|
|
|
|
সঙ্কীর্ণ রাস্তায় হাঁসফাঁস কৃষ্ণনগর |
নিজস্ব সংবাদদাতা • কৃষ্ণনগর |
সারা শহরের কোথাও গাড়ি রাখার আলাদা করে জায়গা নেই। অগত্যা দোকানের সামনে রাস্তার উপরেই দাঁড়িয়ে থাকছে চার চাকা থেকে দু’চাকার বিভিন্ন গাড়ি। সাধারণ মানুষের চলাফেরা করাই তাই দুষ্কর। গাড়ির ফাঁসে শহরের বহু মোড়ই বিপজ্জনক আকার নিচ্ছে। বৃষ্টি শুরু হওয়ায় সমস্যা বহু গুণ বেড়েছে।
রাজা কৃষ্ণচন্দ্রের এই প্রাচীন শহরটি এমনিতে একেবারেই অপরিকল্পিত ভাবে তৈরি। শহরের প্রধান রাস্তাগুলোর দু’পাশ ঘেঁসে গড়ে উঠেছে অজস্র দোকানপাট। প্রধান রাস্তাগুলোও যতটা প্রয়োজন, ততটা চওড়া নয়। আর শহরের ভিতরের ছোট রাস্তাগুলো খুবই সরু সরু। তার পাশে পাশেই দোকান। তাতে রাস্তার পরিসর কমে যাওয়ায় এক দিকে যেমন যানবাহনের গতি কমেছে, তেমনই বেড়েছে দুর্ঘটনার আশঙ্কা। শহরের পোস্ট অফিস মোড় থেকে চ্যালেঞ্জ মোড়ের মতো জনবহূল রাস্তা এবং পোস্ট অফিস মোড় থেকে আনন্দময়ী তলা পর্যন্ত সড়কটির দু’পাশে রয়েছে একাধিক বড় বড় দোকান এবং গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন দফতর ও ভবন। কৃষ্ণনগর শহর ও তার বাইরে থেকে অনেকেই বিভিন্ন প্রয়োজনে রোজ আসেন এই সব এলাকায়। যেমন নেদেরপাড়া মোড় থেকে এ ভি স্কুলের মোড়, অনন্তহরি মিত্র রোড, পোস্ট অফিস মোড় থেকে সদর মোড় পর্যন্ত মনমোহন ঘোষ স্ট্রিট, সদর মোড় থেকে স্টেশন পর্যন্ত দ্বিজেন্দ্রলাল রায় রোড এই সব রাস্তাগুলিরই একই অবস্থা। যেমন জনবহূল, তেমনই সরু।
সেই সরু রাস্তাতেই আবার চলে বাসে বাসে রেষারেষি। কখনও একটি বাস দাঁড়িয়ে থাকে অনেকক্ষণ। তার পিছনের বাসটি এগিয়ে যেতে গেলে রাস্তা জুড়ে যেতে হয়। সেই সঙ্গেই শহরে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে ছোট গাড়ি। মোটরবাইক, রিকশা, সাইকেল, ছোট ভ্যান দাঁড়িয়ে থাকে বড় রাস্তার উপরেই। গা বাঁচিয়ে কোনও গাড়ির পক্ষেই যাতায়াত করা সম্ভব নয়। লাইন দিয়ে যে ভাবে সাইকেল, মোটরবাইক কখনও ভ্যান দাঁড়িয়ে থাকে, তাতে দুর্ঘটনার আশঙ্কা থাকে সর্বক্ষণ। অনন্তহরি মিত্র রোডের বাসিন্দা স্বদেশ রায় বলেন, “ছোটখাট দুর্ঘটনা ঘটেও মাঝে মধ্যেই। অভিযোগ, প্রশাসন সব জেনেও চুপ করে রয়েছে, বড় দুর্ঘটনা না ঘটলে কারও টনক নড়বে না।” তিনি বলেন, “এই সেদিন একটি মিষ্টির দোকানের সামনে রাস্তার উপরে দাঁড়িয়ে ছিল একটি গাড়ি। পিছন থেকে আসছিল একটি মোটরবাইক। গাড়িটির দরজা খুলতেই ধাক্কা লাগে মোটরবাইকটির সঙ্গে। মোটরবাইক আরোহী ছিটকে পড়েন রাস্তায়। তিনি মারা গিয়েছেন।” ফোয়ারার মোড়ে দাঁড়িয়ে থাকা একটি সাইকেলের জন্য টাল সামলাতে না পেরে রাস্তায় মুখ থুবড়ে পড়ে লরির সঙ্গে ধাক্কায় পঞ্চম শ্রেণির এক ছাত্রের মৃত্যুর ঘটনাও শহরবাসী এখনও ভুলতে পারেনি।
নদিয়া জেলা বাসমালিক সমিতির সহ সম্পাদক অসীম দত্ত বলেন, “রাস্তার উপরে গাড়িগুলি এমন ভাবে দাঁড়িয়ে থাকে, যাতে প্রতি মুহূর্তে দুর্ঘটনার পরিস্থিতি তৈরি হয়। দুর্ঘটনা ঘটেও।” তিনি বলেন, “যানবাহনের গতিও স্লথ হয়ে যায়। সময় ঠিক রাখতে তখন শহরের বাইরে গেলে বাসের গতি বাড়াতে হয়।” তাঁর কথায়, “প্রশাসন, পুলিশ সকলকেই বলেছি। কিন্তু কোনও ফল হয়নি।” পুরপ্রধান অসীম সাহা বলেন, “মূল শহরে আলাদা করে গাড়ি দাঁড় করানোর মতো জায়গা নেই। ফলে রাস্তার দু’পাশও বেআইনি দখল রয়েছে। এর আগেও আমরা রাস্তা দখলমুক্ত করেছি। কিন্তু প্রশাসনের তেমন সাহায্য পাইনি।” সদর মহকুমাশাসক পূর্ণেন্দু মাজি বলেন, “সমস্যাটি আমারও চোখে পড়েছে। শহরের রাস্তা এমনিতেই প্রয়োজনের তুলনায় সংকীর্ণ। তার উপরে বেআইনি দোকানপাটও গড়ে উঠেছে। পুরসভার সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” |
|
|
|
|
|