অস্টিওপোরোসিস ও অস্টিওপেনিয়া থেকে বাঁচতে ওজন নিয়ে ব্যায়াম বা ‘রেজিস্ট্যান্স ট্রেনিং’ জরুরি। বিশেষ করে মেরুদণ্ড ও নিতম্বের ব্যায়ামের দিকে নজর দিতে হবে। এক সঙ্গে বিভিন্ন অস্থিসন্ধির ব্যায়াম করতে হবে। এতে অস্থিসন্ধিগুলি সচল থাকবে, হাড়ের গঠন ভাল হবে এবং হাড় শক্ত হবে।
বয়ঃসন্ধির ঠিক আগে বা পরে হাড়ের গঠন ও শক্তি বাড়ানোর সময়। এই সময়ে সহজে হাড়ের ঘনত্ব বাড়ে। এর ফলে বেশি বয়সেও হাড় ভাল থাকে।
বেশি ক্ষণ বসে কাটালে হাড় ভাল থাকবে না। শরীরকে সচল রাখলেই হাড়ের গঠন ভাল থাকে, শক্তি বাড়ে। মাঝেমধ্যে লাফালে-ঝাঁপালে, শরীর মোচড়ালে হাড় ভাল থাকে। বাস্কেটবল, মার্শাল আর্ট, দৌড়ানোর মতো ভারবাহী ব্যায়াম করতে হবে। সাঁতার, সাইকেল চালানো বা রোয়িংয়ে ভাল ফল মিলবে না। ভাল ব্যায়াম-সূচিতে অবশ্য সব ধরনের
ব্যায়াম থাকা উচিত, যাতে হৃৎপিণ্ডের অবস্থা ভাল থাকে।
শুধু স্বাভাবিক কাজকর্ম করলেই চলবে না। ভারী কাজ করলে হাড়ের উপরে চাপ বাড়বে। ফলে হাড়ের ঘনত্ব ও গঠনের উন্নতি হবে। হাঁটাচলা বা হাল্কা চালে ব্যায়াম করলে বিশেষ উন্নতি হবে না। কম ওজন নিয়ে ব্যায়াম করলেও একই ফল হবে। বেশি ওজন নিয়ে কোনও ব্যায়াম পাঁচ থেকে আট (যত ক্ষণ না ক্লান্ত হচ্ছেন) বার করলে সুফল পাবেন। এতে হাড় ভাঙার আশঙ্কাও কমবে।
স্কিপিং, লাফানোর মতো ব্যায়াম কম সময়ে তীব্র ভাবে করলে মাংসপেশির শক্তি ও ক্ষমতা বাড়ে। মনে রাখতে হবে বিশ্রামের সময় যেন অল্প হয়। তবে বয়স্ক মানুষরা ‘পলিমেট্রিক-জাম্পিং’ মতো ব্যায়াম বিশেষজ্ঞের সঙ্গে পরামর্শ না করে করবেন না।
সাধারণ লাফালাফি বা নিয়মিত সিঁড়িতে ওঠা-নামা করলে হাড়ের উপকার হয়। শরীর সুস্থ থাকলে সব বয়সের মহিলারাই
করতে পারেন। দেখা গিয়েছে, জোড়া পায়ে দিনে ৫০ বারের মতো লাফালে কোমরের হাড়ের জোর বাড়ে।
দাঁড়িয়ে ব্যায়াম করাই ভাল। ‘ফ্রি ওয়েট’ বা ‘ওয়েটেড ভেস্ট’ও ব্যবহার করতেও
পারেন। এর ফলে হাড়ের গঠনগত উন্নতি হবে। তবে বসে থাকলে চলবে না। হাঁটাচলা
করতে হবে।
শরীরের উপরিভাগের খেয়ালও রাখতে হবে। শরীরের উপরের অংশের মাংসপেশিগুলির উপরে শরীরের সচলতা নির্ভর করে। |
অস্টিওপোরোসিস থেকে বাঁচতে হাড় শক্ত করতে হবে বা ‘বোন মাস’ বাড়াতে হবে। বিভিন্ন কারণে হাড় প্রভাবিত হয়। যেমন,
হরমোন: ইস্ট্রোজেন, প্রজেস্টেরন, টেস্টোস্টেরন, বৃদ্ধির হরমোন, ইনসুলিন জাতীয় বৃদ্ধির (আইজিএফ-১) উপাদান ও থাইরয়েড হরমোন নানা ভাবে হাড়ের বৃদ্ধি ও বিকাশে প্রভাব ফেলে। এদের মধ্যে হাড়ের উপরে ইস্ট্রোজেন-এর প্রত্যক্ষ প্রভাব রয়েছে।
জীবনযাত্রা: আমাদের জীবনযাত্রা নানা ভাবে হাড়ের উপরে প্রভাব ফেলে। ধূমপায়ীদের ঋতুবন্ধ হওয়ার আগে বা পরে হাড়ের ক্যালসিয়াম শোষণ-ক্ষমতা কমিয়ে দেয়। অতিরিক্ত মদ্যপান করলেও হাড়ের ক্ষতি হয়। তবে সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে কম পরিমাণে নিয়মিত মদ খেলে হাড়ের উপকার হয়। কফি পান করলে আবার হাড়ের ক্যালসিয়াম শোষণ-ক্ষমতায় প্রভাব পড়ে। তাই যাঁরা কফি খান তাঁদের বেশি করে ক্যালসিয়াম-যুক্ত খাবার খেতে হবে।
পুষ্টি: খাদ্যের ক্যালসিয়াম হাড়ের গঠনের জন্য জরুরি। বিশেষ করে বড় হয়ে ওঠার সময়ে এবং বেশি বয়সে (৪০-এর পরে) খাদ্যে যেন ক্যালসিয়ামের পরিমাণ বেশি থাকে।
আপনার অস্টিওপোরোসিস হতে পারে, যদি আপনি খুব রোগা হন পরিবারের কারও বেশি বয়সে হাড় ভাঙে স্বাভাবিক বা অস্ত্রোপচারের জন্য ঋতুবন্ধ হয়ে গিয়ে থাকে তিন মাসের বেশি থাইরয়েডের
ওষুধ খেয়ে থাকেন ইমিউনোসাপ্রেসেন্ট ওষুধ খান বা কেমোথেরাপি নেন দুধ বা দুধ-জাত খাদ্য কম খান কম নড়াচড়া করেন বেশি ধূমপান ও মদ্যপান করেন।
|
যে পরিমাণ ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন ডি দরকার |
বয়স
(পুরুষ ও মহিলা) |
ক্যালসিয়াম
(মিলিগ্রাম/ প্রতি দিন) |
ভিটামিন ডি
(আইইউ/ প্রতি দিন) |
১-৩ |
৫০০ |
২০০ |
৪-৮ |
৪০০ |
২০০ |
৯-১৮ |
১৩০০ |
২০০ |
১৯-৫০ |
১০০০ |
২০০ |
৫১-৭০ |
১২০০ |
৪০০ |
৭১ এর বেশি |
১২০০ |
৬০০ |
|