|
|
|
|
বনবস্তিতে ঘুরে আশ্বাস বনমন্ত্রীর |
নিলয় দাস • বীরপাড়া |
বাসিন্দাদের সুখ-দুঃখ, অভাব-অভিযোগ সরেজমিনে খতিয়ে দেখতে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত বিভিন্ন বনবস্তিগুলিতে ঘুরছেন রাজ্যের বনমন্ত্রী হিতেন বর্মন। কোথাও বনবস্তিগুলিতে পানীয় জল নেই, কোথাও রাস্তা নেই। বাসিন্দারা ঝোরার জল খেয়ে জীবনযাপন করছেন। চিকিৎসা পরিষেবা নেই, সেচের অভাবে ফসল হয় না। কোন রকমে ভুট্টা চাষ করলেও তার অর্ধেক চলে যায় হাতির পেটে। বিভিন্ন বনবস্তিগুলিতে গিয়ে এমন সমস্যার কথা শুনে বাসিন্দাদের পাশে থাকার আশ্বাস দিচ্ছেন। বন দফতর যে সমস্যা মেটাতে উদ্যোগী হবে সে কথা জানিয়ে তাঁদের ভরসা দিচ্ছেন। বনবস্তির আদিবাসী, নেপালি, মেচ, রাভা সম্প্রদায়ের বাসিন্দারাও খোদ মন্ত্রীকে কাছে পেয়ে ধামসা, মাদলের তালে নাচগানে তাঁকে বরণ করে নিচ্ছেন। দেশের নাগরিক হয়েও বনবস্তির বাসিন্দাদের এত দুর্দশা দেখে ক্ষোভ প্রকাশ করেন হিতেনবাবু। এখন পর্যন্ত বন দফতর ছাড়া অন্য কোন দফতর থেকে বাসিন্দারা বিশেষ একটি সুযোগ সুবিধা পাননি জেনে ৩৪ বছরের বাম সরকারের উদাসীনতাকে দায়ী করেন তিনি। হিতেনবাবু বলেন, “বনবস্তিতে গুলিতে বিভিন্ন পরিষেবা পৌঁছে দেওয়া দরকার। বিষয়টি বিভাগীয় কর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করব। বনবস্তিগুলিতে বিভিন্ন জনজাতির মানুষরা কুটির শিল্পের যে কাজ করছেন তার উপর গুরুত্ব দেওয়া হবে।” গত শুক্রবার সকালে ফালাকাটায় সমাজভিত্তিক বন সৃজনের বাংলোতে বন কর্তাদের নিয়ে নানা প্রকল্পের ব্যাপারে আলোচনার পর মন্ত্রী যান গারুচিরা পর্যটন আবাসে। খানাখন্দে ভরা রাস্তা পেরিয়ে দলগাঁর গভীর জঙ্গলে ভুটানপাহাড়ের পাদদেশে গারুচিরা। প্রথম কোনও মন্ত্রীকে কাছে পেয়ে আপ্লুত বাসিন্দারা। সেখানে একটি কটেজের উদ্বোধন করেন বনমন্ত্রী। গারুচিরা বনবস্তির ৭০টি পরিবার কী কষ্টে বাস করছে তার বিস্তারিত শোনেন মন্ত্রী। বাসিন্দারা জানান, এখানে চাষ আবাদ একপ্রকার হয় না। পানীয় জলের কষ্ট রয়েছে। স্বাস্থ্যকেন্দ্র ১৬ কিলোমিটার দূরে বীরপাড়াতে। রাস্তা নেই, হাতির উপদ্রব। পাঁচ বছর আগেও বন দফতরের কর্তারা তাঁদের অভাব অভিযোগ গুরুত্ব দিয়ে শোনেননি। বাসিন্দাদের সাহায্য করতে গ্রাম পঞ্চায়েত কাজ করেনি। দেড় বছর আগে বন দফতররে উদ্যোগে এখানে তৈরি হয় পর্যটন আবাস। এক বছর ধরে বহু পর্যটক আসতে শুরু করেছেন গারুচিরায়। তা থেকে গ্রামবাসীদের রোজগারের একটা উপায় হয়েছে। বৃষ্টির জল সংরক্ষণ করতে উদ্যোগী বন দফতর। গ্রামবাসীদের জন্য গৃহপালিত পশুর খামার তৈরি করছে তারা। বন দফতরের এক কর্তার কথায়, অভাবের তাড়নাতেই বাসিন্দারা এক সময় গাছ কাটতে শুরু করেন। বন দফতরকে তারা শত্রু ভাবতে শুরু করলে দুই পক্ষের মধ্যে বিদ্বেষ তৈরি হয়। এখন পরিস্থিতি বদলেছে। বনবস্তির বাসিন্দা বিধান ছেত্রী বলেন, “এই পরিবেশে পর্যটকরা বারবার আসতে চান। ভাল রাস্তা তৈরি, ঘরের সংখ্যা বাড়ানো হলে ভাল হয়। পানীয় জল-অন্যান্য পরিষেবা পেলে ভাল হত।” জলপাইগুড়ির ডিএফও কল্যাণ দাস বলেন, “নানান প্রকল্পের মাধ্যমে বনবস্তির বাসিন্দাদের সাহায্য করা হচ্ছে। ধীরে ধীরে তারা স্বনির্ভর হচ্ছেন।” গারুচিরা ছাড়া মন্ত্রী যান নাগরাকাটার নিউখুনিয়া বনবস্তিতে। গরুমারা জঙ্গলের ভিতর থেকে বনবস্তিটি সরিয়ে আনা হয় এই নতুন জায়গাতে। এখানে বাসিন্দাদের জন্য পাকা ঘর উদ্বোধন করেছেন। জেলার ১৫টি বনবস্তিতে ১৪৩টি এ রকম ঘরের চাবি বাসিন্দাদের হাতে তুলে দেওয়া ও হয়েছে। বানারহাটের তোতাপাড়া জঙ্গলের বনবস্তিতে ধামসা-মাদল বাজিয়ে আদিবাসী রমণীরা নাচে গানে মন্ত্রীকে অভ্যর্থনা জানিয়ে হাতির উপদ্রব ঠেকাতে আর্জি জানিয়েছেন। হাতি ঠেকাতে তাঁদের প্রচলিত চাষের বদলে লেবু, হলুদ, আদা চাষ করার পরামর্শ দেন বনমন্ত্রী। বীরপাড়াতে দলগাঁ রেঞ্জ অফিসে এলিফ্যান্ট স্কোয়াডের অফিসও চালু করেছেন। অন্যান্য বনবস্তিগুলিতে গিয়েও পরিস্থিতি দেখবেন বলে জানিয়েছেন। |
|
|
|
|
|