|
|
|
|
|
|
দক্ষিণ কলকাতা: বেহালা
মহেশতলা |
শিলা-চাপা যন্ত্রণা |
স্বপন দাস |
এক বার নয়, দু’-দু’বার! এই দু’বারই দর্জিদের জন্য একটা শিল্পতালুক তৈরির প্রকল্পের শিলান্যাস করেছেন দু’জন মুখ্যমন্ত্রী। কিন্তু সেই পর্যন্তই। আজও সেখানে ওই প্রকল্প তৈরি হয়নি। লাঘব হয়নি ওস্তাগরদের যন্ত্রণারও।
মহেশতলার সন্তোষপুর স্টেশন থেকে লালার মোড়। এরই পাশে মহেশতলার ওস্তাগরদের স্বপ্নের একটি তালুক তৈরি হবে বলে ঠিক ছিল। পরিকল্পনা ছিল অনেক কিছুই। প্রায় ১০০ বিঘা জমিতে ছোট ছোট কারখানায় তৈরি হবে বড়দের জামাপ্যান্ট, ছোটদের পোশাক। গোটা মহেশতলা অঞ্চলের জিন্স-এর শিল্পকে এক জায়গায় আনার জন্যও এই বিশাল জায়গাটি বেছে নেওয়া হয়েছিল। নব্বুইয়ের দশকের শেষ দিকে শিলান্যাস করেছিলেন তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসু। এখানেই অবশ্য শেষ নয়। আবারও সেটির শিলান্যাস ও কয়েকটি দোকানঘর নিয়ে একটি বিপণিরও উদ্বোধন করেন প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। কিন্তু তার পরেও কেটে গিয়েছে এক দশকেরও বেশি সময়। কিন্তু, আজও দর্জিদের সেই স্বপ্নের গারমেন্ট পার্ক তৈরি হল না। যে বাড়িটি তৈরি হয়েছিল, সেটিরও দরজা-জানলা চোরে খুলে নিয়ে গিয়েছে অনেক দিন। বাড়ির ইট ভেঙেও নিয়ে যাচ্ছে মানুষজন। পরিত্যক্ত জমি ইতিমধ্যেই বেআইনি ভাবে বিক্রি হয়ে গিয়েছে বলে অভিযোগ জানিয়েছেন খোদ পুর-চেয়ারম্যান দুলাল দাস। ওই জমি কিনে যাঁরা বাড়ি করার জন্য অনুমতি প্রার্থনা করেছেন, সেই অনুমতিও দেওয়া বন্ধ করে দিয়েছে বর্তমান পুরবোর্ড।
মহেশতলা পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, সত্তরের দশকের গোড়ায় সিদ্ধার্থশঙ্কর রায় মুখ্যমন্ত্রী থাকার সময় মহেশতলার (বর্তমানে ১০ নম্বর ওয়ার্ড) ৯০ বিঘা জমি অধিগ্রহণ করে একটি দুগ্ধপ্রকল্প শুরু হওয়ার কথা ছিল। সেই অনুযায়ী ৯০ শতাংশ কাজও শেষ হয়েছিল। কংগ্রেস সরকার বিদায় নেওয়ার পর সেই প্রকল্প আর শেষ হয়নি। সেই বাড়িগুলি পরে ভেঙে মাটির সঙ্গে মিশে যায়। পরবর্তী রাজ্য সরকার ছোট ছোট শিল্পোদ্যোগীদের কাছে ওই জমি বিক্রি করে। কিন্তু সেই ক্ষেত্রেও শিল্প গড়ে ওঠেনি। বর্তমানে বসতবাড়ি তৈরি হচ্ছে।
|
|
এটি পুর ওয়ার্ডের মধ্যে থাকলেও জমিটি রাজ্য সরকার অধিগৃহীত। ফলে মহেশতলা পুরসভাও সে ভাবে মাথা ঘামায়নি বলে জানিয়েছেন প্রাক্তন পুরপ্রধান বামফ্রন্টের কালী ভাণ্ডারী। কিন্তু বর্তমান কংগ্রেস-তৃণমূল পুরবোর্ড ক্ষমতায় এসে ওই ১০০ বিঘা জমি ও গারমেন্ট পার্ক নিয়ে ভাবনাচিন্তা শুরু করে। বর্তমান পুরপ্রধান দুলাল দাস বললেন, “ওখানে জমি বিক্রি হয়ে বেআইনি বাড়ি উঠছে। আমরা মিউটেশন দেওয়া বন্ধ করে দিয়েছি। জমিটা উদ্ধার করতেই হবে। ওখানে কংগ্রেস সরকারের