সিআইডির আপ্যায়নে বিরক্ত সুশান্ত,
বললেন আমি কিন্তু এখনও বিধায়ক
ন্ত্রিত্ব গিয়েছে। কিন্তু মন্ত্রিসুলভ ‘প্রতাপ’ যায়নি। যে কারণে খুনের মামলায় অভিযুক্ত এবং গ্রেফতার হয়ে সিআইডি হেফাজতে থাকলেও বৃহস্পতিবার রাত থেকে শুক্রবার রাত পর্যন্ত ভবানী ভবনে সিআইডি-র ‘আপ্যায়ন’ ব্যবস্থা নিয়ে একাধিক বার বিরক্তি প্রকাশ করেছেন সিপিএম বিধায়ক সুশান্ত ঘোষ।
তিনি রাজ্যের প্রাক্তন পশ্চিমাঞ্চল উন্নয়ন মন্ত্রী এবং সিপিএম তথা বামফ্রন্টের বিপুল নির্বাচনী বিপর্যয়ের মধ্যেও জয়ী হয়ে বিধায়ক। এ হেন ‘হাই প্রোফাইল’ ধৃত বলেই সুশান্তবাবুর ‘আপ্যায়ন’ যথাসম্ভব নিখুঁত করার ব্যাপারে সতর্ক ছিল সিআইডি। তিনি উচ্চ রক্তচাপের রোগী জেনে আগেভাগেই তাঁর ডাক্তারি পরীক্ষা এবং ওষুধের ব্যবস্থা করে রেখেছিলেন অফিসাররা। তবুও বৃহস্পতিবার রাত ১০টা নাগাদ ভবানী ভবনে পৌঁছনোর পর থেকে এ দিন রাত পর্যন্ত সিপিএমের এই ‘দোর্দণ্ডপ্রতাপ’ নেতা বারে বারেই বুঝিয়ে দিয়েছেন, সেখানে তাঁর অশন-শয়নের ব্যবস্থাপনার মান নিয়ে তিনি বিরক্ত। বন্দি হলেও বিধায়ক এবং প্রাক্তন মন্ত্রী হিসেবে সিআইডির সকলের কাছ থেকে তিনি ‘যথেষ্ট মর্যাদা ও সম্মান’ আশা করেছিলেন। জিজ্ঞাসাবাদের সময়েও একাধিক বার ‘মনে রাখবেন, আমাকে মিথ্যে মামলায় ফাঁসানো হয়েছে এবং আমি কিন্তু এখনও একজন বিধায়ক’ বলে অফিসারদের থামিয়ে দিয়েছেন সুশান্তবাবু।
বৃহস্পতিবার রাতে ভবানী ভবনে হাতে গড়া আটার রুটি ও সব্জি নিয়ে সুশান্তবাবুর কাছে গিয়েছিলেন সেখানকার কর্মী। সঙ্গে সঙ্গেই সুশান্তবাবু একরাশ বিরক্তি নিয়ে তাঁকে বলে দেন, ওসব যেন সরিয়ে নেওয়া হয়। তিনি কিছু খাবেন না। ওই কর্মী তাঁকে কিছু বলার চেষ্টা করতেই সুশান্তবাবু কড়া চোখে তাঁর দিকে এমন ভাবে তাকান বলেই জানা গিয়েছে প্রশাসনিক সূত্রে। খবর যায় সিআইডি-র শীর্ষ কর্তাদের কাছে। তাঁরা উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন। কারণ, উচ্চ রক্তচাপের রোগী সুশান্তবাবু নিয়মিত একাধিক ওষুধ খান। খাবার খাওয়াও তাঁর জন্য জরুরি। সিআইডি-র পদস্থ সুশান্তবাবুর সঙ্গে কথা বলেন। কেন তিনি খাবার খেতে চাইছেন না, তা-ও জানার চেষ্টা করেন। সিআইডি সূত্রের খবর, সুশান্তবাবু জবাব দিয়েছএন, যে খাবার দেওয়া হয়েছে, তা ‘মুখে তোলার মতো নয়’। তিনি তা ছোঁবেন না। সিআইডি-র কর্তারা সুশান্তবাবুকে বোঝান, ভবানী ভবনের যে ক্যান্টিন থেকে ওই খাবার ধৃতদের দেওয়া হয়, সেখানে এর চেয়ে ভাল খাবার পাওয়া অসম্ভব। বিস্তর অনুরোধের পরে শেষ পর্যন্ত প্রাক্তন মন্ত্রী খেতে রাজি হলে হাঁফ ছাড়েন সিআইডি কর্তারা।
