এই ধাক্কা সাময়িক, আশ্বাস দিচ্ছে কেন্দ্র
আশঙ্কা থেকেই ধস শেয়ারে
শুক্রবারের পরে সোমবারেও! হুহু করে পড়েছে গোটা বিশ্বের শেয়ার বাজার। বাদ পড়েনি ভারতও। সোমবারও মুম্বই শেয়ার বাজারে সূচক পড়েছে হুড়মুড়িয়ে। একটা সময় ৫০০ পয়েন্ট পড়ে গিয়েছিল সেনসেক্স। দিনের শেষে ৩১৬ পয়েন্ট খুইয়ে সূচক থামে ১৬৯৯০.১৮-এ। যা গত ১৪ মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন। শেয়ার বাজারে এই ভয়াবহ পতনের মধ্যে ২০০৮-এর ভয়াবহ মন্দার ছায়া দেখতে পাচ্ছেন অনেকেই। বড় ব্যবসায়ী থেকে ছোট দোকানদার বা চাকরিজীবী উদ্বিগ্ন সকলেই। কিন্তু কেন এমন হল?
ভারত কতটা সুরক্ষিত? সামলানো যাবে বড় বিপর্যয়?

শুরুটা কোথায়?
আমেরিকা সরকারকে টাকা ধার দেওয়ায় কোনও ঝুঁকি নেই বিশ্ব জুড়ে এত দিন এটাই ছিল ‘রেটিং’। কিন্তু গত শুক্রবার ‘রেটিং’ সংস্থা স্ট্যান্ডার্ড অ্যান্ড পুওরস (এসঅ্যান্ডপি) বিভিন্ন বিষয় বিচার করে জানিয়েছে, আমেরিকা সরকারকে টাকা ধার দেওয়ায় অল্প হলেও ঝুঁকি আছে। আগের AAA ‘রেটিং’ থেকে নামানো হয়েছে AA+এ। তফাৎ সামান্যই। কিন্তু ওইটুকুতেই মার্কিন কোষাগারের ক্ষমতা সম্পর্কে ধারণা ভেঙে গিয়েছে। আর তাতেই বিপর্যয়ের শুরু।
মুম্বই
এসঅ্যান্ডপি-র রেটিং এর বিষয়টা কী?
এসঅ্যান্ডপি-র হিসেবে, আগামিদিনে পরিকল্পনার বাইরেও আরও কয়েক লক্ষ কোটি ডলার ধার করতে হবে মার্কিন সরকারকে। আর এর ফলে চাপ বাড়বে মার্কিন কোষাগারের উপরে। তাতে মার্কিন সরকারের ধার শোধের ক্ষমতার উপরেও চাপ বাড়বে। অঙ্কের হিসেবে, মার্কিন সরকারকে যারা টাকা ধার দেবে, তাদের ফেরত পাওয়ার ঝুঁকিও বাড়বে।

AAA আর AA+ এর মধ্যে ফারাক কতটা?
অতি সামান্য।

তা হলে এত ভয় কেন?
বিশ্ব অর্থনীতিতে যে মার্কিন কোষাগারকে এত দিন কুবেরের ভাণ্ডার হিসেবে দেখা হয়েছে, তাতে সামান্য ছিদ্রের ইঙ্গিত দিয়েছে এসঅ্যান্ডপি। আর তাতেই এই আতঙ্ক।

রেটিং না হয় কমলো, কিন্তু তাতে এত আতঙ্কের কী আছে?
রেটিং কমায় মার্কিন ঋণপত্রের (bond) ঝুঁকিও তো বেড়েছে। যে সব দেশ, সংস্থা বা ব্যক্তি এত দিন ওই ঋণপত্র কিনেছেন, তাঁদের মনে এখন সংশয় জাগছে, তা হলে কি মার্কিন কোষাগারের হাল এতটাই খারাপ হবে যে, ধার শোধ করতে পারবে না তারা? সেখান থেকেই ২০০৮-এর মহামন্দার ছায়া দেখছেন অনেকে।

