|
|
|
|
সুশান্তর বাড়ি ঘিরে তুমুল উল্লাস |
দলের উপরেই ভরসা রাখছেন স্ত্রী |
সুমন ঘোষ • চন্দ্রকোনা রোড |
কঙ্কাল-কাণ্ডে স্বামী সিআইডি-হেফাজতে। বাড়ির বাইরে তৃণমূলের নেতৃত্বে চলছে ‘উল্লাস’। এই অবস্থায় ‘লড়াই’য়ের বিষয়টা দলের উপরেই ছাড়ছেন সুশান্ত ঘোষের স্ত্রী করুণা। পাশাপাশি, জানিয়ে দিচ্ছেন, পরিবর্তিত ‘পরিস্থিতি’তেও তিনি ভয় পাচ্ছেন না।
চন্দ্রকোনা রোডে বাড়ির সামনে শুক্রবার সকাল থেকেই শুরু হয়েছিল ‘হুল্লোড়’। সুশান্তবাবুর গ্রেফতার হওয়ার ‘আনন্দে’ সবুজ আবির নিয়ে ‘মাতামাতি’ করছিলেন তৃণমূল সমর্থকেরা। মাইক বাজিয়ে, পটকা ফাটিয়ে, কুশপুতুল পুড়িয়ে মিছিল ঘুরে বেড়াচ্ছিল বাড়ির অদূরে। তালাবন্ধ ঘরের ভিতরে করুণাদেবী নির্লিপ্ত। তাঁর কথায়, “রাজনীতি করলে সুনাম যেমন হয়, দুর্নামও হয়। আমাদের কাছে পার্টিই সব। রাজনৈতিক মতামত দেবেন দলের নেতারা। ব্যক্তিগত কোনও মত নেই।” |
সুশান্তর স্ত্রী করুণা |
প্রাক্তন মন্ত্রী বা বর্তমান বিধায়কের স্ত্রী করুণাদেবীর পরিচয় এতেই সীমাবদ্ধ নয়। তিনি নিজেও সিপিএমের পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা কমিটির সদস্য। পেশায় প্রাথমিক বিদ্যালয়ের এই শিক্ষিকা এ দিন বাড়ির সামনে প্রবল ‘হুল্লোড়ের’ কারণেই স্কুলে যেতে পারেননি। তাতেই খানিকটা ক্ষুব্ধ। তাঁর মন্তব্য, “আমার অবাক লাগছে, বাড়ির সামনে এত উল্লাস কেন!” তবে ‘উল্লাস’ যতই চলুক এই বাড়ি ছেড়ে যে যাবেন না, তা-ও সাফ জানিয়ে দিয়েছেন করুণাদেবী। তাঁর কথায়, “ছোটবেলায় আমার বাবা কোনও দিন ভূতের গল্প বলেননি। আজও |
|
কোনও ভয় পাই না। বাবা বলতেন, আদর্শের কথা। মানুষের জন্য কাজ করার কথা। সেটাই করতে চাই। খোঁজ নিয়ে দেখুন, কারও সঙ্গে কোনও দিন খারাপ ব্যবহার করেছি কি না!” বৃহস্পতিবার সকালেই টেলিফোনে কথা হয়েছিল স্বামীর সঙ্গে। তার পরে করুণাদেবী স্কুলে চলে যান। সুশান্তবাবু দুপুরে কলকাতা থেকে পৌঁছন মেদিনীপুর আদালতে। সন্ধ্যায় টিভির খবরেই যা জানার, জেনে যান করুণাদেবী। দলের এক রাজ্য নেতাও ফোন করেন। আইনি লড়াইয়ের দায়িত্ব পার্টিই নেবে বলে জানিয়ে দেন সেই নেতা। করুণাদেবী বলেন, “আমাদের তো পার্টিই সব। আলাদা করে আর কী চিন্তা করব?”
এ দিন চন্দ্রকোনা রোডে বড় মিছিল বের করেছিল তৃণমূল। স্টেশনপাড়ার মাঠ থেকে মিছিল যাওয়ার কথা ছিল প্রাক্তন মন্ত্রীর বাড়ির সামনে। সেখানেই কুশপুতুল দাহ করারও সিদ্ধান্ত হয়েছিল। কিন্তু ‘উন্মত্ত’ জনতা যদি সুশান্ত ঘোষের বাড়িতে হামলা চালায়? তৃণমূলের সর্বময় নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এমন ‘অনভিপ্রেত পরিস্থিতি’ চান না বলে দলের জেলা নেতৃত্ব স্থানীয় কর্মী-সমর্থকদের স্পষ্ট জানিয়ে দেন। মিছিল অন্য দিকে ঘুরিয়ে দেওয়া হয়। তার পরেও অবশ্য মিছিলে চলে যায় প্রাক্তন মন্ত্রীর বাড়ির সামনে। মিছিল থেকে উড়ে আসে ‘টিপ্পনী’, “বেশ হয়েছে। এটাই দরকার ছিল” কিংবা “অনেক মানুষের জীবন গিয়েছে। চরম শাস্তি চাই।” তৃণমূলের জেলা নেত্রী উত্তরা সিংহ, স্থানীয় নেতা আকাশদীপ সিংহেরা জনতাকে সরিয়ে নিতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। |
|
বেনাচাপড়ায় সুশান্ত ঘোষের আদি বাড়ির সামনে তৃণমূল সমর্থকদের বিক্ষোভ-উল্লাস। |
তৃণমূল সমর্থকদের এত দিনের ক্ষোভ, এ দিন ‘উল্লাসে’ বদলে যাওয়া যে আদৌ অপ্রত্যাশিত নয়, সেই ইঙ্গিত মিলল করুণাদেবীদের বাড়ি লাগোয়া পরিমল-কাননের কর্মীদের কথায়। বড়সড় এই পার্কটির ঘরে বিভিন্ন সময়ে সিপিএমের অনেক ফেরার নেতা এসে থাকতেন বলে আগে অভিযোগ করত তৃণমূল।
এ দিন পার্কের অস্থায়ী কর্মী সকের আলি মিদ্যা, অরুণ রায়, দীপক দাসেরাও দাবি করেন, “সিবিআই যখন নেতাই-মামলায় অনুজ পাণ্ডে, ডালিম পাণ্ডেদের খুঁজছে আমরা তখন তাঁদের চা, জল-খাবার দিয়েছি। না দিলে হয়তো পরে আমাদেরও কঙ্কাল পাওয়া যেত!”
|
ছবি: সৌমেশ্বর মণ্ডল, রামপ্রসাদ সাউ |
|
|
|
|
|