আমলে একটা দুগ্ধপ্রকল্পের কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে পৌঁছেছিল। খালি গরুগুলি কেনা বাকি ছিল। পরবর্তী কালে কী কারণে তা হয়নি জানি না। এর পরে জ্যোতি বসু ও বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য দর্জিদের জন্য একটা কিছু করবেন বলে শিলান্যাসও করলেন। তাও হল না। পরিত্যক্ত জমি, বাড়ি অবাঞ্ছিত লোকজনের আস্তানা হয়ে উঠল। ওই জমি বেআইনি ভাবে বিক্রির রমরমা শুরু হয়ে গেল।”
মহেশতলা পুরসভার উপপ্রধান কগ্রেসের প্রশান্ত মণ্ডল বলেন, “জেলাশাসক, কলকাতার মেয়র সবাই মিলে বসে কিছু একটা করতে হবেই এবং সেটা যত তাড়াতাড়ি সম্ভব। কেননা, জমিটা কিছু দিনের মধ্যেই কলকাতা পুরসভার হাতে চলে যাবে। তখন ওটার বিষয়ে ভাবনাচিন্তা করবে কলকাতা পুরসভা।” মহেশতলার প্রাক্তন বিধায়ক সিপিএমের মুরসালিন মোল্লাই বেশি উদ্যোগী ছিলেন সেই সময়ে। গারমেন্ট পার্ক তৈরি না হওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “মূলত পরিকাঠামোগত উন্নয়ন না হওয়াতেই বাস্তবায়িত হয়নি গোটা পরিকল্পনাটি। কিছু উৎসাহী শিল্পোদ্যোগী জমি নিয়েছিলেন। তাঁরাও উৎসাহ দেখাননি। এই জমিতে পরিকল্পনা ছিল, মহেশতলা অঞ্চলের দর্জিদের আরও উন্নত মানের প্রশিক্ষণ দিয়ে উন্নত পোশাক শিল্প গড়ে তোলা। এর সঙ্গে বিদেশের বাজারে রফতানির রাস্তাও তৈরি করা। তা এই বিপণি থেকেই সরাসরি পাঠানো হবে। কিন্তু তা আর হল না।” তৃণমূল বিধায়ক কস্তুরী দাস অবশ্য বলেন, “খোঁজখবর নিচ্ছি। মহেশতলা পুরসভাই এখন ওই বিষয়টা নিয়ে বেশি উদ্যোগী। ওরাই ভাল বলতে পারবে।” |
|
স্থানীয় মুসলিম সম্প্রদায়ের অধিকাংশ মানুষই এই পেশায় যুক্ত। মহেশতলা পুরসভা অঞ্চল জিন্সের পোশাকের জন্যও বিখ্যাত। সেখানে এ রকম একটি প্রকল্পের এই হাল মন থেকে মেনে নিতে পারছেন না স্থানীয় পোশাক শিল্পের সঙ্গে যুক্ত মানুষজন। এলাকার সিরাজুল বলেন, “আমরা ভাবতেই পারিনি যে এটা হবে না। আমরা ছোটখাটো ব্যবসাদার, শুনেছিলাম বাইরে থেকে অনেক ব্যবসায়ী এখানে জড়ো হবেন। আমাদের পণ্য দেখবেন। একটা বড় বাজার ধরতে পারব আমরা। কিন্তু তা আর হল না।” সৈফুদ্দিন বলেন, “অনেক ছেলের কাজ হবে শুনেছিলাম। সেটাও হল না। কী আর করা যাবে?” শিল্পমন্ত্রী পাথর্র্ চট্টোপাধ্যায় বলেন, “ওই বিষয়টা আমার মাথায় রয়েছে। কিছু একটা করতেই হবে ওখানে।”
জমিটি বর্তমানে কলকাতা পুরসভার হাতে চলে যাচ্ছে। এই জমি ও গারমেন্ট পার্কের ভবিষ্যৎ প্রসঙ্গে কলকাতার মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায় বলেন, “আমরা পুরসভার তরফে সমস্ত কাগজপত্র, পরিকল্পনার প্রাথমিক প্রস্তাব সরকারের কাছে পাঠিয়েছি। ওই জায়গাটাকে নিয়ে কিছু ভাবনাচিন্তা আছে। তা ভবিষ্যতে রূপ পাবে।”
|
ছবি পিন্টু মন্ডল
|
|
|
|
|
|