উত্তর কলকাতা: পাইকপাড়া, ব্যারাকপুর
বেলঘরিয়া
বেহাল এক্সপ্রেসওয়ে
রাস্তার বেহাল দশা আগের মতোই আছে। ঝোপজঙ্গল আরও বেড়েছে। রাস্তায় আলো আজও জ্বলেনি। দুর্ঘটনা ও দুষ্কর্মও চলছে একই ভাবে। এই সব অভিযোগে বাসিন্দারা রাস্তা অবরোধও করেছেন। প্রশাসনও প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।
কিন্তু সমস্যা হল, কোন দফতর সমস্যার সমাধান করবে তাই নিয়ে জটিলতা আজও কাটেনি। বরং কাজিয়াই সার। দুর্ভোগ শুধু মানুষের। স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, কারা করবেন তা জানার দরকার নেই। অবিলম্বে রাস্তা মেরামতি করতে হবে, বৈদ্যুতিক আলো বসাতে হবে, জঙ্গল সাফ করতে হবে। সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের দাবি, আলোচনা চললেও এখনও সমাধান সূত্র মেলেনি। ফলে এই রাস্তার সমস্যার সমাধান এখন বিশ বাঁও জলে।
রাস্তার নাম বেলঘরিয়া এক্সপ্রেসওয়ে। বরাহনগর, কামারহাটি, উত্তর ও দক্ষিণ দমদম পুরসভা এলাকার মধ্য দিয়ে গিয়েছে এই রাস্তা। মাত্র ন’কিলোমিটারের এই রাস্তা দুই লেনের। অভিযোগ, উদ্বোধনের দিন থেকেই সার দিয়ে বাতিস্তম্ভে ভেপার ল্যাম্প দেখা যায়। কিন্তু দীর্ঘ কয়েক বছরে তাতে আলো জ্বলেনি এক দিনও। যে কটি জায়গায় রাস্তায় আলো জ্বলেছে তা স্থানীয় বাসিন্দাদের উদ্যোগে। রাস্তার বেশির ভাগটাই উড়ালপুলের উপর দিয়ে। কিন্তু পথে অসংখ্য গর্ত। অভিযোগ, এই সুযোগে দুষ্কৃতী তাণ্ডব বেড়েই চলেছে।
দিনের বেলাতেই এই রাস্তার বেহাল দশায় সমস্যায় পড়েছেন গাড়িচালকেরা। রাতে অবস্থা আরও ভয়াবহ হয়। আর এই বর্ষার মরসুমে সমস্যা জটিল হয়েছে বলে অভিযোগ নিত্যযাত্রী থেকে পথচারী ও গাড়িচালকদের। গর্তগুলি জলে ভরে থাকায় উপর থেকে বোঝা যাচ্ছে না তার গভীরতা কতটা। জল জমে থাকছে দীর্ঘ ক্ষণ। স্থানীয় বাসিন্দা কমলেন্দু বসু বলেন, “বার কয়েক এই সমস্যা নিয়ে রাস্তা অবরোধ হয়েছে। প্রশাসন প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। কিন্তু কাজ হয় না। নতুন সরকারের তরফেও তেমন কোনও প্রচেষ্টা চোখে পড়ছে না।”
কিন্তু কেন এই রাস্তায় এই কাজ করা যাচ্ছে না?