কিন্তু ২০০৮ আর এ বারের অবস্থা কি একই রকম?
মোটেই না। ফারাক আকাশ-পাতাল। সে সময় যেটা হয়েছিল, অর্থনীতির ভাষায় তা সাব-প্রাইম ক্রাইসিস। সে সময় একের পর এক মার্কিন ব্যাঙ্ক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান এমন অনেক ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে অর্থ ধার দিয়েছিল, যাদের শোধ করার ক্ষমতাই ছিল না। ফলে ধার দিয়ে ফেরত না পেয়ে ডুবেছিল অর্থনীতি। এ বারে তা হয়নি। যে মার্কিন অর্থনীতি অসীম ক্ষমতাধর, তাদের টাকা দিয়ে ফেরত না পাওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে এসঅ্যান্ডপি-র রেটিং-এর ফলে। আর সেটাই কাঁপিয়ে দিয়েছে বিশ্বের অর্থনীতি।
বেজিং সোল ফ্রাঙ্কফুর্ট
নিউ ইয়র্ক হংকং
কিন্তু শেয়ার বাজারের সঙ্গে সম্পর্কটা কী?
মার্কিন সরকারের ক্ষমতা নিয়ে ত্রাসটা ছড়িয়েছে এ ভাবে মার্কিন সরকারের আর্থিক ক্ষমতা কমার সম্ভাবনার ইঙ্গিত মানে আগামিদিনে মার্কিন বাজার দুর্বল হওয়ার ইঙ্গিত। যার প্রভাবে বিশ্ববাজারে চাহিদা দুর্বল হবে, ফলে কমবে বিক্রি। যার আঘাতে ভাঙবে বিভিন্ন শিল্পের মেরুদণ্ড। ফলে কমবে তাদের লাভ। যার ধাক্কায় কমবে শেয়ারের দাম। আর সেই আশঙ্কাতেই এখন শেয়ার বিক্রির হিড়িক পড়েছে। যা টেনে নামিয়েছে বিশ্বের শেয়ার বাজারকে।

সোনার দাম এতটা বাড়ছে কেন?
এই রকম অস্থির সময়ে সকলেই বেশি ঝুঁকির সঞ্চয় (শেয়ার) থেকে কম ঝুঁকির সঞ্চয়ে টাকা সরিয়ে নেন। ঐতিহাসিক ভাবেই মানুষ এ রকম সময়ে সোনায় টাকা ঢালেন। গত দু’দিনে সেটাই হয়েছে। সোমবার কলকাতার বাজারে দশ গ্রাম পাকা সোনার দাম ছিল ২৫,২৯৫ টাকা।

ভারতের অবস্থা কী?
আশঙ্কার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে স্বস্তিবচনই একমাত্র অস্ত্র সব দেশের। ভারতেরও। আর তাই রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া, কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী প্রণব মুখোপাধ্যায়, যোজনা কমিশনের ডেপুটি চেয়ারম্যান মন্টেক সিংহ অহলুওয়ালিয়া বা অর্থমন্ত্রীর আর্থিক উপদেষ্টা কৌশিক বসু সকলের কণ্ঠেই মাভৈঃ! তাঁদের দাবি, আগেও প্রমাণিত হয়েছে,ভারতের বাজার চলে নিজের শক্তিতে। ১৯৯৭ থেকে এ পর্যন্ত, এমনকী ২০০৮-এর মহামন্দার বাজারেও ভারতের বাজারের তেমন ক্ষতি হয়নি। ফলে এ বারেও ভয়ের খুব কিছু নেই। বৃদ্ধির হার তো বটেই, তা ছাড়া সংস্থাগুলির নিজস্ব যা শক্তি, তাতে নিজের পায়েই দাঁড়িয়ে থাকতে পারবে ভারত। শেয়ার বাজারের এই আঘাত আগের মতোই নেহাতই ক্ষণস্থায়ী।
First Page Next Story



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.