|
|
|
|
অস্তিত্ব রক্ষায় নিজেদের পাল্টাতে হবে, বললেন বাম তাত্ত্বিকরাও |
নিজস্ব সংবাদদাতা • নয়াদিল্লি |
‘পরিবর্তন’ চাই!
প্রকাশ কারাটকেও এ কথাই বলছেন বামপন্থী বিশিষ্ট জনেরা!
অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে এ দেশের মার্কসবাদীদের আশু ‘পরিবর্তন’ দরকার বলে খোদ বামপন্থী তাত্ত্বিকরাই মনে করছেন। ইরফান হাবিব থেকে প্রভাত পট্টনায়ক, আইজাজ অহমেদ থেকে উৎসা পট্টনায়ক সকলেই মনে করছেন, তত্ত্বের কোনও অভাব নেই। অভাব হচ্ছে তার সঠিক প্রয়োগের।
পশ্চিমবঙ্গে বামফ্রন্টের পতনের পর থেকেই সিপিএমের অন্দরে আদর্শগত বিষয়ে ভাবনাচিন্তা শুরু হয়েছে। বামপন্থী ইতিহাসবিদ, অর্থনীতিবিদদের মধ্য থেকেও নানা রকম মতামত উঠে আসছে। আজ তাঁদের নিয়েই ‘আজকের মার্কসবাদ’ শীর্ষক এক আলোচনাসভার আয়োজন করেছিল সিপিএমের কিছু শাখা সংগঠন। সেখানে পলিটব্যুরো সদস্য সীতারাম ইয়েচুরি থেকে শুরু করে কেন্দ্রীয় কমিটির একগুচ্ছ নেতার সামনে বামপন্থী বিশিষ্ট জনেরা নিজেদের মতামত জানান।
বামপন্থী মতাদর্শগত শিক্ষাকে দলের কর্মীদের মধ্যে এখন আরও বেশি করে ছড়িয়ে দিতে চাইছে সিপিএম। বিজয়ওয়াড়ায় বর্ধিত কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠকের সিদ্ধান্ত মেনে মতাদর্শগত দলিল তৈরিরও কাজ শুরু হয়েছে। প্রবীণ ইতিহাসবিদ ইরফান হাবিব কিন্তু আজ বললেন, মার্কসবাদ নিয়ে নতুন ভাবনাচিন্তার প্রয়োজন। অর্থনীতিবিদ প্রভাত পট্টনায়কের যুক্তি, “মার্কসবাদ হল নিজের তত্ত্বকেই পুনর্গঠন করার একটা প্রক্রিয়া। এটা কোনও বদ্ধ-দ্বার ব্যবস্থা নয়।” একই সুরে উৎসা পট্টনায়ক বলেন, “মার্কসবাদীরাই মার্কসকে ব্যর্থ করে দিয়েছেন। আমরা মার্কসের তত্ত্বকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য কিছুই করিনি।” কমিউনিস্ট তত্ত্ব প্রয়োগের যে সীমাবদ্ধতা তৈরি হয়েছে, সে বিষয়ে সতর্ক করে দিয়ে আইজাজ অহমেদ বলেন, উদারনীতির বিরুদ্ধে মানুষের বিক্ষোভ-প্রতিবাদ হচ্ছে। কিন্তু বামেরা তাকে নিজেদের ছাতার তলায় আনতে পারছেন না।
পশ্চিমবঙ্গে পরাজয়ের পরে সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক প্রকাশ কারাট দাবি করেছিলেন, সংসদীয় নির্বাচনে হার-জিত আছেই। সিপিএমের রাজনীতি তার উপরে নির্ভর করে না। কিন্তু ইরফান হাবিবের মত হল, সাধারণ মানুষের কাছে সংসদের সাংবিধানিক গুরুত্ব রয়েছে। সুতরাং বামেদের মত যা-ই হোক না কেন, সংসদীয় রাজনীতিতে থাকতে গেলে দায়িত্বশীল রাজনৈতিক দলের ভূমিকা নিতেই হবে। সংসদীয় রাজনীতিতে আরও বেশি অংশগ্রহণের মাধ্যমেই আমজনতাকে সুরাহা দেওয়ার চেষ্টা করতে হবে।
সিপিএমের ‘পরিবর্তন’-এর জন্য ইরফান হাবিবের দাওয়াই, জাতপাতের বিষয়টি এড়িয়ে না গিয়ে বামেদের অবস্থান স্পষ্ট করে বলতে হবে। সিপিএমের অধিকাংশ নেতাই মনে করেন, এই জাতপাতের রাজনীতির জেরেই উত্তরপ্রদেশের মতো রাজ্যে পা ফেলতে পারছে না সিপিএম।
প্রকাশ কারাট নিজে ওই রাজ্যের দায়িত্ব নিয়েও বিশেষ কিছু করতে পারেননি। হাবিব বলছেন, গাঁধী যে ভাবে হরিজন আন্দোলন করেছিলেন, প্রয়োজনে তার থেকে শিক্ষা নিতে হবে। নতুন করে ভাবতে হবে সংখ্যালঘুদের কথাও। পশ্চিমবঙ্গের উদাহরণ টেনে হাবিব বলেন, “এটা দুর্ভাগ্যজনক যে, প্রধানমন্ত্রীর নিযুক্ত একটি কমিটির (সাচার কমিটি) রিপোর্ট পড়ে সংখ্যালঘু দুর্দশার কথা জানতে হয়েছে কমিউনিস্টদের।”
কী বলছেন সিপিএমের নেতারা? বামপন্থী তাত্ত্বিকদের মতামত শুনে একেজি ভবনের প্রতিক্রিয়া, অনেক বিষয়েই তাঁরা একমত। কিছু বিষয় খতিয়ে দেখারও প্রয়োজন। তবে এই যে মত বিনিময়ের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে, ঘুরে দাঁড়াতে সেটাই এখন সবথেকে বেশি প্রয়োজন বলে মনে করছেন তাঁরা। |
|
|
|
|
|