নিজের ভবিষ্যৎ গড়ো নিজের হাতে
আমার দুটি সন্তান। মেয়েটি বড়। ছেলেটি ছোট। সমস্যা ছেলেকে নিয়ে। ও যখন নবম শ্রেণিতে পড়ে তখন মানসিক রোগে আক্রান্ত হয়। মনোরোগ বিশেষজ্ঞরা বলেন adolescence crisis। তখন সবার সঙ্গে মারামারি করত, জিনিসপত্র ভাঙত। কাউকে সহ্য করতে পারত না। পড়া বন্ধ হয়ে যায়। চিকিৎসা করে শান্ত হয়। কিন্তু অবসাদ কাটে না। বতর্মানে ওর কোনও ওষুধ চলছে না। কুষ্ঠিতে ছিল পড়াশোনায় বাধা। যেটা ও জানতে পারে। জ্যোতিষী ওর দিদির বিয়ে নিয়ে যা বলেছিলেন তা মিলে যাওয়ায় বর্তমানে ভীষণভাবে জ্যোতিষ-নির্ভর হয়ে পড়েছে। জ্যোতিষীরা বলেছেন আটাশ বছর বয়সে ভাল সময় আসবে। তখন ওর নাকি খুব প্রতিপত্তি হবে। সেই কল্পনা নিয়েই বসে আছে। কিছুই করে না, বাড়িতে সব সময় মুখ শুকনো করে বসে থাকে। কোথাও বেরোতে চায় না। কোনও কিছুতে আগ্রহ নেই। স্থির হয়ে পাঁচ মিনিটও কোথাও বসে থাকতে পারে না। ওপেন স্কুল থেকে কোনও রকমে দ্বাদশ শ্রেণি পাশ করে। তার পর বেসরকারি কলেজ থেকে অটোমোবাইল ইঞ্জিনিয়ারিং-এ ডিপ্লোমা পাশ করেছে। কী ভাবে ওকে সুস্থ স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনব?

