|
|
|
|
এসএসসি |
কমিশনের ভুলের মাসুল, চাকরি নেই সফল প্রতিবন্ধীর |
নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা |
ভুল স্কুল সার্ভিস কমিশনের। কিন্তু তার মাসুল দিতে হবে চাকরিপ্রার্থীকেই!
এক জন শারীরিক প্রতিবন্ধী চাকরিপ্রার্থীকে চিঠি দিয়ে এ কথা জানিয়েছেন স্কুল সার্ভিস কমিশনের অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি বেদাঙ্গ বিশ্বাস। এবং তাঁর সঙ্গেই সহমত হয়েছেন কমিশনের চেয়ারপার্সন চিত্তরঞ্জন মণ্ডল।
রাজ্যের স্কুল সার্ভিস কমিশনের শিক্ষক নিয়োগের একাদশতম পরীক্ষা হয় ২০১০ সালে। তাতে সাদার্ন রিজিয়নে ইতিহাস (পাস) বিভাগে লেখা পরীক্ষা এবং পার্সোনালিটি টেস্টে (ইন্টারভিউ) সফল হয়ে প্যানেলভুক্ত হন ওই প্রতিবন্ধী প্রার্থী অজিতা রায়। কিন্তু তাঁকে চাকরি দেওয়া যাবে না বলে জানিয়ে দিয়েছে স্কুল সার্ভিস কমিশন। এমনকী, তাঁর জায়গায় অন্য প্রার্থীকে নেওয়া হয়ে গিয়েছে বলেও কমিশন সূত্রের খবর। বিষয়টি নিয়ে কমিশনের চেয়ারম্যান চিত্তবাবুর কাছে অভিযোগ জানিয়েছিলেন অজিতাদেবী। তারই জেরে গত ৩ অগস্ট কমিশনের অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি বেদাঙ্গবাবু তাঁকে চিঠি দিয়েছেন। চিঠির বক্তব্য, সাদার্ন রিজিয়নে ইতিহাস (পাস) বিভাগে শারীরিক প্রতিবন্ধীদের জন্য একটি দৃষ্টিহীন শিক্ষিকা এবং দু’টি দৃষ্টিহীন কো-এড শূন্য পদ ছিল। দৃষ্টিহীন ছাড়া অন্য কোনও ধরনের শারীরিক প্রতিবন্ধীকে ওই শূন্য পদগুলিতে চাকরি দেওয়া যাবে না। অজিতাদেবী ‘অর্থোপেডিক্যালি হ্যান্ডিক্যাপড’। তাই তিনি চাকরি পাবেন না।
স্বাভাবিক ভাবেই অজিতাদেবীর প্রশ্ন, তিনি ‘অর্থোপেডিক্যালি হ্যান্ডিক্যাপ্ড’ জেনেও কমিশন তাঁকে লেখা পরীক্ষায় এবং পার্সোনালিটি টেস্টে ডাকল কেন এবং চূড়ান্ত প্যানেলেই বা তাঁর নাম রাখল কেন? বেদাঙ্গবাবুর লেখা চিঠিতে তার ব্যাখ্যা‘ওয়েস্ট বেঙ্গল রিজিওনাল স্কুল সার্ভিস কমিশন, সাদার্ন রিজিয়নের চেকিং স্টাফরা আপনাকে পার্সোনালিটি টেস্ট বোর্ডে ডেকে মারাত্মক ভুল করেছেন। যদিও আপনি জানতেন যে, অর্থোপেডিক্যালি হ্যান্ডিক্যাপডদের জন্য কোনও শূন্য পদ নেই।’ কমিশনের বক্তব্য, এ বছর গত ৩১ জানুয়ারি একটি ইংরেজি দৈনিক সংবাদপত্রে শূন্য পদের যে চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশিত হয়েছিল, সেখানেই বলা ছিল, সাদার্ন রিজিয়নে ইতিহাস (পাস) বিভাগে শারীরিক প্রতিবন্ধীদের মধ্যে শুধুমাত্র দৃষ্টিহীনদের পদ ফাঁকা রয়েছে। সেই প্রেক্ষিতেই বেদাঙ্গবাবু চিঠিতে লিখেছেন, অজিতাদেবী শূন্য পদের ‘প্রকৃত তথ্য’ জেনেও পার্সোনালিটি টেস্টে বসেছিলেন। আর কমিশন যে তাঁকে পার্সোনালিটি টেস্টে ডেকেছিল, সেটা তাদের চেকিং স্টাফদের ‘মারাত্মক ভুল’। যা এখন সংশোধন কতেই হচ্ছে। অর্থাৎ, অজিতাদেবী চাকরি পাবেন না।
