শুকনো চামড়া আর খরাগ্রস্ত জমি, দু’টোর কোনওটাই আমরা চাই না। আমাদের ত্বক ফেটে গেলে ঠিক খরাগ্রস্ত জমির মতোই দেখতে লাগে, কোনও সাজগোজই শুকনো চামড়ার ওপর মানায় না। সুতরাং প্রথমে আমাদের ত্বককে ঠিক করতে হবে। কিন্তু শুষ্ক ত্বকের কারণ না জেনে স্নো পাউডারের একশো প্রলেপ লাগালেও কোনও কাজ হবে না। ডা. সুব্রত মালাকার এই শুষ্ক ত্বক বিষয়ে কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেছেন। |
• শুষ্ক ত্বকটির কোনও উজ্জ্বলতা থাকবে না এবং মনে হবে ত্বকটি প্রাণহীন।
• খোসাখোসা উঠবে।
• হাত দিয়ে অনুভব করলে ত্বকের উপরিভাগটি অল্প খসখসে মনে হবে।
হাত দিয়ে অনুভব করলে ত্বকের উপরিভাগটি অল্প খসখসে মনে হবে। |
ত্বক থেকে বেশি পরিমাণ জল বেরিয়ে গেলে তবেই শুষ্ক ত্বক হয়। যেমন
• বেশি পরিমাণে ডিটারজেন্ট ব্যবহার করলে ত্বক শুষ্ক হয়।
বারে বারে স্নান করলে জল বেরিয়ে যায়।
• ত্বকে যদি ফ্যাটের পরিমাণ কম হয়।
• যদি কোনও ব্যক্তি গরম জলে স্নান করেন বা সেঁক নেন। তাই এই সমস্যা শীত প্রধান দেশের লোকদের ক্ষেত্রে বেশি দেখা যায়।
• ফেনাযুক্ত তরল সাবান ব্যবহার করলে।
• অধিক সুগন্ধিযুক্ত সাবান ব্যবহার করলে। এই ধরনের সাবানগুলিতে ফ্যাটের পরিমাণ কম হয় ফলে ত্বক দ্রুত শুষ্ক হয়ে যায়।
• দিনের বেশির ভাগ সময় শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত পরিবেশে থাকলে।
• প্রায়শই প্লেনে যাতায়াত করলে শুষ্ক ত্বকের সমস্যা দেখা দেয়।
• বয়সবৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে ত্বক অবশ্যই শুষ্ক হবে।
• যে সব ব্যক্তি খুব চাপের মধ্যে কাজ করেন, তাঁদের ত্বক শুষ্ক হয়। |
|
|
ত্বকে জল কম হলে আমাদের ত্বক শুষ্ক হয়। সুতরাং ত্বকের মধ্যে জলের ভারসাম্য বজায় রাখতে হবে। এই ভারসাম্য বজায় রাখতে ময়শ্চারাইজারের সাহায্য নিতে হবে।
ময়শ্চারাইজারের কাজ
• ত্বক থেকে যে জল উবে যাচ্ছে, সেটিকে রোধ করে।
• বিভিন্ন ফ্যাট জাতীয় পদার্থ দিয়ে ত্বকে একটা প্রাচীর গড়ে তুলে।
• ত্বকের জলধারণের ক্ষমতাকে বৃদ্ধি করে।
• শরীরের ভেতরের জল ও গ্লিসারলকে ত্বকের এপিডারমিস স্তরে আনতে সাহায্য করে।
ময়শ্চারাইজার দু’রকম হয়
• এটি লাগানোর পর ত্বকের ভেতরের জলকে বাইরে আসতে দেয় না।
যত ক্ষণ এটি ত্বকের সঙ্গে থাকে, তত ক্ষণ পর্যন্ত এর কাজ থাকে। পরে আর থাকে না। অর্থাৎ বার বার লাগাতে হবে।
