পূর্ব কলকাতা
সুভাষ সরোবর
রাত বাড়লেই...
রাত প্রায় ১০টা। বাইকে চড়ে বেলেঘাটার রাসমণি বাজার থেকে ছেলেকে নিয়ে সল্টলেকে বাড়ি ফিরছিলেন জগন্ময় সাহা। সুভাষ সরোবর চত্বরে ঢুকতেই ঘুটঘুটে অন্ধকারে কমে যায় বাইকের গতি। আর সেই সুযোগে দুই যুবক আটকায় তাঁর বাইক। পরে জগন্ময়বাবুর মানিব্যাগ ছিনিয়ে নেয়। সঙ্গে ছেলে থাকায় তাদের সঙ্গে টক্কর দেওয়ার কোনও চেষ্টাই করেননি জগন্ময়বাবু। কাজ হাসিল করে মুহূর্তেই সরোবরের ভেতরে উধাও হয়ে যায় ওই দু’জন। অত রাতে বিড়ম্বনা বাড়াতে তিনি আর থানায় যাননি। কিন্তু ঠিক করেছেন, ওই রাস্তায় আর নয়।
বিধাননগর থেকে ফুলবাগান, বেলেঘাটা যাওয়ার সহজ রাস্তা নারকেলডাঙা মেন রোড। ওই পথেই বেশির ভাগ যানবাহন চলাচল করে। কিন্তু ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোর কাজের জন্য স্বভূমি থেকে ফুলবাগান যাওয়ার রাস্তা আপাতত বন্ধ। বিকল্প রাস্তা করা হয়েছে সুভাষ সরোবরের ভেতর দিয়ে। মিশছে বেলেঘাটা সিআইটি মোড়ে।
স্বভূমির সামনে ওই বিকল্প রাস্তার কিছুটা অংশে ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রো প্রকল্পের কাজের জন্য আলো দেওয়া আছে। কিন্তু প্রকল্প এলাকা পেরোতেই পুরো অন্ধকার। সার দিয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে বিদ্যুতের খুঁটি। কিন্তু তাতে আলো নেই। ওই অন্ধকারেই চলাচল করতে হচ্ছে মোটরবাইক-সহ সব ধরনের যানবাহনকে।
শুধু জগন্ময়বাবুই নন, গত কয়েক মাসে আরও কয়েক জনের একই হাল হয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দা অশোক দত্ত’র কথায়: “রাত বাড়তেই অন্ধকারের সুযোগে সেখানে মাতাল থেকে শুরু করে ছিনতাইবাজদের উৎপাত বাড়ছে।” প্রতি দিন সুভাষ সরোবরে প্রাতর্ভ্রমণ করেন অভিজিৎ ঘোষ। তিনি বলেন, “দেখভালের অভাবে পুরো সরোবরটাই নষ্ট হতে বসেছে। নোংরা আবর্জনার সঙ্গে এ বার বেহাল আলোও। দেখার কি কেউ নেই?” রাতে সেখানে গিয়ে দেখা গেল, রাস্তার আশপাশে নানা ধরনের ঠেক। কোথাও বসেছে মদের আসর। কোথাও গাঁজার। রাত বাড়লে ফুতির্র্ও বাড়তে থাকে। বাসিন্দারা প্রশ্ন তুলেছেন পুলিশি নজরদারি নিয়েও।
এলাকাটি কলকাতা পুরসভার ৩ নম্বর বরোর অধীন। স্থানীয় বাসিন্দাদের তোলা ওই অভিযোগ মেনে নিয়ে বরো চেয়ারম্যান স্বপন সমাদ্দারের মন্তব্য: “সম্প্রতি একটা অনুষ্ঠানের জন্য সেখানে গিয়ে দেখেছি, রাস্তার উপরে বেশ কিছু জায়গা অন্ধকার। বাতি জ্বলছে না। বরোর অফিসারদের বিষয়টি জানিয়েছি।” তিনি জানান, বেশি রাতে ওই পথে চলাচল করা বিপজ্জনক হয়ে পড়েছে। স্থানীয় কাউন্সিলর সিপিএমের রাজীব বিশ্বাস বলেন, “বিষয়টি জানি। অন্ধকারের জন্য সেখানে অসামাজিক কার্যকলাপ বাড়ছে। কিন্তু কে ঘোচাবে অন্ধকার, তা নিয়ে সরকারি স্তরে মতভেদ থাকায় ভাগের মা গঙ্গা না পাওয়ার দশা হয়েছে।” মেয়র পারিষদ (আলো) মনজর ইকবাল বলেন, “এলাকার প্রতিনিধি না জানালে পুরো কলকাতার কোথায় আলো জ্বলছে, কোথায় জ্বলছে না, তা কি জানা সম্ভব? ডিজি-কে শীঘ্রই ওই এলাকার খোঁজখবর নিতে বলছি।”
যদিও পুলিশি নজরদারির ব্যাপারে ওঠা অভিযোগ অস্বীকার করে ফুলবাগান থানার আইসি দেবাশিস চক্রবর্তী বললেন, “অন্ধকার থাকলেও ওখানে আমাদের যথেষ্ট নজরদারি আছে। ওখানে যে আলো নেই সে কথা আমরা কেআইটি-কে একাধিক বার লিখিত ভাবে জানিয়েছি।” স্থানীয় বরোর পক্ষ থেকেও আলোর ব্যাপারে কেআইটি-কে জানানো হয়েছে। কেআইটি-র পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, এ ব্যাপারে সত্বর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বেলেঘাটার থানা সূত্রে জানানো হয়, আলো দেওয়ার দায়িত্ব পুলিশের নয়। তবে এলাকার নেশাখোরদের উপর পুলিশ সব সময় নজর রাখে।”

ছবি: অর্কপ্রভ ঘোষ




অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.