রাত থেকেই কয়েক দফা জেরা, কেশপুর কাণ্ডের দিন কোথায় ছিলেন মনে নেই
কখনও রুষ্ট, কখনও করছেন পাল্টা প্রশ্ন
খনও তিনি নীরব। কখনও কোনও প্রশ্নের উত্তরে বলছেন, কিছুই মনে পড়ছে না। কোনও প্রশ্ন শুনে কিছুটা রুষ্ট ভাবে তাকাচ্ছেন প্রশ্নকর্তার দিকে। আবার কখনও জবাব না দিয়ে পাল্টা প্রশ্ন আর যুক্তি তুলে ধরছেন।
সংক্ষেপে এই হল রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী সুশান্ত ঘোষকে বৃহস্পতিবার থেকে শুক্রবার রাত পর্যন্ত কয়েক দফা জেরার ছবি। তবু দিনের শেষে সিআইডি-র ডিজি ভিবি থাম্বি-সহ পুলিশের শীর্ষকর্তারা যথেষ্ট ‘আশাবাদী’। ডিজি (সিআইডি) বলেছেন, “প্রাথমিক ভাবে তদন্ত করে এফআইআরে থাকা অভিযোগ সত্যি বলেই মনে হচ্ছে। তার ভিত্তিতেই তদন্ত এগোচ্ছে।”
সিআইডি সূত্রের খবর, ভবানী ভবনে নিয়ে যাওয়ার পর বৃহস্পতিবার রাতেই ডিজি ভি বি থাম্বির ঘরে সুশান্তবাবুকে এক প্রস্ত জেরা করা হয়। ডিআইজি-সিআইডি (অপারেশন) কারলিয়াপ্পন জয়রামন, এডিজি-সিআইডি মুরলীধরনও সেখানে ছিলেন। জেরায় তাঁর বিরুদ্ধে দায়ের-হওয়া খুন ও অস্ত্র পাচারের অভিযোগের ব্যাপারে প্রশ্ন করলে প্রথমে কিছু ক্ষণ চুপ করে থাকেন প্রাক্তন মন্ত্রী। কিছুটা বিরক্তিও প্রকাশ করেন। অফিসারদের জেরার মুখে পড়ে এক সময়ে তিনি এমনও দাবি করেন যে, সব ‘মিথ্যা অভিযোগ’ দায়ের করা হয়েছে। তিনি এক জন রাজনৈতিক নেতা। খুন ও অস্ত্র পাচারের ব্যপারে তিনি কিছুই জানেন না।
প্রাক্তন মন্ত্রী ঘনঘন ক্ষোভ-বিরক্তি প্রকাশ করায় কিছু ক্ষণ বিরতি দিয়ে ফের তাঁকে জেরা শুরু হয়। ওই সময়ে মামলার এফআইআরের প্রতিলিপি দেখিয়ে সুশান্তবাবুকে জিজ্ঞাসা করা হয়, তিনি বাকি নামগুলি চিনতে পারছেন কি না? সুশান্তবাবুর জবাব দেন, সব নাম ওই ভাবে চেনা সম্ভব নয়। এর পর তাঁর কাছে জানতে চাওয়া হয়, ২০০২ সালের ২২ সেপ্টেম্বর তিনি ছিলেন কোথায়? ওই দিনই কেশপুরের পিয়াশালে সিপিএমের হামলায় সাত জন তৃণমূল কর্মী খুনের অভিযোগে মামলা হয়েছে। যে মামলার এফআইআরে নাম রয়েছে সুশান্তবাবুর।
এর পর, এ বছর জুন মাসের গোড়ায় বেশ কিছু হাড়গোড় উদ্ধারের পরে নির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে সুশান্তবাবুর নামে খুন ও অস্ত্র পাচারের মামলা হয়। কিন্তু ওই মামলা ঘোরালো হয় গড়বেতায় সুশান্তবাবুর আদি বাড়ির অদূরে মাটি খুঁড়ে পাওয়া কঙ্কালের ডিএনএ পরীক্ষার পর। তাতেই অভিযোগ নতুন মাত্রা পায়। বস্তুত, রাজ্য পুলিশের পদস্থ অফিসাররা মনে করছেন, ডিএনএ-র বিষয়টিই সুশান্তবাবুর বিরুদ্ধে সব চেয়ে জোরালো প্রমাণ। রাজ্য পুলিশের এক পদস্থ কর্তা এ দিন বলেন, “ডিএনএ পরীক্ষাই গোটা বিষয়টা ঘুরিয়ে দিয়েছে। মামলার মূল এফআইআরে সুশান্তবাবুর নাম থাকায় ডিএনএ পরীক্ষার ফল আদালতে অত্যন্ত জরুরি সাক্ষপ্রমাণ হিসেবেই বিবেচিত হওয়া উচিত।”
