|
|
|
|
জলপথ পরিবহণ সমিতির বোর্ড ভাঙা নিয়ে চাপানউতোর |
দেবাশিস দাশ • কলকাতা |
নিত্য হাঙ্গামা। প্রতিবাদে আসাই বন্ধ করেছিলেন সমিতির পরিচালকমণ্ডলীর অনেক সদস্য। গণ্ডগোল এমন পর্যায়ে পৌঁছেছিল যে গঙ্গা-বক্ষে যাত্রী-লঞ্চ পরিষেবাই বন্ধ হওয়ার উপক্রম। শেষে বোর্ড সদস্যরাই রাজ্য সরকারকে জানিয়ে দেন, ওই সমিতি চালাতে তাঁরা অক্ষম। হুগলি নদী জলপথ পরিবহণ সমবায় সমিতির বোর্ড তাই ভেঙেই দিল রাজ্য সরকার। গত ৩১ বছর ধরে সিপিএমের নিয়ন্ত্রণে ছিল এই বোর্ড।
স্বাভাবিক ভাবেই সিপিএম এই পদক্ষেপকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে মনে করছে। সমিতির সম্পাদক, সিপিএম নেতা মোহন মণ্ডলের অভিযোগ, “সম্পূর্ণ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে এই বোর্ড ভেঙে দেওয়া হল। এর বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” তৃণমূল প্রভাবিত কর্মচারী সংগঠনের সভাপতি, বিধায়ক অশোক ঘোষের বক্তব্য, “ওই বোর্ড নির্বাচিত ছিল না, সিপিএমের মনোনীত। বোর্ডের অপদার্থতার জন্য কর্মীরা এত দিন ঠিক মতো
বেতনও পাননি।”
বোর্ড ভেঙে রাজ্য সরকার হাওড়ার সদর মহকুমা শাসক দিব্যেন্দু ভট্টাচার্যকে ওই সমবায়ের প্রশাসক নিয়োগ করেছে। মঙ্গলবার তিনি কার্যভার গ্রহণ করবেন। গত ১০ অগস্ট রাজ্য সরকার বিজ্ঞপ্তি জারি করে জানিয়ে দেয়, কর্মীদের একাংশের বাধায় সমবায়ের কাজকর্ম সুষ্ঠু ভাবে করা যাচ্ছে না। বোর্ড সদস্যরা ওই সমিতি চালাতে তাঁদের অক্ষমতার কথা রাজ্য সরকারকে জানিয়েছেন। তাই ভেঙে দেওয়া হচ্ছে বোর্ড।
এই বোর্ড যেমন সিপিএমের নিয়ন্ত্রাধীন ছিল, তেমনই এখানকার কর্মীদেরও বেশির ভাগ ছিলেন সিটু সমর্থক। তাই গণ্ডগোল খুব একটা প্রত্যাশিত ছিল না। সমিতি সূত্রে খবর, প্রথম গণ্ডগোল বাধে ২০১০ সালের জুলাই মাসে, হাওড়ার সিপিএম বিধায়ক ও সমিতির ২৭ বছরের চেয়ারম্যান লগনদেও সিংহকে ঘিরে। নতুন বোর্ড গঠনের মুখে সমিতির সভায় লগনদেওবাবুর বিরুদ্ধে লঞ্চ কেনা নিয়ে দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে। অভিযোগ তোলেন সিটু সমর্থিত কর্মীদেরই একাংশ। হাওড়ার ওই দাপুটে সিপিএম নেতার বিরুদ্ধে দল তদন্ত কমিশনও গঠন করে এবং কমিশন তাঁকে দোষী সাব্যস্ত করে। শাস্তি হিসেবে জেলা কমিটির সদস্যের পদ খোয়াতে হয় তাঁকে। এমনকী, গত বিধানসভা নির্বাচনে তাঁকে টিকিটও দেয়নি দল। সে বার সমিতির চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন সিপিএমেরই প্রবীণ নেতা বিশ্বনাথ ঘোষ।
যদিও তাতেও গণ্ডগোল থামেনি। এক দল সিটু সমর্থিত কর্মী ৪০ শতাংশ বেতন বাড়ানোর দাবিকে সামনে রেখে আন্দোলন শুরু করেন। সমিতির দফতরে কর্মীদের নিজেদের মধ্যে ভাঙচুর, মারপিট নিত্যদিনের ঘটনা হয়ে দাঁড়ায়। অভিযোগ, গত ২০ জানুয়ারী বিশ্বনাথবাবুকে রাত পর্যন্ত অফিসে আটকে রেখে সিটু সমর্থিত কর্মচারীদের একাংশ জোর করিয়ে তাঁকে দিয়ে ৪০ শতাংশ বেতন বৃদ্ধির ঘোষণায় সই করিয়ে নেন। এই ঘটনার কথা শিবপুর থানায় লিখিত ভাবে জানান বিশ্বনাথবাবু। প্রতিবাদে পরিচালকমণ্ডলীর ১২ জন সদস্য হাওড়ার লঞ্চঘাট অফিসে আসা বন্ধ করে দেন। ওই বেতন বৃদ্ধির পরে সংস্থার প্রায় পৌনে দু’কোটি টাকা লোকসান হয় বলে সমিতির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। সরকারের পক্ষে যুক্তি, টাকা ও রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে লঞ্চ পরিষেবা যে কোনও দিন মুখ থুবড়ে পড়ার আশঙ্কা দেখা দেয়। তাই ভেঙে দেওয়া হয়েছে বোর্ড। |
|
|
 |
|
|