|
|
|
|
আগরতলায় ধৃত ২ মণিপুরী জঙ্গি |
আমবাসায় এনএলএফটি জঙ্গিদের সঙ্গে সংঘর্ষ |
নিজস্ব সংবাদদাতা • আগরতলা |
বেশ কিছুকাল শান্ত থাকার পর ত্রিপুরায় আবার সক্রিয় হয়ে উঠেছে জঙ্গিরা। আগরতলার যোগেন্দ্রনগরে দুই মণিপুরি জঙ্গি ধরা পড়ার পর কাল ধলাই জেলার আমবাসায় পাহাড়-জঙ্গলে নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে তুমুল গুলির লড়াই চলল এনএলএফটি (এমবি) জঙ্গিদের। আমবাসা মহকুমার খগেন্দ্র রোয়াজাপাড়ায় কাল বিকালে এই সংঘর্ষ শুরু হয়। সন্ধ্যার পর জঙ্গিরা অন্ধকারের সুযোগে জঙ্গলে লুকিয়ে পড়ে। জেলাশাসক কিরণ কিট্টে আজ জানান, টিএসএর বাহিনি খগেন্দ্র রোয়াজাপাড়ায় এখনও অভিযান চালাচ্ছে।
পুলিশ সূত্রে জানা যায়, কাল রোয়াজাপাড়ায় টিএসআর বাহিনি পৌঁছতেই পাহাড়ের উপর থেকেই টিএসআর জওয়ানদের লক্ষ্য করে জঙ্গিরা গুলি চালাতে শুরু করে। জওয়ানেরাও পাল্টা গুলি চালায়। দু’ পক্ষে কয়েক ঘণ্টা গুলির লড়াই চললেও, কোনও হতাহতের খবর এখনও পর্যন্ত জানা যায়নি। কোনও জঙ্গি ধরাও পড়েনি।
কয়েক মাস হল, ত্রিপুরায় জঙ্গিদের তৎপরতা আবার বেড়েছে। রাজ্য টিএসআর-এর দায়িত্বপ্রাপ্ত ডিআইজি বিমলকান্তি রায় জানান, গত কয়েক দিন ধরেই রাজ্য পুলিশের কাছে খবর আসছিল, ছোট ছোট দলে এনএলএফটি (বিএম) জঙ্গিরা এ রাজ্যে ঢুকে পড়েছে। যে কোনও সময়ে তারা হামলা চালাতে পারে। জঙ্গিদের উপস্থিতি বা আনাগোনা যে সব অঞ্চলে বেশি যেমন গঙ্গানগর, ছামনু, কমলপুর, খোয়াই, অমরপুর, খরবু, আমবাসা, গণ্ডাছড়া সহ গভীর জঙ্গল অধ্যুষিত পার্বত্য এলাকায় রাজ্যের টিএসআর বাহিনির জওয়ানেরা কয়েক দিন হল জঙ্গি-বিরোধী অভিযান চালাচ্ছে।
ধলাই জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার খগেন্দ্র দেববর্মার নেতৃত্বে টিএসআর ৩ নম্বর ব্যাটালিয়নের জওয়ানেরা কাল বিকেলে আমবাসা পাহাড়ে জঙ্গি দমন অভিযান শুরু করে। এই অভিযানে নেতৃত্ব দিতে আজই আগরতলা থেকে রওনা হয়েছেন রাজ্য পুলিশের ডিআইজি পর্যায়ের এক আধিকারিক। আগামী ১৯ অগস্ট পর্যন্ত রাজ্যে জঙ্গি-দমন অভিযান চলবে। পরিস্থিতি বুঝে অভিযান আরও কিছু দিন চলতে পারে।
গত কয়েক মাস ধরেই এ রাজ্যে নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন এনএলএফটি (এমবি)-র কয়েক জন সদস্য ধরা পড়েছে। অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে আত্মসমর্পণও করেছে কয়েক জন সদস্য। পুলিশি জিজ্ঞাসাবাদ পর্বে তাদের কাছ থেকে জানা গিয়েছে এ রাজ্যে জঙ্গি হামলার পরিকল্পনার কথা। এ সপ্তাহেই আগরতলা থেকে ধরা পড়েছে দুই মণিপুরি জঙ্গি। পুলিশি হেফাজতে