জলযন্ত্রণা |
বিস্তর চেষ্টায় জল থেকে উদ্ধার মা ও শাবক হাতি |
নিজস্ব সংবাদদাতা • শিলিগুড়ি |
সামরিক বাহিনীর জলাশয়ে পড়ে যাওয়া মা হাতি এবং তার শাবককে সাড়ে ৬ ঘণ্টার চেষ্টায় উদ্ধার করলেন বনকর্মীরা। সোমবার ভোরে ঘটনাটি ঘটে শিলিগুড়ির অদূরে বেঙডুবির জঙ্গলে সামরিক ঘাঁটিতে। প্রায় ৫৫-৬০টি বুনো হাতির পাল ওই জলাশয়ে জল খেতে এসেছিল। তখন ওই মা হাতি এবং তার শাবকটি পড়ে যায়। জাল ফেলে বনকর্মীরা শাবকটিকে টেনে তুলতে সক্ষম হলেও সমস্যায় পড়তে হয় প্রায় ৪ টন ওজনের বিশাল স্ত্রী হাতিটিকে তোলার সময়ে। জলাশয়ে মাটি, পাথর ফেলা হয়। গাড়ির টিউব ও ‘লাইফ বেল্টে’র সাহায্যে জলে ভাসিয়ে রাখার
চেষ্টা হয়। পাশাপাশি, সামরিক বাহিনীর দমকল বিভাগের ৪টি ইঞ্জিন, ২টি পাম্প দিয়ে জলাশয়ের প্রায় অর্ধেক জল বের করে দেওয়া হয়। এর পরে জলাশয়ের কংক্রিট ভেঙে জেসিপি যন্ত্র দিয়ে ঠেলে তোলা হয় স্ত্রী হাতিটিকে। |
|
জলে হাবুডুবু খাচ্ছে মা ও শাবক হাতি। |
গোটা ঘটনাটি দূরে দাঁড়িয়ে দেখে বুনো হাতির পাল। পাড়ে ওঠার পরে স্ত্রী হাতিটি অবশ্য ওই কংক্রিট ভাঙার যন্ত্রটির উপরেই হামলা চালায়। শেষ পর্যন্ত শূন্যে এক রাউন্ড গুলি করা হলে সেটি পালিয়ে গিয়ে বুনো হাতির পালে ভিড়ে যায়। উত্তরবঙ্গের মুখ্য বনপাল রবীন্দ্র কৃষ্ণমূর্তি বলেন, “বনকর্মী এবং সামরিক বাহিনীর জওয়ানদের সকলের চেষ্টার ফলে স্ত্রী হাতি এবং শাবকটিকে রক্ষা করা সম্ভব হয়েছে।” এর আগে ২০০৮ সালে ওই এলাকায় অন্য একটি জলাশয়ে পড়ে যাওয়া শাবককে উদ্ধার করতে পারলেও মৃত্যু হয় একটি স্ত্রী হাতির।
দার্জিলিঙের ডিএফও গঙ্গাবাহাদুর ছেত্রী বলেন, “প্রতি বারই সামরিক বাহিনীকে ওই জলাশয়গুলি ঘিরে দেওয়ার অনুরোধ করে চিঠি দেওয়া হচ্ছে। কোনও লাভ হচ্ছে না। এ বার ফের চিঠি দেব।” এ দিন সামরিক বাহিনী অবশ্য মা ও শাবকটিকে বাঁচাতে যে ভাবে বনকর্মীদের সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেন তাতে খুশি বন দফতরের কর্তারা। |
|
উদ্ধারের পর যন্ত্রটিকেই আক্রমণ করেছে মা হাতিটি। |
বেঙডুবির ওই ঘন জঙ্গলেই সামরিক বাহিনীর গোলাবারুদ মজুত করা রয়েছে। অগ্নিকাণ্ড জনিত দুর্ঘটনা এড়াতেই বেশ কিছু কংক্রিটের জলাশয় তৈরি করা হয়েছে। এ দিন হাতির জলে পড়ার খবর পেয়ে সকাল সাড়ে ৬টার মধ্যে সুকনার এলিফ্যান্ট স্কোয়াডের রেঞ্জ অফিসার কাঞ্চন বন্দ্যোপাধ্যায়, বাগডোগরার রেঞ্জ অফিসার বিজন তালুকদার বনকর্মীদের নিয়ে ছুটে যান। সামরিক বাহিনীর পক্ষ থেকেও ক্রেন, জেসিপি, পাম্প আনা হয়।
শাবকটিকে সহজেই তোলা গেলেও প্রায় ১৪ ফুট গভীর জলে ৮ ফুট উঁচু স্ত্রী হাতিটি এক সময়ে হাবুডুবু খেতে খেতে চোখ উল্টে দেয়। কোনও রকমে লাইফ বেল্ট বেঁধে সেটিকে ভাসিয়ে রাখার পাশাপাশি পাম্পের সাহায্যের জলাশয়ের জল তোলা শুরু হয়। এক সময়ে স্ত্রী হাতিটি নিজেই সামনের দু’পা জলাশয়ের পাড়ে তুলে দেয়। কিন্তু বিশাল শরীরটাকে কিছুতেই পাড়ে টেনে তুলতে পারছিল না। তখনই বনকর্মীরা তাকে জেসিপি দিয়ে পিছন থেকে ঠেলা দিতে শুরু করেন। এক সময় সে উঠেও পড়ে। |
ছবি: বন দফতরের সৌজন্যে |
|