দক্ষিণ কলকাতা
ভাগ্যই ভরসা |
দমকলে দম কম |
দেবাশিস দাস |
স্টুডিও জ্বলছে দাউ দাউ করে। অগ্নিনির্বাপণে অসহায় দমকল কর্মীরা। বহুতলে আগুন। আতঙ্কিত বাসিন্দারা ক্ষিপ্ত দমকল কর্মীদের উপরে। কারণ পরিস্থিতি সামাল দিতে তাঁদের নাজেহাল অবস্থা। ব্যস্ত দমকল কর্মীরা অগত্যা ভরসা করছেন ভাগ্যের উপরেই।
আগুন লাগলে এমন দৃশ্যই দেখা যায় টালিগঞ্জ এবং যাদবপুর অঞ্চলে। এই ঘনবসতিপূর্ণ ব্যস্ত এলাকায় নতুন একটি দমকল কেন্দ্র নির্মাণের জন্য দীর্ঘ দিন ধরে জমি খুঁজছে রাজ্যের অগ্নিনির্বাপণ দফতর। কিন্তু এখনও কোনও জমির খোঁজ মেলেনি বলে দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে।
দক্ষিণ কলকাতা ও শহরতলির এই বিস্তীর্ণ এলাকার বাসিন্দাদের বিপর্যয় মোকাবিলার বিষয়টি এখনও মাত্র দু’টি দমকল কেন্দ্রের উপরে নির্ভরশীল। একটি কালীঘাট এবং অন্যটি নাকতলার কাছে টালিগঞ্জ দমকল কেন্দ্র। দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে এই দুই কেন্দ্রে দমকলের মাত্র দুটি করে ইঞ্জিন থাকে। কারণ এই কেন্দ্রগুলো ‘টু-পাম্প’ ক্ষমতা সম্পন্ন। তাই আজও কোনও বিপর্যয়ে চারটির বেশি ইঞ্জিন দরকার হলে ভরসা করতে হয় ফ্রি স্কুল স্ট্রিটে দমকলের সদর
কার্যালয়ের উপরে।
|
|
দফতরের অধিকাংশ কর্তার মতে, মাত্র দুটো ‘টু-পাম্প’ ক্ষমতাসম্পন্ন কেন্দ্র দিয়ে যাদবপুর এবং টালিগঞ্জের মতো ঘনবসতিপূর্ণ এলাকার বিপর্যয়জনিত পরিস্থিতি সামাল দেওয়া কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। এই এলাকায় আরও একটি দমকলকেন্দ্র অত্যন্ত জরুরি। কালীঘাট এবং নাকতলার মধ্যবর্তী এলাকায় অগ্নিনির্বাপণ দফতরের একটিও দমকলকেন্দ্র নেই। টালিগঞ্জের পুলিশ আবাসনের বিপরীতে মেট্রো স্টেশনের কাছে যে দমকলকেন্দ্রটি রয়েছে সেটি মেট্রো রেলের। মেট্রোর বিপর্যয় সামাল দেওয়াই এই কেন্দ্রের দায়িত্ব।
গত কয়েক দশকে টালিগঞ্জ এবং যাদবপুর এলাকায় একের পর এক বহুতল, শপিংমল গড়ে উঠেছে। রয়েছে বিভিন্ন সরকারি, বেসরকারি সংস্থার কার্যালয়, স্টুডিও পাড়া এবং দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার সদর হাসপাতাল-সহ
একাধিক চিকিৎসাকেন্দ্র।
টালিগঞ্জের বিধায়ক তৃণমূল কংগ্রেসের অরূপ বিশ্বাস বলেন, ‘‘রাজ্যে বামফ্রন্ট সরকার যখন ক্ষমতায় ছিল তখন আমি টালিগঞ্জে আরও একটি দমকল কেন্দ্র নির্মাণের জন্য বিধানসভায় একাধিক বার প্রস্তাব দিয়েছি। কিন্তু রাজ্যের পুরনো সরকার সেই প্রস্তাবকে গুরুত্ব দেয়নি। আমাদের সরকার এখন ক্ষমতায় এসেছে। এ বার এই সমস্যার সমাধান করতে পারব বলে আশা করছি।”
|
|
দমকল সূত্রে জানা গিয়েছে, কোনও এলাকায় নতুন কেন্দ্র নির্মাণের জন্য ন্যূনতম ৪০.৪০ একর জমির প্রয়োজন হয়। এই জমিটি সরকারি রেকর্ড অনুযায়ী খাস জমি হলে কেন্দ্র নির্মাণের কাজে অনেক সুবিধা হয়। বিষয়টি সম্পূর্ণ প্রশাসনিক সদিচ্ছার উপরে নির্ভরশীল। কারণ, জমি চিহ্নিত করার প্রাথমিক দায়িত্ব প্রশাসনের। তার পরে রাজ্য অগ্নিনির্বাপণ দফতর সেই জমিতে দমকলকেন্দ্র নির্মাণে উদ্যোগী হতে পারে। তবে এই জমি বাছাইয়ের একটি শর্ত রয়েছে। শর্তটি হচ্ছে জমিটির অবস্থান এমন হতে হবে, যেখান থেকে এলাকার সর্বত্র সহজেই দমকলের ইঞ্জিন যাতায়াত করতে পারবে।
রাজ্যের বিপর্যয় মোকাবিলা এবং দমকলমন্ত্রী জাভেদ আহমেদ খানও স্বীকার করেছেন যে যাদবপুর ও টালিগঞ্জ এলাকায় আরও একটি দমকলকেন্দ্রের জন্য জমির সন্ধান করছে তাঁর দফতর। তাঁর কথায়: “কলকাতায় যা জনসংখ্যা তার তুলনায় দমকলকেন্দ্রের সংখ্যা অনেক কম। তবে কোন কোন এলাকায় এই সমস্যা রয়েছে দফতর তা চিহ্নিত করার কাজ শুরু করেছে। যেখানে জমি পাওয়া যাবে না সেই সব জায়গায় বর্তমানে যে কেন্দ্রটি রয়েছে তার ক্ষমতা বাড়িয়ে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ারও পরিকল্পনা রয়েছে দফতরের। যাদবপুর ও টালিগঞ্জের মাঝখানে নতুন দমকলকেন্দ্র নির্মাণের জন্য জমি চেয়ে দক্ষিণ ২৪ পরগনার জেলা প্রশাসনের কাছেও আবেদন জানিয়েছে দমকল দফতর।” |
|
দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা পরিষদের সভাধিপতি শামিমা শেখ বলেন, “জেলায় তিন জায়গায় নতুন করে দমকলকেন্দ্র নির্মাণের প্রস্তাব আমাদের কাছে এসেছে। এর মধ্যে যাদবপুর-টালিগঞ্জ-সংলগ্ন এলাকাও রয়েছে। তবে দুই জায়গায় জমি পাওয়া গেলেও যাদবপুর টালিগঞ্জ এলাকায় জমি পেতে সমস্যা হচ্ছে। এই এলাকায় নতুন দমকলকেন্দ্র নির্মাণের জন্য আমরা জমির খোঁজ করছি।”
|
ছবি: শুভাশিস ভট্টাচার্য |
|