মেসিদের কোচ হয়ে আসছেন ইস্টবেঙ্গলের সেই কামিনো |
রূপায়ণ ভট্টাচার্য • কলকাতা |
সাতাশ বছর আগে ইডেন গার্ডেন্সে নেহরু কাপের ম্যাচে বারবার শোনা যেত পরবর্তী কালের বিশ্বজয়ী কোচ কার্লোস বিলার্দোর চিৎকার, “কামিনো, কামিনো’। ওভারল্যাপে ওঠার নির্দেশ।
তেইশ বছর আগে ইস্টবেঙ্গল মাঠে ওই ভাবে চেঁচাতেন বাংলার নিজস্ব পি কে বন্দ্যোপাধ্যায়। ‘কামিনো’ তখন ‘ক্যামিনো’ হয়ে গিয়েছেন। সাইডব্যাক থেকে মিডফিল্ডার।
একটা মরসুমে কয়েকটা ম্যাচ খেলেই কলকাতার খুব কাছের লোক হয়ে গিয়েছিলেন জুলিয়েন কামিনো।
পৃথিবী সত্যিই খুব ছোট হয়ে যায় এক-একটা সময়! আজ যখন মেসি, তেভেজের আর্জেন্তিনার জন্য আকুল প্রতীক্ষায় কলকাতা, তখন সেই হারিয়ে যাওয়া কামিনো আবার উঠে এলেন হঠাৎ। কল্পনার অতীত সেই উঠে আসার কাহিনিতে জড়িয়ে গেল কলকাতাও। সেই শহরেই কামিনোর জাতীয় দলে কোচিং অভিষেক।
তেইশ বছর আগে এক ইস্টবেঙ্গল বনাম মোহনবাগান ম্যাচে অনেকটা তাঁকে দেখার জন্যই ১ লক্ষ ২০ হাজার দর্শক হয়েছিল যুবভারতীতে। তখন ইন্টারনেট নেই। জানার উপায় ছিল না, আর্জেন্তিনার অন্যতম সেরা ক্লাব এস্তুদিয়ান্তেস লা প্লাতা ছেড়ে সত্যিই কেন তিনি ইস্টবেঙ্গলে এলেন?
সেই জুলিয়েন কামিনো আবার হঠাৎ আলোয় ফিরছেন যুবভারতীতেই। কলকাতা ফুটবলের কাছে রূপকথার গল্পের মতো।
এ বার আর্জেন্তিনা জাতীয় দলের সহকারী কোচ হিসেবে। গত শনিবার মারাদোনার দেশের নতুন কোচ আলেসান্দ্রো সাবেইয়া যে দু’জন সহকারীকে বেছেছেন, তার মধ্যে রয়েছেন কামিনো এবং ক্লদিও গুগনালি।
যা দাঁড়াচ্ছে, তেইশ বছরের এক বৃত্ত সম্পূর্ণ। মেসি-তেভেজদের জাতীয় কোচ হয়েই কলকাতা আসছেন ইস্টবেঙ্গলের এক প্রাক্তন ফুটবলার। |
|
১৯৮৮: কামিনো ইস্টবেঙ্গল মাঠে কৃশানু দে, পি কে বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে। |
নেহরু কাপে খেলতে আসার সময় দাড়ি রাখতেন। বড় চুল। ইস্টবেঙ্গলে খেলতে আসার সময় দাড়ি-গোঁফ সাফ করে নেন কামিনো। শনিবারই আর্জেন্তিনা ফেডারেশনের অনুষ্ঠানে যে কামিনোকে দেখা গিয়েছে, তার চেহারা বেশ ভারিক্কি। ছবি দেখতে গিয়ে ইস্টবেঙ্গলের প্রাক্তন কর্তা সুপ্রকাশ গড়গড়িও প্রথমে চিনতে পারলেন না।
১৯৮৮ সালে ২০ হাজার ডলার দিয়ে আনা কামিনোকে রোভার্স কাপ খেলিয়ে বুয়েনস আইরেসের বিমানে তুলে দেন সুপ্রকাশ। অতঃপর আর কোনও দিন দেখেননি। এ দিন অনেকক্ষণ ছবি দেখে তাঁর অস্ফুট মন্তব্য, “অনেক পাল্টে গিয়েছে মুখ। পঁচিশ বছর হয়ে গেল প্রায়। টাকার অভাবে ওকে রাখতে পারিনি।” আর্জেন্তিনার সাংবাদিকদের চুরাশি, অষ্টাশি সালের কামিনোর দুটি ছবি পাঠাতেই তাঁরা একমত, এই সেই কামিনো। “আর্জেন্তিনায় একটাই বিখ্যাত কামিনো রয়েছেন।”
তিরাশি সালে কোপা আমেরিকায় আর্জেন্তিনা দলে কামিনোকে রেখেছিলেন বিলার্দো। কিন্তু ছিয়াশি সালের বিশ্বকাপের আগে পেরু ম্যাচে বিপক্ষের ফ্রাঙ্কো নাভারোকে বিশ্রী ফাউলের জন্য জাতীয় দলে আর ফিরতে পারেননি কামিনো। ইস্টবেঙ্গল থেকে ফিরে তিনি খেলতে যান তেল আভিভের ক্লাবে। ফিরে আসেন আর্জেন্তিনার একটি ছোট ক্লাবে। আর কোনও দিন জাতীয় দলে ফিরতে পারেননি কামিনো। আর্জেন্তিনায় অনেকে তাঁকে মনে রেখেছে নাভারোকে ওই ফাউলটার জন্য। আর্জেন্তিনায় অনেকে জানেই না, কামিনো ভারতের ক্লাবে খেলতে গিয়েছিলেন। উইকিপিডিয়াতেও তার উল্লেখ নেই। |
|
২০১১: কামিনো (বাঁ দিকে) আর্জেন্তিনার কোচ সাবেইয়ার সঙ্গে, আর্জেন্তিনা ফুটবল সংস্থায়। |
বিলার্দোর প্রিয় পাত্র কামিনো এত দিন এস্তুদিয়ান্তেস ক্লাবের সঙ্গে জড়িয়েছিলেন। আপাতত আর্জেন্তিনার নতুন কোচ সাবেইয়ার প্রিয়। সাবেইয়া নিজে কামিনোর সঙ্গে খেলেছেন এস্তুদিয়ান্তেসে। তিনি আবার দানিয়েল পাসারেলার ভাবশিষ্য। বহু দিন সহকারী হিসেবে কাজ করেছেন পাসারেলার। কিন্তু প্রিয় কোচ মার্সেলো বিয়েলসা। এস্তুদিয়ান্তেসে ক্লাব কোচিং করানোর সময়েও সাবেইয়া সহকারী বাছেন কামিনো ও গুগনালিকে। জাতীয় দলে দায়িত্ব পেয়েও সহকারী বেছেছেন পছন্দের ওই দু’জনকেই।
২ সেপ্টেম্বর কলকাতায় মেসি বা তেভেজের পাশাপাশি আর এক আকর্ষণ অবশ্যই কামিনো। স্রেফ নস্টালজিয়ার জন্য। যুবভারতীতে মেসিদের সঙ্গে পা রেখে কৃশানু দে, সুদীপ চট্টোপাধ্যায়দের মতো চিরকালের মতো হারিয়ে যাওয়া সতীর্থ বা প্রতিপক্ষদের কি মনে পড়বে আর্জেন্তিনা সহকারী কোচের? |
|