|
|
|
|
চা-শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধির দাবি |
তরাই-ডুয়ার্সে কাল থেকে বন্ধ পরিষদের |
নিজস্ব সংবাদদাতা • জলপাইগুড়ি |
চা-শ্রমিকদের মজুরি বাড়ানোর দাবিতে কাল, মঙ্গলবার থেকে তরাই-ডুয়ার্সে লাগাতার সাধারণ ধর্মঘটের ডাক দিল আদিবাসী বিকাশ পরিষদ।
রবিবার মালবাজারে দীর্ঘ ক্ষণ ধরে পরিষদের চা-শ্রমিক সংগঠন ‘প্রোগ্রেসিভ টি ওয়ার্কার্স ইউনিয়ন’-এর বৈঠক হয়। সেখানে এই সিদ্ধান্ত হয়েছে।
গত ৫ অগস্ট মজুরি বাড়ানোর দাবি নিয়ে ত্রিপাক্ষিক বৈঠক ভেস্তে যাওয়ার পরেই চা বাগান শ্রমিকদের ৩৬টি সংগঠনের কো-অর্ডিনেশন কমিটি এবং ডিফেন্স কমিটি ১০ ও ১১ অগস্ট চা বাগানগুলিতে ধর্মঘট এবং ১২ অগস্ট সাধারণ ধর্মঘট পালনের ডাক দিয়েছে। পরিষদ এ বার ৯ অগস্ট
থেকে লাগাতার ধমর্ঘটের ‘হুমকি’ দেওয়ায় চা শিল্পে অচলাবস্থা সৃষ্টি হবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। কো-অর্ডিনেশন কমিটি এবং ডিফেন্স কমিটিও এ দিন জানিয়েছে আন্দোলনের রাস্তা থেকে সরছেন না তাঁরাও।
উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেব অবশ্য মনে করেন, পরিষদ ধর্মঘটের ডাক দিলেও জল ‘তত দূর’ গড়াবে না। কেননা, গত ৫ অগস্টের বৈঠক ভেস্তে যাওয়ার পরেই রাজ্য সরকার পরবর্তী বৈঠকের তোড়জোড় শুরু করেছে। মঙ্গলবারই পরবর্তী বৈঠক ডাকার প্রস্তুতিও শুরু হয়েছে। উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী বলেন, “ধর্মঘট হোক, সেটা আমরা কখনওই চাইব না। তার আগেই সমস্যা মিটে যাবে বলে আশা করছি। মালিক ও শ্রমিক সংগঠনগুলির সঙ্গে আলোচনা চলছে। ৯ অগস্ট কলকাতায় পরবর্তী বৈঠকের কথা রয়েছে।” আলোচনায় ভরসা রাখছেন বাগান মালিকরাও। ‘কনসালটেটিভ কমিটি অফ প্ল্যান্টার্স অ্যাসোসিয়েশন’-এর মুখ্য উপদেষ্টা অমিতাংশু চক্রবর্তী বলেন, “আলোচনা চলছে। এর মধ্যে লাগাতার ধর্মঘটের ডাক আলোচনায় ব্যাঘাত ঘটাতে পারে।” তবে আদিবাসী বিকাশ পরিষদের ডুয়ার্স-তরাই আঞ্চলিক শাখার সভাপতি জন বারলা বলেন, “অনেক আশ্বাস পেয়েছি। আগেও মৌখিক আশ্বাসে ২৮ জুলাইয়ের চা বাগান ধর্মঘট থেকে সরে এসেছি। এখন আর পিছু হঠা সম্ভব নয়। মঙ্গলবার থেকে লাগাতার সাধারণ ধর্মঘট হচ্ছেই।”
পরিষদ যে লাগাতার আন্দোলনে নামতে পারে, তার ইঙ্গিত মিলেছিল গত ৫ অগস্টই। শ্রমিক সংগঠনগুলি দৈনিক ন্যূনতম ১৩০ টাকা মজুরি দাবি করলেও মালিক পক্ষ তা মানতে নারাজ। গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার আন্দোলনে পাহাড়ের চা-শ্রমিকদের মজুরি ইতিমধ্যেই দৈনিক ৯০ টাকা হয়ে গিয়েছে। এই পরিস্থিতিতে ত্রিপাক্ষিক বৈঠক ভেস্তে যাওয়ার পরেই পরিষদের পক্ষ থেকে রাতারাতি সমস্ত চা বাগানে ফের অবরোধ শুরু করা হয়। এ দিন বৈঠকের পরে পরিষদের পক্ষ থেকে ঘোষণা করা হয়, দোকান-বাজার থেকে শুরু করে রেল ও সড়ক পরিবহণ সবই ধমর্ঘটের আওতায় থাকবে। ডুয়ার্স ও তরাইয়ের বাইরে যে সমস্ত এলাকায় চা বাগান রয়েছে, সেখানেও ধর্মঘট হবে। কেবল স্কুল-কলেজ ও জরুরি পরিষেবাগুলি ধর্মঘটের আওতার বাইরে থাকবে।
পরিষদের এই সিদ্ধান্ত নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে অন্য সংগঠনগুলি। সিটু-র জলপাইগুড়ি জেলার যুগ্ম সম্পাদক জিয়াউল আলম বলেন, “শ্রমিকদের আন্দোলন চলছে মালিকদের অন্যায়ের বিরুদ্ধে। রাজ্য সরকারও জানিয়ে দিয়েছে যে, মালিকদের মনোভাবে তারা খুশি নয়। এই পরিস্থিতিতে লাগাতার ধর্মঘট বিশৃঙ্খলারই সৃষ্টি করবে। হাত শক্ত হবে মালিক পক্ষের।”
ডুয়ার্সের এনইউপিডব্লিউ নেতা মণি ডারনাল বলেন, “কলকাতায় পরিষদের নেতাদের সঙ্গে আমাদের আলোচনা হয়েছিল যে ঐক্যবদ্ধ ভাবে আন্দোলন করা হবে। এখন পরিষদ আলাদা ভাবে লাগাতার ধর্মঘটের ডাক দিল। চা শ্রমিকদের ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন দরকার।” কো-অর্ডিনেশন কমিটির যুগ্ম সম্পাদক চিত্ত দে আবার বলেন, “২ লক্ষ চা-শ্রমিকের স্বার্থে লাগাতার ধর্মঘটে যদি সাফল্য মেলে আপত্তির কিছু নেই। আমরা অবশ্যই সমর্থন করব।” আলিপুরদুয়ারের সাংসদ তথা আরএসপি’র চা শ্রমিক ইউনিয়নের নেতা মনোহর তিরকি-র বক্তব্য, “আমরা আমাদের মতো আন্দোলন করব। পরিষদ তাদের মতো করে আন্দোলন করবে। সকলের মিলিত চেষ্টায় যদি সাফল্য মেলে, ভালই তো।” |
|
|
|
|
|