এই রাস্তা তৈরি করেন জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষ। কিন্তু রাস্তার মেরামতি, জঙ্গল সাফ করা ছাড়া আলো জ্বালানোর কাজ করতে হবে স্থানীয় পুরসভাগুলিকে। অন্তত জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষের দাবি তাই। এই রাস্তা চারটি পুরসভা এলাকার মধ্য দিয়ে গিয়েছে। সেই সব পুরকর্তৃপক্ষের মতে, এই কাজের খরচ বহন তাঁদের পক্ষে করা সম্ভব নয়। যদিও বাড়তে থাকা দুর্ঘটনা কিংবা দুষ্কর্মের ঘটনার প্রেক্ষিতে ন্যাশনাল হাইওয়ে অথরিটি জানান যে, জঙ্গল সাফ করা শুরু হয়েছে। রাস্তাও মেরামত করা হবে।
সম্প্রতি অন্ধকারময় এই রাস্তায় এক যুবক গুলিবিদ্ধ হওয়ার কয়েক দিনের মধ্যেই ছিনতাইয়ের মতো ঘটনা ঘটেছে। দুর্ঘটনা লেগেই আছে বলে স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি। তাঁরা সমস্যার সমাধানের দাবিতে সম্প্রতি ফের রাস্তা অবরোধ করেছিলেন। সমস্যার কথা স্বীকার করে বরাহনগরের বিধায়ক তাপস রায় বলেন, “স্থানীয় মানুষ, পথচারী ও গাড়িচালকদের সমস্যা হচ্ছে। নিরাপত্তার অভাব বোধ করছেন তাঁরা। এই বিষয়টি নিয়ে সংশ্লিষ্ট স্তরে অবশ্যই কথা বলব। অবিলম্বে সমস্যার সমাধান হওয়া দরকার।”
উত্তর ২৪ পরগনার পুলিশ সুপার চম্পক ভট্টাচার্য বলেন, “রাস্তা অন্ধকার থাকলে দুষ্কৃতীদের সুবিধা হবে এটাই স্বাভাবিক। আমরা চেষ্টা করি সব সময় টহলদারি রাখার জন্য। কিন্তু পুরো রাস্তায় তো একসঙ্গে টহল দেওয়া যায় না। দুষ্কৃতীরা সেই সুযোগটাই নেয়।”

ব্যারাকপুরের মহকুমাশাসক অজয় পালের কথায়: “একাধিক বৈঠক করেও এই রাস্তা নিয়ে জটিলতা কাটেনি। ন্যাশনাল হাইওয়ে অথরিটির বক্তব্য, রাস্তা ও বাতিস্তম্ভের কাজ ওঁরা করে দিলেও আলো জ্বালানোর দায়িত্ব স্থানীয় পুরকর্তৃপক্ষের। কিন্তু পুরসভারগুলির তরফে জানানো হয়েছে, আলো জ্বালাতে যে বিপুল ব্যয় হয় তা তাদের পক্ষে বহন করা সম্ভব নয়। বিষয়টির মীমাংসার জন্য ন্যাশনাল হাইওয়ে অথরিটিকে চিঠি দেওয়া হয়েছে।”
জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষের তরফে ম্যানেজার (টেকনিক্যাল) অভিজিৎ চক্রবর্তী বলেন, “ইতিমধ্যেই জঙ্গল সাফ করার কাজ শুরু হয়েছে। রাস্তা মেরামতির বিষয়টি প্রস্তুতির মধ্যে রয়েছে। মেরামত করা হবে। তবে আলো জ্বালানো কিংবা তার খরচ স্থানীয় প্রশাসনকেই বহন করতে হবে। এই নিয়ে রাজ্য সরকারকে আমাদের মনোভাবের কথা জানানো হয়েছে। আলোচনাও চলছে। কিন্তু কোনও সুরাহা হয়নি।”
কামারহাটির পুরপ্রধান সিপিএমের তমাল দে বলেন, “আলো জ্বালানোর খরচ বিপুল। পুরসভার আয় থেকে তা মেটানো সম্ভব নয়। রাজ্য সরকারকে বিষয়টি জানানো হয়েছে। আমাদের পক্ষে রাস্তার আলো জ্বালানোর খরচ বহন করা সম্ভব নয়। আরও এক বার রাজ্য সরকারকে চিঠি দেব।” আবার, দক্ষিণ দমদম পুরসভার চেয়ারপার্সন তৃণমূলের অঞ্জনা রক্ষিতের মন্তব্য: “রাজ্যের নতুন সরকারের সঙ্গে এই নিয়ে এখনও আলোচনা হয়নি। তবে এটা অত্যন্ত ব্যয়বহুল।”
রাজ্য পূর্ত দফতরের সচিব অজিতরঞ্জন বর্ধন বলেন, “ওই রাস্তার অবস্থা যে খারাপ, তা আমরা জানি। ইতিমধ্যেই জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা হয়েছে। ওঁরা মেরামতির কাজে হাত দিচ্ছেন। তবে আলো ও স্থানীয় যে সব সমস্যা আছে তা জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষ ও পূর্ত দফতর কারওরই দেখার কথা নয়। আমরা সংশ্লিষ্ট পুরসভাগুলোকে বলেছি, প্রায়ই ওই রাস্তায় দুর্ঘটনা ঘটছে, তাই অবিলম্বে পর্যাপ্ত আলো দিয়ে রাস্তাটি সাজিয়ে দিতে হবে।” পুরসভাগুলি বিপুল ব্যয়ের কথা বললেও পূর্ত সচিব বলেন, “ওঁদেরকে বলা হয়েছে, টাকাপয়সার ব্যবস্থা আপনাদেরকেই করতে হবে। জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষ বা রাজ্য সরকার কোনও রাস্তাতেই আলোর ব্যবস্থা করে না।”




অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.