কেশপুরের ঘটনার দিন তিনি কোথায় ছিলেন, সে প্রশ্ন শুনে কিছু ক্ষণ দেওয়ালের দিকে তাকিয়ে থাকেন সুশান্তবাবু। তার পরে কিছুটা উদাস ভাবে জানিয়ে দেন, তাঁর তা মনে নেই। প্রাক্তন আপ্ত সহায়ক দেবাশিস পাইনের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক নিয়ে প্রশ্ন করলে সুশান্তবাবু জানান, দেবাশিসবাবুর বিরুদ্ধে ‘অনৈতিক’ কাজের অভিযোগ পেয়েই তাঁকে ওই দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছিল। দেবাশিসবাবুর সঙ্গে তাঁর কোনও সম্পর্ক নেই বলেই প্রাক্তন মন্ত্রী দাবি করেছেন।
এ দিন দুপুরের পরে ফের জেরা শুরু হলে এক সময়ে কিছুটা মেজাজ হারিয়ে ফেলেন সুশান্তবাবু। খানিকটা ক্ষোভের সঙ্গে তিনি তদন্তকারী অফিসারদের পাল্টা প্রশ্ন করতে থাকেন। সিআইডি সূত্রেই জানা গিয়েছে, সুশান্তবাবু যথেষ্ট ক্ষোভের সঙ্গে বলতে থাকেন, রাজ্যের সরকার পাল্টেছে। তাই চক্রান্ত করে তাঁর বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। কোনও এক জায়গা থেকে কঙ্কাল উদ্ধার করা হল। আর সেই কঙ্কাল উদ্ধারের ঘটনায় এক জন প্রাক্তন মন্ত্রীর বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করা হল। ওই অভিযোগের উপর ভিত্তি করে তদন্ত শুরু হয়ে গেল। বিষয়টি কতটা ‘বিশ্বাসযোগ্য’ তা বিচার করা হল না!
তবে সুশান্তবাবুকে প্রথম দিন জেরার পর রাজ্য পুলিশের পদস্থ কর্তারা মনে করছেন, ‘প্রভাবশালী’ কোনও নেতাকে খুন ও অস্ত্র পাচারের মতো ‘গুরুতর’ মামলায় গ্রেফতার করা হলে প্রথম প্রথম এমনই হওয়ার কথা। দ্বিতীয় পর্বে স্পষ্ট এবং নির্দিষ্ট কিছু ‘সাক্ষ্যপ্রমাণ’ হাজির করার পর অভিযুক্ত কিছুটা সহযোগিতা করতে শুরু করে। সে জন্য সুশান্তবাবুকে জেরা ও সেই অনুযায়ী তথ্যপ্রমাণ সংগ্রহের লক্ষ্যে মোট চারটি ‘বিশেষ টিম’ তৈরি করে একযোগে তাদের কাজে নামানো হয়েছে।
ওই চার টিমের সদস্যরা পর্যায়ক্রমে জেরা ছাড়াও সুশান্তবাবুর স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তির পরিমাণ, কোথাও নামে-বেনামে তাঁর ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট রয়েছে কি না, তার হদিস করতেও নেমেছেন।
খুন বা অস্ত্র পাচার শুধু নয়, কয়লা চোরাচালান-সহ নানা কার্যকলাপের সঙ্গে বর্তমান মামলায় অভিযুক্তদের কোনও যোগসাজস রয়েছে কি না, তা-ও খতিয়ে দেখছে সিআইডি। এমনকী, নিজের বাড়ি লাগোয়া একটি অতিথিনিবাসে প্রায়ই কাদের সঙ্গে প্রাক্তন মন্ত্রী বৈঠকে বসতেন, সে ব্যাপারেও কিছু স্পষ্ট তথ্য পেয়েছে সিআইডি। কেশপুরের ঘটনার আগের রাতে ওই অতিথিশালায় কে বা কারা ছিলেন, সেই ব্যাপারে নিশ্চিত হতে ওই দফতরের সংশ্লিষ্ট কর্মীদের জেরার কথাও ভাবছে সিআইডি।
পাশাপাশি, কোনও টিম জেরার করে নির্দিষ্ট কোনও সূত্রের ইঙ্গিত পেলেই সঙ্গে সঙ্গে তা নিয়ে বিশদে খোঁজখবর করছে। প্রাথমিক ভাবে তাঁর প্রাক্তন আপ্ত সহায়ক দেবাশিস পাইনের বক্তব্যের সঙ্গে সুশান্তবাবুর বক্তব্যের অনেক ‘অসঙ্গতি’ পাওয়া গিয়েছে বলেই পুলিশ সূত্রে জানা যাচ্ছে। আপাতত দেবাশিসবাবু জেলে। আদালতের অনুমতি সাপেক্ষে দেবাশিসবাবুকে এনে সুশান্তবাবুর মুখোমুখি বসিয়ে জেরার প্রস্তুতিও শুরু করেছে একটি টিম।

এই সংক্রান্ত আরও খবর...
সুশান্তর পাশে বুদ্ধ, বোঝালেন শেষ কথা দলই


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.