|
|
|
|
পূতিগন্ধময় নরক জল্পেশ মন্দির চত্বর |
নিজস্ব সংবাদদাতা • ময়নাগুড়ি |
দূষণের বিষে বিপর্যস্ত উত্তর-পূর্বাঞ্চলের বৃহত্তম জল্পেশ মন্দির চত্বর। প্লাস্টিকে মুখ ঢেকেছে পবিত্র স্বর্ণকুণ্ড পুকুরের পাড়। অমৃতকুণ্ড নামে অন্য একটি পুকুর হাটের নোংরা জল ও কাটা মুরগির রক্তে বিষাক্ত হয়ে উঠেছে। মন্দিরের সামনে থিকথিকে কাদায় ভরা হাট। নেই নিকাশি ব্যবস্থা। ঝোপজঙ্গলে ভরা আশপাশ। শৈব তীর্থের ওই পরিণতি দেখে বিভিন্ন মহলে অভিযোগ উঠেছে মন্দিরের পরিবেশ ও ঐতিহ্য রক্ষা নিয়ে কর্তৃপক্ষের উদাসীনতার।
প্রতিদিন কয়েকশো ভক্ত জল্পেশ মন্দিরে যান। শ্রাবণী উৎসবে কয়েক লক্ষ মানুষ পুজো দিতে ভিড় করছেন। শুধুমাত্র উত্তরবঙ্গ নয়। বিহার, অসম, নেপাল, ভুটান ও বাংলাদেশ থেকেও প্রচুর ভক্ত আসছেন। তাঁদের অনেকে তিস্তা নদীতে না নেমে মন্দির সংলগ্ন স্বর্ণকুণ্ডে স্নান করে পুজো দেন। রাতভর মন্দির চত্বরে থাকেন। কিন্তু যে মন্দিরের আকর্ষণে ছুটে আসছেন সেখানে নিষিদ্ধ প্লাস্টিকের ছড়াছড়ি। নোংরা আবর্জনার স্তুপ। মন্দির লাগোয়া একটি পুকুরের পাড় প্লাস্টিক, থার্মোকল, গুটখার প্যাকেট, ক্যারিব্যাগের মতো জঞ্জালে ভরে গিয়েছে। অন্যটি হাটের আবর্জনা ও নোংরা জলে গেজিয়ে উঠেছে। সেখানেই চলছে পুজোর বাসনপত্র ধোয়ার কাজ। আবর্জনা জমেছে পিছন দিকে মন্দিরের গা ঘেষে। এ ভাবেই দুষণের কবলে পড়ে জল্পেশ ঐতিহ্য খোয়াতে বসেছে।
জল্পেশ এলাকার বাসিন্দা তথা তৃণমূল কংগ্রেসের জলপাইগুড়ি জেলা কমিটির সহসভাপতি শশাঙ্ক বসুনীয়া বলেন, “মন্দিরের পরিবেশ ঠিক রাখার জন্য কর্তৃপক্ষকে কয়েকবার অনুরোধ করেছি। ওঁদের বলেছি জঞ্জালের ছড়াছড়ি দেখে বাইরের পর্যটক ও ভক্তরা কী ভাবছেন! কিন্তু ওঁরা শুনছেন না। এখানে মানুষ শান্তির খোঁজে আসেন। কিন্তু অরাজকতা দেখে ঘৃণা ভরা মন নিয়ে ফিরে যেতে বাধ্য হবেন।” শশাঙ্কবাবু প্রশ্ন তুলেছেন, হেরিটেজ মন্দির চত্বরে প্লাস্টিকের ব্যবহার কেন নিষিদ্ধ হবে না! মন্দিরের পুকুরে ভক্তরা স্নান করেন। কেন দূষণের সমস্যা এড়াতে ওই পুকুর এলাকা বিশেষভাবে সংরক্ষিত করে পরিষ্কার রাখার ব্যবস্থা নেওয়া হবে না! মন্দির কমিটির সম্পাদক গিরীন্দ্রনাথ দেব সমস্যার কথা অস্বীকার করেননি। তিনি বলেন, “দূষণ বেড়েছে এটা ঠিক। তবে