ছবি: ওঙ্কারনাথ ভট্টাচার্য

অভিভাবককে বলছি
আপনার চিঠি পড়ে বোঝা যাচ্ছে যে, এই মুহূর্তে আপনার ছেলে জ্যোতিষীর কথার ওপরই সমস্ত বিশ্বাসটা ছেড়ে দিয়েছে। অনেক সময় কোনও পরিবারের সদস্যরা যদি অতিরিক্ত জ্যোতিষ-শাস্ত্রে বিশ্বাস করেন, তবে সেই পরিবারে বেড়ে ওঠা ছেলেমেয়েদের মধ্যেও ছোটবেলা থেকে এই শাস্ত্রের ওপর বিশ্বাস তৈরি হতে শুরু করে। আপনার ছেলের ক্ষেত্রেও তাই-ই হয়েছে। এবং এখন সেটা এতটাই বেড়ে গিয়েছে যে, ও ভাবতে শুরু করেছে, ও কোনও কিছুর জন্য চেষ্টা না করলেও ২৮ বছর বয়স থেকেই ওর উন্নতি শুরু হবে।
দ্বিতীয়ত আপনি লিখেছেন, ও যখন নবম শ্রেণিতে পড়ত তখন ওর বয়ঃসন্ধিকালীন সমস্যা দেখা দেয়। আমার মনে হয় সেটা শুধুমাত্র ওই ধরনের সমস্যা ছিল না। এই ধরনের সমস্যায় এতটা রাগের বহিঃপ্রকাশ দেখা যায় না। ওর যে সমস্যাই তখন থাকুক না কেন, এখনও কিন্তু কিছু সমস্যা থেকেই গিয়েছে।
তৃতীয়ত, ও যখন অটোমোবাইল ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে ডিপ্লোমা পাশ করে গেছে তখন ধরে নিচ্ছি ওর এখন ২১ বা ২২ বছর বয়স। জ্যোতিষীর কথার ওপর বিশ্বাস রাখলে, ধরে নিতে হবে ও আরও ছয় বা সাত বছর নিশ্চেষ্ট ভাবে বসে থাকবে ওর ২৮ বছরের উন্নতির অপেক্ষায়। ধরলাম ওই বয়সে সত্যিই ও কোথাও কাজের ডাক পেল। সেখানে কিন্তু অবশ্যই নিয়োগকর্তারা জানতে চাইবেন, আগের বছরগুলো ও কী করেছে। এতগুলো বছর শুধু শুধু বসে কাটিয়ে দিয়েছে বললে কিন্তু জ্যোতিষীর কথা অনুযায়ী সুসময় এলেও তা টিকবে না এই কথাটা ওকে ভাল ভাবে বোঝাতে হবে। যদি দেখেন যে আপনাদের বোঝানোয় কোনও কাজই হচ্ছে না (যেটার সম্ভাবনাই বেশি), তা হলে ওকে অবশ্যই কোনও মনোরোগ বিশেষজ্ঞের কাছে নিয়ে যেতে হবে। ওর কাউন্সেলিং করানোও প্রয়োজন হতে পারে। ও যখন দেখবে ওর চেয়ে বয়সে ছোটরা ওকে পেছনে ফেলে এগিয়ে গেছে বা যাচ্ছে, তখন কিন্তু ও আবার হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়বে। যারা এই ধরনের সমস্যায় ভোগে তারা অনেক সময়েই যেমন বাবা মায়ের কথায় কর্ণপাত করে না, তেমনই আবার চিকিৎসকের কাছে যেতেও রাজি থাকে না। সেই সব ক্ষেত্রে বাবা-মা’কেই চিকিৎসকের সাহায্য নিতে হবে সন্তানকে সুস্থ করে তুলতে।
শেষে বলি, আপনাদেরও জ্যোতিষীর ওপর নির্ভরশীলতা কমাতে হবে। আপনার ছেলে ছোট বেলা থেকেই দেখেছে, পরিবারের সকলেরই এর ওপর বিশ্বাস রয়েছে। সুতরাং, সেও সেটাই আঁকড়ে ধরেছে। আপনাদের মেয়ের বিয়ের ক্ষেত্রেও আপনারা নিজেরা বিশ্বাস করেছেন যে জ্যোতিষী যা বলেছিলেন, সে কথাই মিলে গিয়েছে। ওটা আপনাদের বিশ্বাস। ছেলেও স্বাভাবিক ভাবেই এই বিশ্বাসে চলছে। ভাবছে ওর ক্ষেত্রেও ঠিক তাই-ই হবে। আপনাদের নিজেদের মন থেকে এই জ্যোতিষ-নির্ভরতা না গেলে কোনও ভাবেই ছেলেকে বোঝাতে পারবেন না। আগে নিজেরা অযৌক্তিক বিশ্বাস বন্ধ করুন, তবেই ছেলেকে বোঝাতে পারবেন। সমাধানের আর অন্য পথ নেই।
তোমাকে বলছি
একটা কথা তোমাকে বুঝতে হবে, মানুষ নিজের ভাগ্য নিজে হাতে তৈরি করে। তার জন্য প্রয়োজন শিক্ষা, অধ্যবসায় এবং পরিশ্রম করার মানসিকতা। সেটা না থাকলে কিন্তু পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ জ্যোতিষীরও ক্ষমতা নেই কাউকে কিছু করে দেবার। যদি তুমি ভাবো যে জ্যোতিষী যা বলেছেন তাই-ই হবে, তা হলে তো তুমি যতটুকু পড়াশোনা করেছ, সেটাও না করলে পারতে! ২৮ বছর বয়সেই সব হয়ে যেত! কিন্তু তুমি তা করোনি; পড়াশোনা করেছ। তা হলে এখন কেন সময় নষ্ট করছ? তোমার বয়সের ছেলেরা বন্ধু-বান্ধবদের সঙ্গে ঘুরবে-বেড়াবে, আড্ডা দেবে, আবার কাজের সময় কাজটাও করবে। এই বয়সে সংসারে যতটুকু দায়িত্ব পালন করার সেটা করবে এটাই স্বাভাবিক। এই জীবনটাতেই ফিরে আসার চেষ্টা করো। শুধুমাত্র জ্যোতিষীর কথা বিশ্বাস করে বসে থেকে জীবনের অমূল্য সময় নষ্ট কোরো না। পরে যখন সবাইকে এগিয়ে যেতে দেখবে, তখন কিন্তু প্রবল অনুশোচনা হবে সময়গুলো এ ভাবে নষ্ট করার জন্য। জীবনের খাতায় এই বছরগুলোর হিসেব তখন আর মেলাতে পারবে না। তাই, এখন থেকেই চেষ্টা করো জীবনের স্বাভাবিক ছন্দে ফিরতে। তাতে তুমিও ভাল থাকবে, মা-বাবারও দুশ্চিন্তা কাটবে।

অনুলিখন: শুভ্রা চক্রবতী
ছেলেমেয়েকে নিয়ে মা-বাবার সমস্যা? নাকি মা-বাবাকে নিয়ে ছেলেমেয়ের সমস্যা? পড়ার খরচ
নিয়ে অভিভাবকের দুশ্চিন্তা? দূরের শহরে পড়তে যাওয়ার নামে মেয়ের গায়ে জ্বর আসা? যে
মুশকিলই হোক না কেন, পরিবারের সবাই মিলেই সমাধানে পৌঁছতে হবে। এ বার থেকে
‘প্রস্তুতি’-ও কথা বলবে গোটা পরিবারের সঙ্গেই। অভিভাবকদের বা সন্তানের যে কোনও দুশ্চিন্তার
কথা আমাদের জানান (এবং জানাও) নিজেদের সমস্যা। সুচিন্তিত উত্তর দেবেন বিশেষজ্ঞরা।

ইমেল: prastuti@abp.in বিষয়: Haate Haat।

অথবা, চিঠি পাঠান (এবং পাঠাও) এই ঠিকানায়:
হাতে হাত, প্রস্তুতি,
Previous Item Next Item


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.