একটি দল গাইঘাটা, গোবরডাঙা এবং মছলন্দপুরের ত্রাণ শিবিরগুলিতে যায়। আইনমন্ত্রী মলয় ঘটক মঙ্গলকোটের সারংপুর, সুরুলিয়া, ভাতারের বসতপুর, চকপরাগ ইত্যাদি এলাকায় গিয়ে জলবন্দি মানুষের দুর্দশার কথা শোনেন। মঙ্গলবার বীরভূমের লাভপুরে মিরিটির কাছে কুঁয়ে নদীর বাঁধ ভেঙে প্লাবিত হয় ঠিবা পঞ্চায়েত এলাকার ৭-৮টি গ্রাম। মিরিটি ও বলরামপুর পরিদর্শনে যান পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রী চন্দ্রনাথ সিংহ। গ্রামবাসীর অভিযোগ, প্রতি বছর নদীবাঁধ ভেঙে বন্যা হলেও তা রোধ করতে স্থায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হয় না। চন্দ্রনাথবাবুর আশ্বাস, “আগে তো আমরা ক্ষমতায় ছিলাম না। এখন উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.