সিআইডির একটি সূত্র বলছে, যিনি মাত্র আড়াই মাস আগেও রাজ্যের অন্যতম ‘ডাকসাইটে’ মন্ত্রী হিসেবে পরিচিত ছিলেন, তাঁর পক্ষে রাতারাতি যে ‘হুকুম করার’ অভ্যাস পাল্টে ফেলা সম্ভব নয়, সে কথা মাথায় রেখেই সকলকে তাঁর সঙ্গে ‘সংযত’ আচরণ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশিই, তদন্তের স্বার্থে ওই ‘কৌশল’ কাজে লাগতে পারে বলেও অফিসারদের একাংশের মত। তাই সুশান্তবাবুর একের পর এক বিরক্তি জানা মাত্রই তার কারণ নিরসনে উদ্যোগী হন সিআইডি অফিসাররা।
যেমন, সুশান্তবাবু ঘরের নিভু নিভু আলো নিয়ে ক্ষোভ জানালে তা ঠিক করা হয়। শৌচাগার থেকে দুর্গন্ধ আসছে জানানোয় চটজলদি সেখানে ফিনাইল ঢালা হয়। শারীরিক অসুস্থতার কথা জানিয়ে ‘মিনারেল ওয়াটার’ চাইলে তার বন্দোবস্তও করা হয় তড়িঘড়ি। ডাক্তারি পরীক্ষায় জানা গিয়েছে, সুশান্তবাবুর রক্তচাপ আপাতত ১৫০/৯০। সে কারণে চিকিৎসকেরা তাঁকে খাবারে নুন দিতে বারণ করেছেন। সেই পরামর্শ মেনে তাঁর খাবারে নুন বা চিনি কিছুই দেওয়া হয়নি। বৃহস্পতিবার রাতে ভবানী ভবনের পাঁচতলার দু’টি লক-আপের মধ্যে একটিতে সুশান্তবাবুকে রাখা হয়। অন্য লক-আপে অন্য বন্দিরা ছিল। লক-আপে নেওয়ার আগে কিছু ক্ষণ একটি বাতানুকূল ঘরে রাখা হয় তাঁকে। রাতে সুশান্তবাবুকে দু’টি কম্বল দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তিনি কম্বলে কটু গন্ধ থাকার কথা বলায় সঙ্গে সঙ্গেই তা পাল্টানো হয়। শোওয়ার ঘণ্টাখানেকের মধ্যেই ঘুমিয়ে পড়েন প্রাক্তন মন্ত্রী। তবে এ দিন সকালে ঘুম থেকে ওঠার পরে খানিকটা সুস্থ দেখিয়েছে সুশান্তবাবুকে। চিনি ছাড়া লাল চায়ের পেয়ালায় চুমুক দিয়ে সামনে রাখা সংবাদপত্রের হেডলাইনগুলি এক বার দেখেই চোখ সরিয়ে নেন তিনি। কয়েক দফা জেরার ফাঁকে ডাল-ভাত-সব্জি দেওয়া হলে তা-ও কিছুটা খান। তবে সিআইডি সূত্রের খবর, হঠাৎই স্বগতোক্তি করতে করতে ভাতের থালায় জল ঢেলে উঠে পড়েন সুশান্তবাবু। সিআইডি অফিসাররা অবশ্য আচমকা তাঁর ওই আচরণ নিয়ে কিছু বলতে যাননি। আরও ছ’দিন ভবানী ভবনেই তাঁদের চোখে চোখে রাখতে হবে প্রাক্তন মন্ত্রীকে।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.