উত্তর কলকাতা
মেডিক্যাল
অসহায় প্রতীক্ষা
স্ত্রীর চিকিৎসার জন্য বেশ কয়েক দিন ধরে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে রয়েছেন ব্যারাকপুরের মনোজ তিওয়ারি। অস্ত্রোপচারের জন্য ভর্তি করা হয়েছে তাঁর স্ত্রীকে। দিনভর প্রচণ্ড উৎকণ্ঠার মধ্যে রয়েছেন তিনি। রাতে এক বার গা এলিয়েছেন ওয়ার্ডের সামনে, খোলা আকাশের নীচেই।
কিন্তু কেন? তাঁর জবাব: “থাকব কোথায়? এত রোগী ভর্তি হাসপাতালে। কিন্তু সেই তুলনায় রোগীর আত্মীয়দের থাকার জায়গা খুবই কম।”
হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, কাগজে-কলমে এই হাসপাতালের শয্যা সংখ্যা প্রায় সতেরোশো। কিন্তু শ’তিনেক বাদে বাকি চোদ্দোশো শয্যায় রোগী থাকে। এর উপর রয়েছে মেঝেতে থাকা রোগীরাও। ওই সংখ্যার অর্ধেক রোগীর আত্মীয়স্বজনদের হাসপাতালে থাকতে হলে জায়গার অভাব হবেই বলে জানালেন হাসপাতালের একাধিক কর্মী।
যদিও মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের ভাইস প্রিন্সিপ্যাল তথা সুপার সিদ্ধার্থ চক্রবর্তী বলেন, “রাতে হাসপাতালে অত মানুষের থাকার কোনও মানে হয় না। এক জন রোগীর জন্য কখনও কখনও ৪-৫ জনও থাকেন।” কেউ কেউ অহেতুক হাসপাতাল চত্বরে রাত কাটান বলে মন্তব্য করেন সিদ্ধার্থবাবু।
দিনে অসংখ্য মানুষের আনাগোনা কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল চত্বরে। আর রাত হলেই সম্পূর্ণ অন্য চেহারা। জরুরি বিভাগের সামনে খোলা আকাশের নীচে ঢালাও বিছানার সারি। বাদ নেই উঁচু সিঁড়িগুলিও। সব চেয়ে ভয়ঙ্কর অবস্থা স্ত্রী ও প্রসূতিদের চিকিৎসা বিভাগ ইডেন ওয়ার্ডে। সিদ্ধার্থবাবু জানান, ইডেনের সামনে পুরুষ ও মহিলাদের জন্য রাতে থাকার দু’টি ঘর রয়েছে। ওখানে থাকতে হলে দৈনিক মাথাপিছু ৪০ টাকা করে দিতে হয়। এ ছাড়া জরুরি বিভাগের উল্টো দিকে আরও একটি হল রয়েছে।

কিন্তু, তা কি যথেষ্ট? হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, ভাড়া দিয়ে থাকার ঘর দু’টিতে ২৫ জন পুরুষ ও ১৮ জন মহিলা থাকতে পারেন। আর বিনা ভাড়ার ঘরে বড় জোর ৬০-৭০ জন মানুষের বন্দোবস্ত হতে পারে। রাতে হাসপাতালে গিয়ে দেখা গেল, ভাড়ার ঘরে অনেক শয্যা ফাঁকা। আর বিনা ভাড়ার ঘরে থাকার জায়গা নেই।
এ ব্যাপারে একাধিক রোগীর আত্মীয়ের বক্তব্য, রোগীর চিকিৎসার জন্য টাকা জোগাড় করতেই হিমশিম অবস্থা। টাকার জন্য দিনে ৪০ টাকা করে দেওয়া যাবে কী করে? সারা দিন থাকতে হয়। পেটেও কিছু দিতে হয়। শখ করে কেউ কি আর হাসপাতালে থাকে?
শুধু রোগীর পরিবারই নয়, মেডিসিন বিভাগের এক চিকিৎসকও বলেন, “অনেক সময় রোগীর নিকটাত্মীয়কে রাতে থাকতে বলা হয়। কিন্তু জায়গা না থাকায় খোলা মাঠে তাঁদের রাত কাটাতে হয়।” রাতে জরুরি বিভাগের সামনে মাদুর বিছিয়ে বসেছিলেন বেহালার বাসিন্দা সমর দাস। আগের রাতে তাঁর মানিব্যাগ খোয়া গিয়েছে। ক্ষোভের সঙ্গে তিনি বলেন, “চোর-ছ্যাঁচোড়ে ভরে গিয়েছে। কী আর করব? পাকে পড়েই হাসপাতালে থাকতে হয়।”
জরুরি বিভাগের এক কর্মী বলেন, “হাসপাতালে এক দল দুষ্কৃতী আছে যারা রোগীর আত্মীয়দের পাশে রাতে শুয়ে পড়ে। দিনভর খাটাখাটনির পরে ওই আত্মীয়রা গভীর ভাবে ঘুমিয়ে পড়তেই তাঁদের পকেটের মাল নিয়ে সরে পড়ে।” ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে সুপার বলেন, “এমন নানা অভিযোগও পাই। সঙ্গে সঙ্গে পুলিশের কাছে পাঠিয়ে দিই।” এ বিষয়ে বৌবাজার থানার এক অফিসারের মন্তব্য: “রাতে বহিরাগতদের থাকা না ঠেকানো গেলে ছোটখাটো চুরি-ছিনতাই চলতেই থাকবে।”

ছবি: শুভাশিস ভট্টাচার্য




অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.