পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করলে বাঙালি বাড়ির দাদু-ঠাকুমারা ‘বেঁচে থাকো বাবা’ বলে আশীর্বাদ করেন। হিন্দিতে যেমন বয়োজ্যেষ্ঠদের চল আছে বলার, মেরি উমর তুঝে লগ যায়! আর চাইনিজরা তাঁদের সম্রাটের জন্য দশ সহস্র বৎসর আয়ু কামনা করে থাকেন। ইওহান ওয়াংসুই! ওয়াংসুই!
তবে, শুধু প্রার্থনাতেই নয়, চিনেরা বাস্তবিকই দীর্ঘায়ুর অধিকারী হয়। আর এই দীর্ঘজীবনের নেপথ্যে রয়েছে জীবনভর সংযম ও মাপজোক করা খাদ্যাভ্যাস। সুসিদ্ধ খাদ্যেই তাঁদের সিদ্ধিলাভ, এই সত্য ইতিহাস-প্রসিদ্ধ। ভাজাভুজি, তেলমশলা, ঝালঝোল-এর ত্রহ্যস্পর্শ থেকে চৈনিকরা মুক্ত। |
এবং এই মুক্তি তাঁদের রেসিপির কল্যাণেই। তার ওপরে রয়েছে চাইনিজ রান্নায় বহুবিধ হার্বস অর্থাৎ ভেষজের ব্যবহার যা শুধু স্বাদ নয়, স্বাস্থ্যেরও গ্যারান্টি বহন করে। যেমন ধরুন, জিনসেং স্যুপ, এনার্জি ও লং লাইফের ক্ষেত্রে তো প্রতিষ্ঠিত সত্য। অথবা চাইনিজ গ্রিন টি, এমন ফ্রেশ বেভারেজ, যা জীবনকে লম্বা লম্বা পা ফেলে এগিয়ে দেয় অনেকটা পথ। চিনেদের ইন ও ইয়াং দর্শনেও রয়েছে শরীরে ঠান্ডা ও গরমে ভারসাম্যের খতিয়ান, যে ব্যালেন্স তাঁদের খাবার-দাবারেও রয়েছে। প্যান গ্রিলিং এই টেকনিকে রয়েছে ডিপ ফ্রাই না করেও তেলে রান্না করা স্বাস্থ্যসম্মত অথচ সুস্বাদু পদের সিক্রেট। না না, বেজিং বা সাংহাই যাওয়ার দরকার নেই, হাতের কাছের যে-কোনও মেনল্যান্ড চায়না আউটলেটের লঞ্জিভিটি ফেস্টিভ্যালে গেলেই এই রেসিপির স্বাদ পাবেন।
কিন্তু তার মানে এই নয় যে, কাল থেকে আপনাকে চাইনিজ রেসিপি আপন করে নিতে বলছি। বলার উদ্দেশ্য একটাই, বাঙালি রান্নাতেও কি আনা যায় না সেই সুস্বাস্থ্যের স্বাদ, সেই সুদীর্ঘ জীবনের আশ্বাস? অবশ্যই যায়, তার জন্য একটু এক্সপেরিমেন্ট করতে হবে। |
ফিরিয়ে আনতে হবে এমন অনেক টোটকা-টিপস, যা ঠাকুমা-দিদিমারা রান্না করতে গিয়ে ব্যবহার করতেন। এখানে মনে রাখতে হবে, আমাদের পূর্বপুরুষদের স্বাস্থ্য কিন্তু আমাদের এখনকার প্রজন্ম থেকে অনেকটাই বেশি তেজিয়ান ছিল। তার জন্য শুধু পলিউশন-ফ্রি পরিবেশ নয়, খাবার ও খাওয়ার অভ্যেসও অনেকটা দায়ী।
আমার এক বন্ধু ঠাট্টা করে এক বার বলেছিল, বাংলায় শুধু নাকি বিপ্লব দীর্ঘজীবী হয়, বাঙালি হয় না! এটা যে কত বড় সত্যি কথা, তার প্রমাণ আমাদের সাহিত্য আর ইতিহাসের পাতাতেই তো লেখা আছে। সে পেটরোগা, পিলের জ্বর আর পাণ্ডুরোগে ভোগা সুকুমার রায়ের সৎপাত্র বিশেষ, টেনিদার চোখে চিরকালের প্যালারাম ও-সব দীর্ঘজীবন-টিবন নিয়ে মাথা ঘামাতে বাঙালিবাবু রাজি নয়।
মাও জে দং শুনেছি রাত আটটায় ডিনার করতেন, আর বিপ্লবী রাত দশটার সময় পাড়ার মোড়ে চা খেয়ে রাজাউজির মেরে এসে বুক ভরা অম্বল নিয়ে ডিনার করতে বসে। সাধে কি আর বাংলাতে বিপ্লবও দীর্ঘজীবী হল না! |