মজুরি বৃদ্ধির দাবিতে সাধারণ ধর্মঘটের ডাক দিয়েছিল চা শ্রমিকদের ৩৬টি ট্রেড ইউনিয়ন। ওই ধর্মঘট সফল করতে শুক্রবার শিলিগুড়ি দাপালেন রাজ্যের প্রাক্তন পুরমন্ত্রী অশোক ভট্টাচার্য। সকালে নিজেই সমস্ত চা বাগান ঘুরে ধর্মঘটী শ্রমিকদের রাস্তায় নামালেন। এমনকী, শিলিগুড়িতে পুলিশ তাঁর দলের সমর্থকদের গ্রেফতার করার পরে ধৃতদের মুক্তি চেয়ে দলবল নিয়ে হিলকার্ট রোডে বসে পড়লেন। চাপে পড়ে পুলিশ কর্তারা ধৃতদের দুপুর ১২টার মধ্যে ছেড়ে দেওয়ার আশ্বাস দিলে রাস্তা ছেড়ে সরে দাঁড়ান তিনি। ততক্ষণে অচলই হয়ে পড়েছে গোটা শহর। পুলিশ কর্তাদের ধমকে প্রাক্তন পুরমন্ত্রী বলেন, “মনে রাখবেন, এক মাঘে শীত যায় না। পাঁচ বছর পর আবার বামফ্রন্ট ক্ষমতায় ফিরবে। সেটা মাথায় রাখা উচিত।” |
চা শ্রমিকদের মজুরি চুক্তি নিয়ে পর পর তিনটি ত্রিপাক্ষিক বৈঠক ব্যর্থ হওয়ার পরে এ দিন কোঅর্ডিনেশন কমিটি এবং ডিফেন্স কমিটি অনুমোদিত ৩৬টি সংগঠন উত্তরবঙ্গ জুড়ে ধর্মঘট পালনের ডাক দেয়। মালদহ কিংবা কোচবিহারে ওই ধর্মঘটের কোনও প্রভাবই পড়েনি। নকশালপন্থীরা ধর্মঘটে সামিল হওয়ায় দক্ষিণ দিনাজপুরে আংশিক প্রভাব পড়ে। উত্তর দিনাজপুর এবং জলপাইগুড়ির চা বলয় ছাড়া অন্যত্র তেমন কোনও প্রভাব ছিল না। শিলিগুড়িতে এ দিন বিভিন্ন চা বাগানে আদিবাসী বিকাশ পরিষদের সমর্থকেরা কাজে যোগ দিলেও সাধারণ ধর্মঘটের জেরে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। ৩১ ও ৫৫ নম্বর জাতীয় সড়কের নানা জায়গায় অবরোধ হয়। বিধাননগরের কাছে সৈয়দাবাদে আটকে পড়েন দূরপাল্লার বাসের যাত্রীরা। নিউ জলপাইগুড়ি থেকে শিলিগুড়িতে ঢুকতে গিয়ে নাকাল হন ট্রেন যাত্রীরা।
সকাল থেকেই এ দিন সাধারণ ধর্মঘটের সমর্থনে সিপিএম, সিপিআই (এমএল) লিবারেশন, এসইউসি-সহ বেশ কয়েকটি সংগঠনের পক্ষ থেকে শহরে মিছিল বার করা হয়। সকাল ১০টা নাগাদ হিলকার্ট রোডে গাড়ি আটকানোর অভিযোগে পুলিশ সিপিএমের এক কর্মীকে আটক করে। তার পরেই উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। সিপিএম সমর্থকেরা পুলিশের হাত থেকে ওই কর্মীকে ছিনিয়ে নেন। ওই কর্মীকে নিয়ে মিছিল বার করেন তাঁরা। খবর পেয়ে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার অমিত জাভালগির নেতৃত্বে পুলিশ কর্মীরা সিপিএম কাউন্সিলর জয় চক্রবর্তী ও যুব নেতা শঙ্কর ঘোষ-সহ ২৬ জন সিপিএম কর্মীকে গ্রেফতার করেন। গ্রেফতারের খবর পেয়েই হাসমি চকে বসে পড়েন প্রাক্তন পুরমন্ত্রী। তার সঙ্গে সামিল হন সিপিএম নেতা জীবেশ সরকার, সিপিআইয়ের উজ্জ্বল চৌধুরী-সহ শরিক দলের অন্য নেতারা। শেষ পর্যন্ত ধৃতদের মুক্তির ব্যাপারে পুলিশ আশ্বাস দেওয়ার পরে ওই এলাকা ছাড়েন পুরমন্ত্রী। শিলিগুড়ি শহরের নানা এলাকা থেকে ১৯৫ জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। জলপাইগুড়িতে গ্রেফতার হন ২১ জন। আন্দোলনকারী শ্রমিকদের তরফে প্রাক্তন পুরমন্ত্রী বলেন, “চা শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধির দাবি পূরণ না-করে রাজ্য সরকার নানা সংগঠনের মধ্যে বিভেদ গড়ে ফায়দা তুলতে চাইছে। সেটা হতে দেব না।” উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রী গৌতম দেব বলেন, “আমরা চা শ্রমিকদের পাশেই আছি। তবে আগে বাগানের পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে হবে। তার পর আলোচনায় বসে সমাধানসূত্র খোঁজা হবে।” শিলিগুড়ি পুরসভায় এ দিন আইএনটিইউসি সমর্থিত পুর কর্মচারী সমিতির অস্থায়ী শ্রমিকেরা মজুরি বৃদ্ধির দাবিতে গেট বন্ধ করে বিক্ষোভ দেখালে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়।
|