|
|
|
|
|
|
দক্ষিণ কলকাতা
বিল অমিল |
হলুদ নৈরাজ্য |
দীক্ষা ভুঁইয়া |
রাত প্রায় সাড়ে দশটা। টালিগঞ্জ ট্রাম ডিপোর মোড়। ট্যাক্সি থেকে নেমে এলেন মধ্যবয়স্ক ভদ্রলোক। হঠাৎই ট্যাক্সিচালকের সঙ্গে শুরু হল চিৎকার চেঁচামেচি। কিছু ক্ষণের মধ্যে বোঝা গেল, ট্যাক্সিচালকের কাছে ভদ্রলোক বিল চেয়েছেন আর চালক ট্যাক্সির ভাড়ার বিল দিতে পারেননি। আর তাতেই মিটারে যা ভাড়া দেখাচ্ছে তা না দিয়ে চলে যাচ্ছেন সওয়ারি। প্রায় হাতাহাতি হওয়ার উপক্রম। ভদ্রলোকও টাকা দেবেন বিল পেলে, উল্টো দিকে, চালকও ছাড়বে না। জানা গেল, ভদ্রলোক যে অফিসে চাকরি করেন সেখানে বিল জমা না দিলে যাতায়াতের টাকা পাবেন না। ট্যাক্সিচালকের বক্তব্য, বিলের প্রিন্ট দেওয়ার কাগজ নেই। তাই বিল দেওয়া যাচ্ছে না।
ট্যাক্সির যাত্রীদের অভিযোগ, এ ধরনের ঘটনা প্রায়ই ঘটছে শহরে। স্বাভাবিক ভাবে ট্যাক্সি বিলের কথাটা নতুন লাগলেও অনেকের কাছেই যাতায়াতের জন্য বিলটি জরুরি। বিশেষ করে যাঁরা দৈনন্দিন যাতায়াতের টাকা পান অফিসের কাছ থেকে। আর নিয়মিত সওয়ারি বিল না চাওয়ায় বিল দেওয়ার নিয়মটাই ভুলে গিয়েছেন অধিকাংশ ট্যাক্সিচালক। আর তাতেই বেঁধেছে সমস্যা।
কলকাতা মোটর ভেহিকল্স সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০০৮-এর জুলাইয়ে পনেরো বছরের পুরনো সমস্ত বাস, ট্যাক্সি বাতিলের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। তখনই ঠিক হয়, পুরনো ট্যাক্সি বাতিল করে যে নতুন ট্যাক্সি আনা হবে সেগুলিতে থাকবে প্রিন্টার মিটার। সেইমতো প্রিন্টার মিটার লাগানোও হয়।
|
|
এই দৃশ্য এখন শহরে বিরল |
প্রিন্টার মিটার কী? এই মিটার ব্যবহার করলে যাত্রীদের লাভই বা কতটা?
কলকাতা মোটর ভেহিকল্সের এক আধিকারিক জানালেন, ওই বিলে ট্যাক্সির নম্বর, ট্যাক্সিতে ওঠা-নামার সময়, যাত্রাপথের দূরত্ব এবং ট্যাক্সি-মালিকের সঙ্গে যোগাযোগের নম্বর থাকে। ফলে ট্যাক্সি থেকে নেমে যাওয়ার পরে যাত্রী যদি ট্যাক্সিতে কিছু ফেলে আসেন, সেটা যেমন পাওয়া যায়, তেমনই কোনও অভিযোগ থাকলে ওই ট্যাক্সির যাবতীয় তথ্য দিয়ে হেল্পলাইনে ফোন করতে পারেন। হেল্পলাইনগুলি অবশ্যই ট্যাক্সি ইউনিয়নের।
কলকাতায় সব মিলিয়ে বিভিন্ন ইউনিয়নের ষোলো হাজারের উপর ট্যাক্সি চলে। আর ২০০৮-এর অগস্ট থেকে বর্তমানে প্রায় দশ হাজার ট্যাক্সির প্রিন্টার মিটার আছে। কিন্তু তা সত্ত্বেও বিল চাইলে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সওয়ারি বিল পান না কেন?
বেঙ্গল ট্যাক্সি অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি বিমল গুহ বললেন, “আমাদের ইউনিয়নের প্রতিটি ট্যাক্সিকে বলা হয়েছে বিল দিতে। কিন্তু যদি তারা বিল না দেয় সওয়ারি লিখিত অভিযোগ ফ্যাক্স করে আমাদের পাঠাতে পারেন। কিন্তু অধিকাংশ ক্ষেত্রেই যাত্রীরা ফোন করে মুখে অভিযোগ জানিয়ে ছেড়ে দেন।’’ প্রিন্টার মিটার আছে এমন ট্যাক্সিচালকদের কাছে বিল সম্পর্কে জানতে চাওয়া হলে তাঁদের বক্তব্য, মিটারের বিলের কাগজ শেষ। কেউ আবার বললেন, প্রিন্টারের কাগজের ডিজিটাল লেখা বেশি দিন থাকে না। আর কাগজও বাজারে অমিল।
কিন্তু ট্যাক্সিচালকদের এই বক্তব্য মানতে নারাজ বিমলবাবু। তাঁর কথায়: “এটা ট্যাক্সিচালকদের অজুহাত। ফলে ট্যাক্সি সওয়ারিকে একটু সচেতন হতে হবে এবং ট্যাক্সি ছাড়ার আগে বিল চেয়ে নিতে হবে। যদিও ট্যাক্সিচালকদের দায়িত্ব টাকা মেটানোর সঙ্গে সঙ্গে বিলটা দেওয়া।’
ট্যাক্সির প্রিন্টার মিটার প্রসঙ্গে কলকাতা মোটর ভেহিকল্স-এর সহকারী অধিকর্তা (কারিগরী) আশিস সিংহ বললেন, “২০০৮-এর অগস্ট থেকেই নতুন প্রিন্টার মিটার চালু করা হয়েছে। ১৫ বছরের পুরনো সমস্ত ট্যাক্সির মিটারই সেই সময়ে পরিবর্তন করা হয়। নিয়ম অনুযায়ী মিটার পরীক্ষা করার জন্য ট্যাক্সিগুলিকে সল্টলেকে পশ্চিমবঙ্গ পরিবহণ উন্নয়ন দফতরের কাছে যেতে হয়। সেখানে মিটারগুলি ঠিক আছে এমন শংসাপত্র পাওয়ার পরে ট্যাক্সির লাইসেন্স পুনর্নবীকরণ করা হয়। সাধারণত ছ’মাস অন্তর ট্যাক্সিগুলিকে মিটার পরীক্ষার জন্য আসতে হয়।”। কিন্তু তা সত্ত্বেও ট্যাক্সিতে বিল না পাওয়ার প্রসঙ্গে আশিসবাবু
বললেন, “এটা ট্যাক্সিচালকদের নিজস্ব মর্জির উপর নির্ভর করছে। দৈনন্দিন ট্যাক্সির বিল পাওয়া না পাওয়া দেখার জন্য কোনও পরিকাঠামো আমাদের নেই”।
অন্য দিকে, দক্ষিণ ২৪ পরগনার আঞ্চলিক পরিবহণ আধিকারিক চপল বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “১৫ বছরের পুরনো যে সব
ট্যাক্সি বাতিল হয়ে নতুন ট্যাক্সি নামানো হয় তার সবগুলোতেই প্রিন্টার মিটার
বাধ্যতামূলক। ট্যাক্সিচালকেরাও সওয়ারিকে বিল দিতে বাধ্য।”
|
|
|
|
|
|