ওই সমস্যা নিয়ন্ত্রণে ব্যবস্থাও নেওয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে পুকুরে কাপড় ধোয়া নিষিদ্ধ ঘোষণা করে মাইকে প্রচার করা হয়েছে।” কিন্তু মন্দির কর্তৃপক্ষের ওই বক্তব্যে স্থানীয় বাসিন্দারা আশ্বস্ত হতে পারছেন কোথায়! তাঁরা উল্টে প্রশ্ন তুলেছেন প্রচার করেই কমিটির দায়িত্ব শেষ হয়ে যায়! মন্দিরের সামনে হাট বসে। হাটের মালিক মন্দির কমিটি নিজেই। ওই হাট থেকে দূষণ ছড়াচ্ছে জেনেও কর্তৃপক্ষ কেন ব্যবস্থা নিচ্ছেন না! কেন হাটটি অন্যত্র নিয়ে সেখানে পার্কিং জোন তৈরি করা হচ্ছে না! অমৃতকুণ্ডের পাশে ঝুপড়ি গজিয়েছে। সেখানে মন্দিরের কয়েকজন কর্মী বসবাস করেন। প্রশ্ন উঠেছে কেন মন্দিরের পিছনে কোয়ার্টার তৈরি করে ওই কর্মীদের পুনর্বাসনের পুকুর পাড়ে সৌন্দর্যায়ণের কাজ করা হবে না! স্থানীয় বিধায়ক অনন্তদেব অধিকারী বলেন, “মন্দিরের গেটের সামনে হাট চলতে পারে না। পর্যটন শিল্পের কথা ভেবে কর্তৃপক্ষকে ব্যবস্থা নিতেই হবে।” মন্দির কমিটির সদস্য মানবেশ নন্দ স্থানীয় বাসিন্দা ও বিধায়কের বক্তব্যের সঙ্গে একমত। তিনি বলেন, “মন্দিরের সামনের এলাকা ও পুকুর পাড় খালি না করা পর্যন্ত দূষণ নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে না। ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য কমিটির আগামী সভায় ওই সমস্যার কথা তুলে ধরব।” |
শব্দ-দৌরাত্ম্যে অভিযান শুরু
নিজস্ব সংবাদদাতা • ময়নাগুড়ি |
জল্পেশে রাতভর মাইক বাজানো বন্ধ করতে অভিযানে নামল ময়নাগুড়ি পুলিশ ও প্রশাসনের কর্তারা। রবিবার সন্ধ্যা থেকে রাত পর্যন্ত জল্পেশে ওই অভিযানে গ্রাম পঞ্চায়েত সদস্য ও ক্লাবের কর্তারাও যোগ দেন। জল্পেশে শ্রাবণী উৎসব শুরু হতেই রাতভর শব্দ বিধি ভেঙ্গে মাইক বাজানোর অভিযোগ ওঠে। জয়েন্ট বিডিও রাজীব চৌধুরী পুলিশ কর্তাদের নিয়ে ক্যাম্প করেন। স্থানীয় বিধায়ক অনন্তদেব অধিকারী, মাধবডাঙ্গা-১ গ্রাম পঞ্চায়েত সদস্য সুপ্রিয় দাস ও একটি ক্লাবের সদস্যরা যোগ দেন। প্রত্যেকেই বহিরাগত ভক্তদের মাইক না বাজানোর জন্য অনুরোধ করেন। রাজীববাবু বলেন, “জদরদস্তি নয়, সমস্যার কথা বলেছি। সহযোগিতা করেছেন তাঁরা।” বিধায়ক বলেন, “ধারাবাহিক অভিযান চালাতে হবে।” |
|
|
|
|
|