|
|
|
|
তৃণমূলের ‘অত্যাচার’, অভিযোগ কংগ্রেসের প্রদেশ সভাপতির কাছে |
শুভাশিস ঘটক • কাকদ্বীপ |
বড় শরিকের ‘মারে’ ‘চরম অস্বস্তি’ জোট-সংসারে।
জোটের বড় শরিক তৃণমূলের ‘অত্যাচারে’ দক্ষিণ ২৪ পরগনার কাকদ্বীপ বিধানসভা এলাকায় তাদের প্রায় ১৫০ নেতা-সমর্থক গ্রামছাড়া হয়ে গিয়েছেন বলে অভিযোগ কংগ্রেসের। এমনকী, তৃণমূলের ‘দৌরাত্ম্যে’ এলাকার ১৩টি গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় প্রায় ২০০ বিঘা জমিতে কংগ্রেস কর্মীরা চাষ-আবাদও করতে পারছেন না বলে অভিযোগ উঠেছে। এই অভিযোগ নিয়ে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি প্রদীপ ভট্টাচার্যের দ্বারস্থ হয়েছেন কাকদ্বীপ ব্লক কংগ্রেসের নেতারা। এ ব্যাপারে তৃণমূলের সর্বময় নেত্রী তথা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে জানানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন প্রদীপবাবু। অভিযোগ মানেননি স্থানীয় তৃণমূল বিধায়ক মন্টু পাখিরা। তাঁর দাবি, “কাকদ্বীপে তৃণমূল ও কংগ্রেসের জোট-সর্ম্পক মধুর।”
কাকদ্বীপের বাপুচি গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার বাসিন্দা গোপাল ঘড়ুইয়ের পরিবারের ‘অভিজ্ঞতা’ অবশ্য ‘মধুর’ নয়। স্থানীয় সূত্রের খবর, কংগ্রেস সমর্থক বলে পরিচিত ঘড়ুই পরিবারের প্রায় সাত বিঘা চাষ-জমি রয়েছে। এলাকায় নানা সামাজিক কাজে জড়িত থাকত পরিবারটি। এমনকী, জমি দান করে গোপালবাবু এলাকার অনাথ-অসহায়দের জন্য আশ্রমও তৈরি করেছেন। কংগ্রেসের অভিযোগ, এলাকায় ঘড়ুই পরিবারের প্রভাবে ‘ঈর্ষান্বিত’ হয়ে পড়েন তৃণমূলের স্থানীয় নেতারা। বিধানসভা নির্বাচনের ফল বেরনোর পর থেকেই ‘বিনা প্ররোচনায়’ মাঝেমধ্যেই গোপালবাবুকে ‘চড়-থাপ্পড় মেরেছে’ তৃণমূলের লোকজন। মাসখানেক আগে বাড়িতে ‘চড়াও হয়ে বেধড়ক মারধর’ করা হয় বছর পঁয়তাল্লিশের গোপালবাবুকে। ভয়ে বাড়ি ছেড়ে কলকাতার একটি দোকানে কাজ করছেন তিনি। |
 |
গোপাল ঘড়ুইয়ের বাড়ি। ছবি দিলীপ নস্কর |
বাড়িতে রয়েছেন অশীতিপর বাবা-মা, জেঠা। জেঠা পরমেশ্বর ঘড়ুইয়ের ক্ষোভ, “ওদের (তৃণমূলের) জন্যই আমাদের এই দশা।” গোপালবাবুর মা চারুলতাদেবী বলেন, “যারা ক্ষমতায় এসেছে, তাদের জন্য আমার ছেলে বাড়িছাড়া। জমিতে চাষ বন্ধ। পুলিশে অভিযোগ জানিয়েও কাজ হয়নি।” তবে দক্ষিণ ২৪ পরগনার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (গ্রামীণ) কঙ্করপ্রসাদ বারুই বলেন, “ওই ধরনের অভিযোগ পেলে সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলিকে নিয়ে মীমাংসার ব্যবস্থা করা হচ্ছে।” স্থানীয় কংগ্রেস নেতাদের দাবি, নানা ‘ছুতোয়’ তৃণমূলের লোকেরা ‘জরিমানা’ করছে কংগ্রেস সমর্থকদের। বাপুুচি পঞ্চায়েত এলাকারই বাসিন্দা এক শিক্ষক ‘জরিমানা’ দিতে অস্বীকার করায় ‘মার খেয়েছেন’। তাঁকে স্কুলে যেতেও ‘বাধা’ দেওয়া হচ্ছে। বিধানসভার বাপুচি, প্রতাপাদিত্যনগর, বুধাখালি, নারায়ণপুর-সহ ১৩টি পঞ্চায়েত এলাকায় তাঁদের সমর্থকদের উপরে তৃণমূল এ ধরনের নানা ‘অত্যাচার’ করছে বলে অভিযোগ কংগ্রেস নেতৃত্বের। দলের কাকদ্বীপ ব্লক সাধারণ সম্পাদক তথা প্রদেশ কংগ্রেস সদস্য হীরক ষড়ঙ্গীর কথায়, “ওরা (তৃণমূল) বিনা কারণে আমাদের কর্মী-সমর্থকদের মেরে ঘরছাড়া করে দিচ্ছে। চাষ-আবাদ বন্ধ। চরম অস্বস্তিকর পরিস্থিতি।” প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি বলেন, “কাকদ্বীপ-সহ সব জেলা থেকেই আমার কাছ থেকে লিখিত অভিযোগ আসছে। ওই ধরনের ৩৩টি অভিযোগ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে পাঠিয়েছি। আরও অভিযোগ এসেছে। সেগুলিও পাঠানো হবে।’’ তবে বাপুচি পঞ্চায়েত এলাকার তৃণমূল নেতা ভীষ্ম পাত্রর দাবি, “গোপাল ঘড়ুইয়ের সঙ্গে আমাদের একটা ভুল বোঝাবুঝি হয়েছিল। কিন্তু সে জন্য ওঁকে মারধর বা এলাকাছাড়া করা হয়নি।” ওই পঞ্চায়েতের প্রধান তৃণমূলের শঙ্কর দাস বলেছেন, “এলাকায় আগে বিক্ষিপ্ত ভাবে দু’-একটা ঝামেলা হয়ে থাকতে পারে। এখন আর তেমন কিছু ঘটছে না।” আর বিধায়কের বক্তব্য, “এখানে কংগ্রেসের সঙ্গে তৃণমূলের কোনও গোলমাল নেই। কোথাও তেমন কিছু হয়ে থাকলে কংগ্রেস সমর্থকেরা আমাকে লিখিত জানাতে পারেন।’’ |
|
|
 |
|
|