রেখে তাদেরকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। জুলাইয়ে ছামনু থেকে যে আটজন গ্রামবাসীকে এনএলএফ (বিএম) গোষ্ঠীর সশস্ত্র জঙ্গিরা অপহরণ করে নিয়ে গিয়েছিল, তাদের একজনকেও আজ পর্যন্ত উদ্ধার করা যায়নি। উত্তর পূর্বাঞ্চলের ছোট্ট পার্বত্য রাজ্য ত্রিপুরায় নতুন করে নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠনের সদস্যরা ক্রমশ সক্রিয় হয়ে ওঠায় রাজ্য জুড়েই তাই বৈরী আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ছে।
কাল যোগেন্দ্রনগরের বিদ্যাসাগর চৌমুহনি এলাকায় রাজ্য পুলিশ ও অসম রাইফেলসের যৌথ অভিযানে ধরা পড়ে মণিপুরের নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন কেসিপি(এমসি)-র দুই সদস্য নগন সোবিত মৈতৈ (৩৫) এবং হিরোজিৎ সিং (২৬)। সংলগ্ন একটি দোতলা বাগানবাড়িতে জঙ্গিরা সপরিবারে বসবাস করছিল। স্থানীয় দময়ন্তী পালের কাছ থেকে জঙ্গিরা বাড়ি ভাড়া নিয়েছিল।
ভাড়া ঠিক করার আগে নগন সোবিত মৈতৈর ভাগ্নে শরৎ দেববর্মা জানিয়েছিল, মামার সঙ্গে আগরতলায় ব্যবসা করে। বাড়ি মণিপুর। বাড়ির মালিক দয়মন্তী পাল জানান, ভাড়াটে পরিবারে দশ-বারো জন নিয়মিত যাতায়াত করত। মহিলারাও থাকেন। ভাড়াটেদের আচারআচরণ কোনও সময়েই সন্দেহজনক ঠেকেনি। ‘জঙ্গিদের’ স্বভাবও দারুণ মার্জিত। সাদা একটি দামি গাড়িও ব্যবহার করত ওরা। বাড়িতে শীতাতপ মেশিন বসিয়েছিল।
পুলিশ সুপার ইউ কে মজুমদার (এসবি) জানান, গ্রেফতার হওয়ার পর থেকেই পুলিশি জিজ্ঞাসাবাদ শুরু হয়েছে। কিন্তু জঙ্গিরা বাংলা, হিন্দি বা ইংরেজি কোনও ভাষাতেই কথা না বোঝার ভান করায় অসুবিধায় পড়েছে পুলিশ। তাই বাইরে লোক আনানো হয়েছে তাদের সঙ্গে কথাবার্তা চালানোর জন্য। পুলিশ সূত্রে জানা গেল, গ্রেফতারের সময়ে ওদের কাছ থেকে বাজেয়াপ্ত করা হয় দুটো ল্যাপটপ, কয়েকটি মোবাইল ফোন, ন’টি মোবাইল সিম, একটি ডিজিটাল ক্যামেরা সহ নগদ কিছু টাকা এবং একটি ডায়েরি। ধৃত জঙ্গিদের জিজ্ঞাসাবাদের প্রয়োজনে কিছু দিনের মধ্যেই মণিপুর পুলিশের একটি দল রাজ্যে আসছে।
এ দিকে, স্বাধীনতা দিবসের প্রাক্কালে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করার জন্য রাজ্য নিরাপত্তা বাহিনি আরও তৎপর হয়ে উঠেছে। রুটিন মাফিক প্রত্যেকটি থানা, ক্যাম্পকে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। সমস্ত গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় নিরাপত্তা বাহিনির টহলদারি বাড়ানো হয়েছে। সীমান্ত প্রহরায় নজরদারি আরও বাড়ানোর জন্য বিএসএফকে সতর্ক করে দেওয়া হয়েছে। |
|
|
|
|
|