বেদাঙ্গবাবুর বক্তব্য, “চিঠিতে যা লিখেছি, সেটাই প্রকৃত ঘটনা।” কমিশনের চেয়ারম্যান চিত্তবাবু বলেন, “অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারির চিঠির বক্তব্যের সঙ্গে আমি সহমত। আমি তদন্ত করে দেখেছি, এই ঘটনায় কোনও দুর্নীতি বা কারচুপি হয়নি। নিছক ভুল হয়েছে।” অজিতাদেবীর বদলে যে দৃষ্টিহীন প্রার্থীদের নেওয়া হচ্ছে, তাঁদের নাম কমিশনের প্যানেলে ওয়েটিং লিস্টে ছিল বলে চিত্তবাবু জানিয়েছেন।
কিন্তু অজিতাদেবীর অভিযোগ, ইংরেজি দৈনিক সংবাদপত্রে শূন্য পদের যে চূড়ান্ত তালিকা বেরিয়েছে, তা লেখা পরীক্ষার আগে কমিশনের প্রথম বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়নি! তখন শূন্য পদের ওই তথ্য জানা থাকলে তিনি পরীক্ষার আবেদনপত্র কিনতেনই না! এ ব্যাপারে চিত্তবাবুর যুক্তি, “লেখা পরীক্ষার আগে যখন বিজ্ঞপ্তি বেরোয়, তখন কমিশনের হাতে শূন্য পদের প্রাথমিক তথ্য থাকে। ওই বিজ্ঞপ্তি থেকে কাউন্সেলিং পর্যন্ত কয়েক মাসে শূন্য পদের তালিকা দীর্ঘতর হয়। শেষ পর্যন্ত যত শূন্য পদ হয়, সেটাই চূড়ান্ত তালিকায় উল্লেখ করা হয়।” চিত্তবাবুর আরও যুক্তি, লেখা পরীক্ষার আগের বিজ্ঞপ্তিতে শারীরিক প্রতিবন্ধী বিভাগে শুধু দৃষ্টিহীনদের জন্য শূন্য পদ আছে বলে উল্লেখ করলে অজিতাদেবীর মতো ‘অর্থোপেডিক্যালি হ্যান্ডিক্যাপড’ বা অন্য ধরনের শারীরিক প্রতিবন্ধীরা আবেদনই করতেন না। সে ক্ষেত্রে লেখা পরীক্ষা এবং কাউন্সেলিংয়ের মধ্যবর্তী সময়ে ‘অর্থোপেডিক্যালি হ্যান্ডিক্যাপড’দের জন্য শূন্য পদ তৈরি হলে তা পূরণ করার প্রার্থীই পাওয়া যেত না!
আর বেদাঙ্গবাবুর বক্তব্য, “অজিতাদেবীর মতো প্রতিবন্ধী প্রার্থীরা তো সংরক্ষণ ছাড়াই সাধারণ (জেনারেল) প্রার্থীদের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করে চাকরি পেতে পারেন। সেই পথ খোলা রাখতেই তাঁকে লেখা পরীক্ষায় ডাকা হয়েছিল।” অজিতাদেবী অবশ্য চিত্তরঞ্জনবাবু এবং বেদাঙ্গবাবুর এই ব্যাখ্যায় সন্তুষ্ট নন। তাঁর বক্তব্য, “কমিশনের অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি চিঠিতে নিজেদের চেকিং স্টাফদের ভুল স্বীকার করেছেন। সেই ভুলের মাসুল আমি কেন দেব? আমি মামলা করব।” যা জেনে বেদাঙ্গবাবুর প্রতিক্রিয়া, “গণতান্ত্রিক দেশে মামলা করার অধিকার সকলেরই থাকে। উনি মামলা করুন। কমিশনের বিরুদ্ধে অজস্র মামলা আছে। আরও একটা বাড়বে।” |
|
|
|
|
|