পেট্রলাটাম পদার্থ দ্বারা যে ময়শ্চারাইজার তৈরি হয়, সেটি সবচেয়ে ভাল। এটি ব্যবহার করলে মুখে ব্রণ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে না। অ্যালার্জিও কম হয়। এটির একটি তৈলাক্ত ভাব থাকে। এর সঙ্গে অন্য পদার্থ মিশিয়ে ভাল ময়েশ্চারাইজার তৈরি করা হয়।
মিনারেল অয়েল এটি বহুল ব্যবহৃত ময়শ্চারাইজার। এটি ব্যবহার করলে ত্বকের শুষ্ক ভাব দ্রুত কমে যায়।
ল্যানোলিন এটি ভেড়ার সিবাম থেকে তৈরি হয়। বেশির ভাগ জনের এটি সহ্য হয় না। অ্যালার্জির পরিমাণও খুব বৃদ্ধি পায়। এখন অবশ্য ল্যানোলিন পরিশ্রুত রূপে ব্যবহার করা হয়।
• ন্যাচরাল অয়েল এটি অতিরিক্ত ফ্যাটি (স্নেহ) পদার্থ দিয়ে তৈরি, যার ফলে এটি ত্বকে একটি প্রাচীর গড়ে তোলে এবং ত্বকের একটি প্রতিরোধ ক্ষমতাও তৈরি করে।
লিনোলিক অ্যাসিড এটি একটি এমন ধরনের ফ্যাটি অ্যাসিড, যা আমাদের ত্বকের জন্য খুবই প্রয়োজনীয়। কিন্তু শরীর এটি তৈরি করতে পারে না। বাইরে থেকে, অর্থাৎ বিভিন্ন খাবার থেকে আমাদের আহরণ করতে হয়। যেমন নারকেল, বাদাম, সূর্যমুখী তেল, ডিমের কুসুম, গরুর দুধ, সয়াবিন, অলিভ অয়েল, জোজোবা অয়েল ইত্যাদি। |
শুষ্ক ত্বক থেকে যে বলিরেখা হয়, তা সবচেয়ে ভাল প্রতিরোধ করে গ্লিসারল। এ ক্ষেত্রে ইউরিয়া খুবই উপকারী। যে ইউরিয়া ক্রিম বাজারে পাওয়া যায়, তা ব্যবহার করা যায়। কিন্তু দেখে নিতে হবে ইউরিয়ার পরিমাণ শতকরা দশের বেশি যেন না হয়। ইউরিয়া ক্রিম কখনওই চুলকানি হতে দেয় না। কয়েক ধরনের অ্যাসিড আছে, যেগুলি শুষ্ক ত্বকের জন্য খুবই উপকারী। যেমন গ্লাইকলিক অ্যাসিড এটি বিভিন্ন ক্রিমে দেওয়া থাকে।
ল্যাকটিক অ্যাসিড রোদ্দুরের জন্য ত্বকের যে ক্ষতি হয় এবং ত্বক খসখসে হয়ে যায়, সেটি কম হয়।
ময়শ্চারাইজার সবচেয়ে বেশি দামি হয় যেগুলিতে কোলাজেন যুক্ত থাকে। কিন্তু এই কোলাজেন যুক্ত দামি ময়শ্চারাইজার ব্যবহার কতটা ঠিক, সেটি জেনে নেওয়া দরকার। ত্বকের অভ্যন্তরে কোনও পদার্থ যদি প্রবেশ করে, তার ওজন হতে হবে ৫০০০ ডালটন (একটি পরিমাপক), বা তার নীচে। কিন্তু বেশির ভাগ ক্ষেত্রে এই কোলাজেনের নির্যাস বা তার মলিকিউলার-এর ওজন থাকে ১৫,০০০-৫০,০০০ ডালটন, যা ত্বকের পক্ষে ক্ষতিকারক।
ত্বকের চাকচিক্যের থেকেও বেশি প্রয়োজন ত্বককে সুস্থ রাখা, ত্বকের ঠিকঠাক যত্ন নেওয়া। বাজারের যে কোনও জিনিস ব্যবহারের আগে সেটি সম্বন্ধে ঠিক ভাবে জেনে তার পর ব্যবহার করুন। |
যোগাযোগ: ২৩৫৮ ৮০১০, ৯৪৩৩০ ২৩৮৭৯
সাক্ষাৎকার: কস্তুরী মুখোপাধ্যায় ভারভাদা |